বঙ্গভঙ্গ ও নওয়াব সলিমুল্লাহ by মো: আনোয়ার হোসেন

বঙ্গভঙ্গ প্রকল্পটি ছিল মূলত ব্রিটিশ সরকারের একটি প্রশাসনিক পরিকল্পনা। কারণ, ১৮৬৮ সাল থেকেই বঙ্গ, বিহার, উড়িষ্যার বিপুল ভূখণ্ড নিয়ে গঠিত বঙ্গদেশটি ভাগ করে শাসনের জল্পনা কল্পনা চলে আসছিল। কিন্তু পরবর্তী সময়ে কংগ্রেসী নেতৃবৃন্দের আচরণ ও দাবি-দাওয়ার চাপে সেটা রাজনীতির দিকে মোড় নেয়। ১৯০৩ সালের ডিসেম্বরে ভারত সরকার এক পত্রে ঢাকা ও ময়মনসিংহ জেলা এবং চট্টগ্রাম বিভাগকে আসামের সাথে যুক্ত করে একটি প্রদেশ গঠনের পরিকল্পনা করে। এই প্রেক্ষাপটে নওয়াব সলিমুল্লাহ পূর্ববাংলার বঞ্চিত জনগণের বিশেষ করে পশ্চাৎপদ মুসলমানদের ভাগ্যোন্নয়নের একটি সুযোগ দেখতে পেলেন। কলকাতাকেন্দ্রিক হিন্দু প্রভাবিত প্রশাসনিক ব্যবস্থায় মুসলমানেরা অধিকার থেকে বঞ্চিত ছিল। জমিদার, মহাজন, শিল্পপতি প্রভৃতির কারণে পূর্ববাংলার কৃষি উৎপাদিত ধনসম্পদের মাধ্যমে কলকাতা এবং এর পাশের অঞ্চলগুলোই বেশি উপকৃত হতো। সলিমুল্লাহ ভাবলেন, ঢাকায় রাজধানী করে নতুন প্রদেশ গঠিত হলে পূর্বাঞ্চলের ধনসম্পদ এখানকার কল্যাণেই বেশি ব্যয় হবে। আরো স্কুল, কলেজ, অফিস-আদালত হলে মুসলমানেরা শিক্ষা-দীক্ষা ও চাকরি-বাকরির সুযোগ পাবে। সংখ্যাগরিষ্ঠতার কারণে এখানকার শাসনক্ষমতাও তাদের হাতে বেশি থাকবে। বিষয়টি বিবেচনার জন্য নওয়াব সলিমুল্লাহ ১৯০৪ সালের ১১ জানুয়ারি স্থানীয় হিন্দু-মুসলিম নেতৃবৃন্দকে নিয়ে ঢাকার আহসান মঞ্জিলে এক সভা করেন। সভায় প্রথমে সর্বসম্মতভাবে সরকারের বঙ্গভঙ্গ প্রকল্পটির বিরোধিতা করা হয়। নওয়াব সলিমুল্লাহ একটি বিকল্প প্রস্তাব পেশ করেন যে, সমগ্র আসাম, ঢাকা বিভাগ, চট্টগ্রাম বিভাগ, রাজশাহী বিভাগ ও প্রেসিডেন্সি বিভাগের যশোর ও খুলনা জেলাকে নিয়ে সীমানা নির্ধারণ করতে হবে এবং প্রশাসনিক ব্যবস্থার জন্য ঢাকাকে রাজধানী করে আইন পরিষদবিশিষ্ট ও লে. গভর্নর শাসিত একটি পূর্ণাঙ্গ নতুন প্রদেশ গঠন করা যেতে পারে। উপস্থিত নেতৃবৃন্দ প্রস্তাবটি ভেবে দেখার জন্য ১০ দিনের সময় নেন। ওই মাসেরই ১৭ তারিখে এরা (বেশির ভাগই হিন্দু নেতা) আনন্দ চন্দ্র রায়ের বাড়িতে এক সভায় মিলিত হয়ে নওয়াবের বিকল্প প্রস্তাবের প্রতি অসম্মতি জ্ঞাপন করেন। কিন্তু সলিমুল্লাহ মুসলমানদের উন্নতির কথা ভেবে তার পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হওয়ার সংকল্প করেন। বঙ্গ বিভাগের পক্ষে জনমত গঠন ও সরকারের উদ্দেশ্য ব্যক্ত করার লক্ষ্যে বড়লাট লর্ড কার্জন ১৯০৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে পূর্ববঙ্গ সফরে আসেন। ঢাকায় অবস্থানকালে নওয়াব