মুক্তিযুদ্ধ প্রশ্নে নিরপেক্ষতার সুযোগ নেই -আলোচনা সভায় বক্তারা

‘যুদ্ধাপরাধের বিচার ও গণমাধ্যমের দায়বদ্ধতা’
শীর্ষক এই আলোচনা অনুষ্ঠান। ছবি: হাসান রাজা
মুক্তিযুদ্ধ ও যুদ্ধাপরাধের বিচারের প্রশ্নে নিরপেক্ষতা দেখানোর সুযোগ নেই। যারা এই নিরপেক্ষতার নামে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা করবে তাদের প্রতিহত করতে হবে।
আজ শুক্রবার বিকেলে জাতীয় প্রেস ক্লাবে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বিভিন্ন পেশার মানুষের এ কথা বলেন। ‘যুদ্ধাপরাধের বিচার ও গণমাধ্যমের দায়বদ্ধতা’ শীর্ষক এই আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে গণমাধ্যম গবেষণা ও উন্নয়ন কেন্দ্র নামক একটি প্রতিষ্ঠান।
অনুষ্ঠানে বক্তারা যুদ্ধাপরাধের বিচারের ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা স্বীকার করেন। তাঁরা এই বিষয় নিয়ে আরও কাজ করতে বিশেষ করে বিচার নিয়ে অপপ্রচারকারীদের মুখোশ খুলে দিতে ও যাদের কাছে অপপ্রচার করা হচ্ছে তাদের কাছে সঠিক তথ্য তুলে ধরতে আরও ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান।
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর গণমাধ্যম বিষয়ক উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, সরকার এই বিচার অব্যাহত রাখবে এবং সাজা কার্যকর করবে। বিচার না করতে নানা বাধা আসছে। জাতিসংঘের মহাসচিব, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফোন করেছিলেন সাজা কার্যকর না করতে। কিন্তু কোনো বাধাই এই বিচার বন্ধ করতে পারবে না। তিনি বলেন, একাত্তরে যুদ্ধাপরাধীরা পশুর মতো আচরণ করেছে। এই পশুদের বিচার হচ্ছে। তিনি বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশকে নিয়ে, বিচার নিয়ে যে অপপ্রচার চলছে তার বিরুদ্ধে গণমাধ্যমকে পর্যবেক্ষ​কের ভূমিকা পালন করতে হবে।
ইকবাল সোবহান বলেন, পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক রাখা না রাখা পুনর্বিবেচনা করা উচিত। ১৯৫ পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধীর বিচার বাংলাদেশে শুরু হওয়া উচিত।
নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) আবদুর রশিদ বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে পাকিস্তানের অবস্থানের পর বিশ্ববাসীর কাছে ওই সময় পাকিস্তানের গণহত্যার চিত্র তুলে ধরা দরকার। ১৯৫ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু হলে, এদের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের রেড অ্যালার্ট জারি করা হলে বিশ্ববাসী অনেক কিছু জানতে পারবে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রাষ্ট্র পক্ষের আইনজীবী তুরিন আফরোজ বলেন, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে নিরপেক্ষতা দেখানোর কোনো সুযোগ নেই। এটা যারা করছে তারা সুকৌশলে যুদ্ধাপরাধী​ ও মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে অবস্থান নিচ্ছেন। এদের প্রতিহত করা দরকার। তিনি বলেন, গণমাধ্যমকে বিশেষ করে সম্প্রচার মাধ্যমকে কেবল প্রতিষ্ঠানের টিআরপি বাড়ানোর জন্য নিরপেক্ষতা দেখাতে ওদের মতের কাউকে নিয়ে আসাটা গ্রহণযোগ্য নয়। তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের সাজা কার্যকরের পর তাদের দাফন, জানাজা নিয়ে বড় পরিসরে সংবাদ করা হচ্ছে। এতে ভবিষ্যৎ​ প্রজন্মের কাছে ভুল বার্তা যেতে পারে।
আলোচনায় সভায় সভাপতিত্ব করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মিজানুর রহমান। এতে বক্তব্য দেন সাংবাদিক আবেদ খান, আইনজীবী শ ম রেজাউল করিম, ওয়ার ক্রাইমস ফ্যাক্টস ফাউন্ডিংয়ের এম এ হাসান, সাংবাদিক কুদ্দুস আফ্রাদ, ইশতিয়াক রেজা, অভিনেতা পীযুষ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ বক্তব্য দেন।

No comments

Powered by Blogger.