যুক্তরাষ্ট্র এখনো উদ্বিগ্ন : বার্নিকাট

দায়িত্ববোধ থেকেই নিজ দেশের নাগরিকদের বাংলাদেশে চলাচলে সতর্ক করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত বার্নিকাট। যুক্তরাষ্ট্র এখনও উদ্বিগ্ন বলে উল্লেখ করেন তিনি।
রাজধানীর মহাখালীতে ব্র্যাক সেন্টারে নারীর ক্ষমতায়ন ও পুষ্টি নিরাপত্তা বিষয়ক এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন যুক্তরাষ্ট্রের এই রাষ্ট্রদূত। বাংলাদেশ অ্যালায়েন্স ফর উইমেন লিডারশিপ আয়োজিত ওই অনুষ্ঠান শেষে বের হওয়ার পর সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন তিনি।
তিনি বলেন, দুই বিদেশি নাগরিক হত্যার সাথে আইএস জড়িত কি-না এ বিষয়ে চুড়্ন্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় এখনও আসেনি। এর সাথে সংশ্লিষ্ট সব বিষয় গুরুত্বের সাথে পর্যবেক্ষণ করছে যুক্তরাষ্ট্রসহ বন্ধু রাষ্ট্রগুলো।
বার্নিকাট বলেন, বাংলাদেশে অবস্থানরত যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনী যে সহযোগিতা করছে তা সন্তোষজনক।
দুজন বিদেশি নাগরিককে হত্যার দায় স্বীকার করে আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আইএস যে টুইটার বার্তা দিয়েছে তা বাংলাদেশ থেকে পাঠানো হয়েছিল। বাংলাদেশ পুলিশ সেই তথ্য বের করেছে। খুনিদের ধরার ব্যাপারেও অগ্রগতি আছে। এ ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের বক্তব্য কী জানতে চাইলে বার্নিকাট বলেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিউইয়র্কে দেয়া সাম্প্রতিক বক্তৃতায় বলেছেন, সন্ত্রাসীদের কোনো দেশের ও ধর্মের সীমানা নেই। তাই তাদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বাড়ানোর আহবান জানিয়েছিলেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের সরকার এ ধরনের আহবানে সাড়া দিতে প্রস্তুত।
মূল বক্তৃতায় বার্নিকাট বলেন, যুক্তরাষ্ট্র সরকার তাদের বৈদেশিক বিষয়ক উন্নয়ন সংস্থা ইউএসএআইডি’র মাধ্যমে ৩০ লাখ পরিবারে পুষ্টি ও খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়ক সহযোগিতা পৌঁছে দিচ্ছে। বাংলাদেশ অ্যালায়েন্স ফর উইমেন লিডারশিপ এর মাধ্যমে ৫০ জন নারীকে পুষ্টি বিষয়ক প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। যারা গ্রামের দরিদ্র নারীদের পুষ্টি বিষয়ক প্রশিক্ষণ এবং সহযোগিতা দেবে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ অ্যালায়েন্স ফর উইমেন লিডারশিপ এর নির্বাহী পরিচালক রাষ্ট্রদূত নাসিম ফেরদৌস। ইউএনউইমেন-এর দেশীয় প্রতিনিধি ক্রিস্টিনা হান্টার এবং দেশের তিনটি এলাকা থেকে আসা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নারী পুষ্টিবিদরা এতে বক্তব্য দেন।
মার্কিন সতর্কবার্তায় নতুন কোনো তথ্য নেই : পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী
যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের সতর্কবার্তায় নতুন কোনো তথ্য নেই উল্লেখ করে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, পুরোনো তথ্যগুলোকে নতুনভাবে উপস্থাপন করে তারা নিজ দেশের নাগরিকদের সতর্ক করেছে। তিনি বলেন, দুই বিদেশি হত্যার সাথে জড়িতদের গ্রেফতারে সরকার সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। একইসাথে বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশিদের নিরাপত্তা বিধানে সব ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
অন্যদিকে পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের দেয়া নতুন সতর্কবাতার ভাষা আগেরটার চেয়ে কঠোর নয়। বিষয়টি মার্কিন দূতাবাসের পক্ষ থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে পরিষ্কার করা হয়েছে।
জলবায়ু বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সাম্প্রতিক জেনেভা সফরের ওপর আজ রোববার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে একথা বলা হয়। সরকারের অনুরোধ সত্বেও বিদেশি রাষ্ট্রগুলোর দেয়া সতর্কবার্তায় কেন বারবার আইএস সংযোগের কথা বলা হচ্ছে প্রশ্ন করা হলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এটার উত্তর বিদেশি দূতাবাসগুলোই দিতে পারবে। একটি দেশতো দুই বিদেশি হত্যার সাথে আইএস জড়িত রয়েছে কি-না তা খতিয়ে দেখবে বলে জানিয়েছিল। এখন তাদেরকেই জিজ্ঞাস করুন আইএস সংযোগ পাওয়া গেছে কি-না।
তিনি বলেন, পরিস্থিতি সম্পূর্ণ সরকারের নিয়ন্ত্রণে। সবকিছু স্বাভাবিক রয়েছে।
বাংলাদেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে বিদেশি কূটনীতিকদের দেয়া ব্রিফিংয়ের পরও পশ্চিমা দেশগুলোর দেয়া নতুন সতর্কবার্তাগুলো আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অবনতির লক্ষণ কি-না জানতে চাওয়া হলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, মোটেই সেরকম কিছু নয়। বিদেশি রাষ্ট্রগুলোর সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক সার্বিকভাবে ভালই আছে। তা না হলে এলডিসিসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশ নেতৃত্ব দিতে পারত না।
বাংলাদেশ নিয়ে কোনো রাষ্ট্র ‘রেড অ্যালার্ট’ জারি করেনি উল্লেখ করে শাহরিয়ার আলম বলেন, বিভিন্ন দেশের সতর্কবার্তা জারির পরও বাংলাদেশে বিদেশীদের আসা-যাওয়া কমেনি। গত বছরের সেপ্টেম্বর-অক্টোবরের সাথে চলতি বছরের একই সময়ের তুলনা করলে অস্বাভাবিক কিছু চোখে পড়ে না। তিনি বলেন, অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্র দফতরের দেয়া সতর্কতায় বাংলাদেশকে নিচের দিক থেকে দ্বিতীয় স্তরে রাখা হয়েছে। বিশ্বের বহু দেশ এই স্তরে রয়েছে। আর অস্ট্রেলিয়ার সতকর্তার মোট স্তর চারটি।
সৌদিতে নিহত বাংলাদেশির সংখ্যা ১৩৭ : এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, মিনা দুর্ঘটনায় ৯৬ জন বাংলাদেশির লাশ নিশ্চিতভাবে শনাক্ত করা গেছে। আরো ৪১টি লাশ বাংলাদেশি নাগরিকের বলে ধারণা করা হচ্ছে। অর্থাৎ মোট মৃতের সংখ্যা ১৩৭। এছাড়া আরো ৫৩ জন বাংলাদেশি নিখোঁজ রয়েছেন।

No comments

Powered by Blogger.