সলিমুল্লাহর সাথে বঙ্গবিভাগের স্কিম নিয়ে বড়লাটের গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়। এর ফলে লর্ড কার্জনের পরিকল্পিত নতুন প্রদেশ গঠনের প্রক্রিয়ায় আমূল পরিবর্তন ঘটে এবং এর সীমারেখা বেড়ে শেষ পর্যন্ত তা পূর্ববাংলার স্বার্থানুকূল হয়ে ওঠে। ১৮ ফেব্রুয়ারি আহসান মঞ্জিল প্রাঙ্গণে লর্ড কার্জনের সংবর্ধনা সভায় জেলা বোর্ড ও মিউনিসিপ্যালিটির পক্ষ থেকে একটি, প্রাদেশিক মুসলমান সমিতির পক্ষ থেকে একটি, জনসাধারণ সভার পক্ষ থেকে একটি এবং জমিদার শ্রেণীর পক্ষ থেকে একটি অভিনন্দনপত্র দেয়া হয়। প্রথম দু’টিতে বঙ্গবিভাগের প্রতি সমর্থন জানিয়ে মূল পরিকল্পনার সাথে বঙ্গের আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ অংশের অন্তর্ভুক্তি, লে. গভর্নর নিয়োগ, ব্যবস্থাপক পরিষদ গঠন, রেভিনিউ বোর্ড স্থাপনসহ পূর্ববাংলার অধিবাসীদের যাবতীয় অধিকার প্রতিষ্ঠা করার প্রস্তাব রাখা হয়। এ ছাড়া ঢাকাকে নতুন প্রদেশের রাজধানী করা এবং শিলংকে নতুন প্রদেশের গভর্নরের গ্রীষ্মকালীন আবাস করার প্রস্তাবও রাখা হয়। প্রধানত হিন্দু নেতাদের অন্য দু’টি মানপত্রে বঙ্গ বিভাগের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়। নওয়াব সলিমুল্লাহ বিশ্বাস করতেন নবগঠিত প্রদেশে অগ্রসরমান হিন্দুদের প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি না হয়েই অনগ্রসর মুসলমান সম্প্রদায় শিক্ষা-দীক্ষা, শিল্প-সাহিত্য, বাণিজ্য, চাকরি-বাকরির ক্ষেত্রে উন্নতি করার সুযোগ পাবে। এরূপ নিশ্চিত ধারণা নিয়েই তিনি এর প্রতি দৃঢ় সমর্থন দেন এবং সহযোগীদের সাথে নিয়ে জনগণকে এ মর্মে আশ্বস্ত করার প্রচেষ্টা চালান। অন্য দিকে বঙ্গ বিভাগ বিরোধীদের শিরোমণি ছিলেন সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জি এবং তার সহযোগী কলকাতার বুদ্ধিজীবীরা। বঙ্গ বিভাগের ফলে কলকাতায় বসবাসকারী উকিল, লেখক, সাহিত্যিকদের নবগঠিত প্রদেশে তাদের বাজার হারানোর ভয় ছিল। চট্টগ্রাম বন্দরের প্রস্তাবিত উন্নয়ন ও কর্মতৎপরতা কলকাতাভিত্তিক ব্যবসায়ীদের আতঙ্কিত করে তোলে। অন্য দিকে নওয়াব সলিমুল্লাহ নতুন প্রদেশের সূচনালগ্নেই মুসলিম জাতির মধ্যে সংহতি গড়ে তোলার কথা ভাবতে শুরু করেন। এখান থেকেই তার দৃষ্টিভঙ্গি সক্রিয় রাজনীতির দিকে মোড় নেয়। নতুন প্রদেশ কার্যকর হওয়ার প্রাক্কালে সলিমুল্লাহর উদ্যোগে মুসলিম নেতৃবৃন্দের পক্ষ থেকে একটি ঘোষণাপত্র প্রকাশ করা হয়। তাতে বলা হয়, নবগঠিত প্রদেশের মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধ করে একটি অ্যাসোসিয়েশন গঠন করা কর্তব্য হয়ে