জাতিসংঘের সুরক্ষা বাহিনী মানবে না ইসরায়েল- আরও তিন ফিলিস্তিনিকে হত্যা

অধিকৃত পূর্ব জেরুজালেমে পবিত্র আল-আকসা মসজিদের আশপাশে সহিংসতা দমনে ফিলিস্তিনিদের আন্তর্জাতিক সুরক্ষা বাহিনী মোতায়েনের আবেদন গত শুক্রবার নাকচ করে দিয়েছে ইসরায়েল। এদিকে পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমে গতকাল শনিবার ইসরায়েলি সৈন্য ও এক ইহুদি বসতি স্থাপনকারীর হাতে আরও তিন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। খবর আল-জাজিরা ও ডনের।
জেরুজালেম এবং ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে চলমান সহিংসতায় এ পর্যন্ত ৪২ ফিলিস্তিনি ও সাত ইসরায়েলি প্রাণ হারিয়েছে। এ অবস্থায় ফিলিস্তিনিদের তৃতীয় ইন্তিফাদা বা গণ-অভ্যুত্থান শুরুর আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ক্রমবর্ধমান এই সহিংসতার বিষয়ে আলোচনার জন্য জর্ডানের অনুরোধে গত শুক্রবার জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে রাজনীতি-বিষয়ক জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব তায়ে ব্রুক জারিহু ইসরায়েল-ফিলিস্তিনি ইস্যুর সংক্ষিপ্তসার তুলে ধরেন। এতে অংশ নিয়ে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের প্রতিনিধিরা উত্তেজনা বৃদ্ধির জন্য একে অপরকে দায়ী করেন।
বৈঠকে ইসরায়েলের উপরাষ্ট্রদূত ডেভিড রয়েট বলেন, ‘আমাকে পরিষ্কার বলতে দিন, টেম্পল মাউন্টে কোনো আন্তর্জাতিক বাহিনীর অবস্থান ইসরায়েল মেনে নেবে না। এ ধরনের উপস্থিতি বিরাজমান অবস্থাকে বদলে দিতে পারে।’
অন্যদিকে ফিলিস্তিনি দূত রিয়াদ মনসুর অরক্ষিত ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি দমনপীড়ন বন্ধের জন্য পরিষদের কাছে জরুরি ভিত্তিতে হস্তক্ষেপ ও ‘আন্তর্জাতিক সুরক্ষা’র আবেদন জানান। ফিলিস্তিনিদের ওপর নৃশংসতার জন্য ইসরায়েলের কঠোর শাস্তি হওয়া উচিত বলে তিনি মন্তব্য করেন।
বৈঠকে নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যদের কাছে কোনো খসড়া প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়নি। তবে ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত ফ্রাসোয়া দিলাত্রে পরিস্থিতি শান্ত করতে খসড়া বিবৃতি উত্থাপন করবেন বলে জানিয়েছেন। উত্তেজনা প্রশমনে চাপ প্রয়োগে আগামী বৃহস্পতিবার নিরাপত্তা পরিষদ মন্ত্রী পর্যায়ের আলোচনা আহ্বান করেছে।
তিন ফিলিস্তিনি নিহত: গতকাল পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমে ইসরায়েলি সেনা ও ইহুদি বসতি স্থাপনকারীর হাতে আরও তিন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। সেনা ও পুলিশের ভাষ্য, তিনটি ঘটনাতেই ইহুদিদের ছুরিকাঘাতের চেষ্টা করেন হামলাকারীরা। পশ্চিম তীরের হেবরন শহরে এক ইহুদিকে ছুরিকাঘাতের চেষ্টা করেন ফিলিস্তিনি এক যুবক। এ সময় ইহুদি ব্যক্তিটি গুলি করলে ওই যুবক প্রাণ হারান। ১৮ বছর বয়সী ওই যুবকের নাম ফাদেল আল কাওয়াতসমি বলে নিশ্চিত করেছে ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ। হেবরনে পৃথক ঘটনায় এক ফিলিস্তিনি কিশোরী (১৬) ইসরায়েলের এক নারী সৈন্যকে ছুরিকাঘাতের চেষ্টা করে। পরে ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে ওই ফিলিস্তিনি কিশোরীর মৃত্যু হয়। আর পূর্ব জেরুজালেমে ইসরায়েলের একটি তল্লাশি চৌকিতে এক সৈন্যকে ছুরিকাঘাতের চেষ্টা করেন আরেক ফিলিস্তিনি। এ সময় ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে ওই ফিলিস্তিনিও নিহত হন।
ওবামার উদ্বেগ: যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা গত শুক্রবার বলেছেন, জেরুজালেমকে কেন্দ্র করে ছড়িয়ে পড়া সহিংসতায় মার্কিন প্রশাসন গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। সফররত দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট পার্ক গিউন-হাইয়ের সঙ্গে এক সংবাদ সম্মেলনে এ উদ্বেগ জানান তিনি। এ সময় নিরীহ নাগরিকদের বিরুদ্ধে সহিংসতার নিন্দা জানিয়ে ওবামা বলেন, সড়কে সহিংসতা ও ছুরিকাঘাতের মতো ঘটনা থেকে নাগরিকদের রক্ষায় মৌলিক আইন ও আদেশ প্রয়োগের অধিকার ইসরায়েলের আছে।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে গত শুক্রবার ফোন করেন। তাঁরা সহিংসতা নিরসনের উপায় নিয়ে আলোচনা করেন। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওই অঞ্চলে পুনরায় শান্তি ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টায় নেতানিয়াহুকে মার্কিন সহায়তারও প্রস্তাব দেন।

No comments

Powered by Blogger.