পড়েছে। ওই প্রতিষ্ঠানটি সামাজিক ও রাজনৈতিক ইত্যাদি ব্যাপারে ন্যায্য অধিকার নিয়ে সরকারের কাছে মতামত প্রকাশের ব্যাপারে সব মুসলমানের মুখপাত্র হিসেবে কাজ করবে। নতুন প্রদেশের জন্মদিন (১৬ অক্টোবর ১৯০৫) মুন্সীগঞ্জে এর সমর্থনে অনুষ্ঠিত এক বিরাট জনসভায় ভাষণ দিতে গিয়ে নওয়াব সলিমুল্লাহ বলেন, বঙ্গভঙ্গ এতদঞ্চলের মুসলমানদের নির্জীবতা থেকে উত্থান করেছে এবং কর্মঠ ও সংগ্রামী করতে নির্দেশনা দিয়েছে। বঙ্গভঙ্গ কার্যকর হওয়ার দিনেই ঢাকার নর্থব্রুক হলে নওয়াব বাহাদুরের সভাপতিত্বে মুসলমানদের এক গুরুত্বপূর্ণ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
হিন্দুদের বিরোধিতা সত্ত্বেও লর্ড কার্জন ১৯০৫ সালের ২০ জুলাই বঙ্গভঙ্গ করেন। ১৯০৫ সালের ১৬ অক্টোবর থেকে সেটা কার্যকর করা হয়। ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী বিভাগ, মালদাহ জেলা, পার্বত্য ত্রিপুরা ও আসাম নিয়ে পূর্ববঙ্গ প্রদেশ গঠিত হয়। নতুন প্রদেশের আয়তন দাঁড়ায় ১ লাখ ৬ হাজার ৫৪০ বর্গমাইল। লোকসংখ্যা হয় ৩ কোটি ১০ লাখ, যার মধ্যে মুসলমান ১ কোটি ৮০ লাখ এবং হিন্দু ১ কোটি ২০ লাখ। ঢাকাকে রাজধানী করে ব্যবস্থাপক সভাসংবলিত একজন লে. গভর্নরকে এর শাসক নিযুক্ত করা হয় এবং চট্টগ্রাম বন্দরকে প্রদেশের প্রধান বন্দরনগর করা হয়। পূর্ববাংলার মুসলমানেরা ছাড়াও কলকাতার মোহামেডান লিটারারি সোসাইটিও বঙ্গভঙ্গ সমর্থন করে, যা ছিল খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। এটা ছিল পূর্ববাংলার মুসলমানদের প্রতি তাদের স্বজাত্যবোধরেই পরিচায়ক। কলকাতায় মোসলেম ক্রনিকল পত্রিকাও বঙ্গভঙ্গকে সমর্থন করে। বিহার ও উড়িষ্যার মুসলিম নেতৃবৃন্দও বঙ্গভঙ্গকে স্বাগত জানান। তফসিলি সম্প্রদায়ভুক্ত হিন্দু, যাদের বর্ণ হিন্দুদের বিরুদ্ধে তীব্র সামাজিক ও আর্থিক ক্ষোভ ছিল তারাও বঙ্গভঙ্গকে সমর্থন করেন। এ ছাড়া সব হিন্দু বঙ্গভঙ্গবিরোধী ছিলেন। ১৯০৫ সালে ৭ আগস্ট বঙ্গভঙ্গ ঘোষিত হওয়ার সাথে সাথেই তারা ক্রোধে ফেটে পড়েন। এ নেতৃবৃন্দের মধ্যে ছিলেন সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জি, ফরিদপুরের অম্বিকাচরণ মজুমদার, আনন্দ চন্দ্র রায়, ময়মনসিংহের নাথবন্ধু গুহ, বর্ধমানের রাসবিহারী ঘোষ, নরেন্দ্রনাথ সেন, অশ্বিনীকুমার দত্ত, বিপিনচন্দ্র পাল। ১৯০৫ সালে ৭ আগস্ট বিরোধী হিন্দু নেতারা কলকাতার টাউন হলে এক প্রতিবাদ সভার আয়োজন করে প্রস্তাব গ্রহণ করেন, বঙ্গবিভাগ প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে এবং ব্রিটিশপণ্য বর্জন অব্যাহত থাকবে। ঢাকায় জগন্নাথ কলেজেও অনুরূপ সভা হয়।
নওয়াব সলিমুল্লাহ বঙ্গভঙ্গের সুফল ঘরে ঘরে পৌঁছে দেয়ার জন্য বিভিন্ন স্থানে সভা সমিতির আয়োজন করেন। বর্ণহিন্দুদের বিরোধিতা সত্ত্বেও নওয়াবের উদ্যোগে ১৯০৬ সালের ১৬ অক্টোবর ঢাকা, ময়মনসিংহ, ফরিদপুর, সিলেট, প্রভৃতি স্থানে বঙ্গভঙ্গের প্রথম বর্ষপূর্তি জাঁকালোভাবে পালন করা হয়। কংগ্রেসি হিন্দুরা ওই দিন ‘শোক দিবস’ পালন করেন। হিন্দু জমিদারগণ বঙ্গবিভাগে রদ আন্দোলনের প্রতি সমর্থন আদায়ের অজুহাতে মুসলমানদের উৎপীড়ন করতে থাকেন। হিন্দু ভলান্টিয়ারেরা বিদেশী পণ্য বর্জনের জন্য অনেক স্থানে বল প্রয়োগ শুরু করেন। তবে মুসলমান ও নিম্ন শ্রেণীর হিন্দুরা বঙ্গভঙ্গ বিরোধীদের আন্দোলনে সাড়া দেননি।
পূর্ববাংলার জনসাধারণের মধ্যে শিক্ষা চেতনা সৃষ্টির জন্য স্যার সৈয়দ আহমদ প্রতিষ্ঠিত মোহামেডান এডুকেশনাল কনফারেন্সের একটি শাখা প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়া হয়। এ জন্য ১৯০৬ সালের ১৪ ও ১৫ এপ্রিল ঢাকার শাহবাগে বাগানবাড়িতে নওয়াব সলিমুল্লাহর উদ্যোগে ও সভাপতিত্বে এক সভায় পূর্ববঙ্গ ও আসাম প্রাদেশিক শিক্ষা সমিতি প্রতিষ্ঠিত হয়। নওয়াব সলিমুল্লাহ এর প্রেসিডেন্ট এবং নওয়াব আলী চৌধুরী এর সেক্রেটারি হন। ওই সভায় ৫ হাজার প্রতিনিধি যোগ দেন। নতুন প্রদেশে প্রতিটি জেলা থেকেই প্রতিনিধি আসেন। পশ্চিমবঙ্গ থেকেও অনেকেই আসেন। ওই সভায় ২০টি প্রস্তাবের মধ্যে মাদ্রাসা শিক্ষা সংস্কার এবং ঢাকা কলেজের মুসলমান ছাত্রদের জন্য একটি ছাত্রাবাস নির্মাণের সিদ্ধান্তও ছিল। ঢাকার প্রাদেশিক রাজধানী প্রতিষ্ঠিত হলে পূর্ববঙ্গের শিক্ষা-দীক্ষা ও উন্নয়নের জোয়ার আসে। কিন্তু হিন্দু ও কংগ্রেসি নেতৃবৃন্দের বিরোধিতার কারণে সেটা ভণ্ডুল হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়। এমতাবস্থায় সর্বভারতীয় মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধ করার লক্ষ্যে নওয়াব সলিমুল্লাহ একটি সর্বভারতীয় মুসলিম রাজনৈতিক দল গঠনের চিন্তাভাবনা শুরু করেন। বঙ্গভঙ্গ বিরোধীরা সন্ত্রাসী কার্যকলাপ ছাড়াও নওয়াব সলিমুল্লাহর বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা ও ষড়যন্ত্র শুরু করেন। বিরোধীদের কেউ কেউ মৌলভী ও মোল্লার বেশ ধরে নওয়াবের নাম ভাঙিয়ে সাধারণ মুসলমানদের উত্তেজিত করা শুরু করেন। দিল্লির দরবারে বঙ্গভঙ্গ রদ ঘোষিত হওয়ার পরপরই নওয়াব সলিমুল্লাহ মুসলমান নেতাদের সাথে আলোচনা করেন এবং মুসলমানদের স্বার্থ সংরক্ষণ দাবিসংবলিত একটি পত্র ১৯১১ সালের ২০ ডিসেম্বর গভর্নর জেনারেল লর্ড হার্ডিঞ্জের কাছে পেশ করেন।
দাবি : ০১. মাদ্রাসা শিক্ষা সংস্কারের উদ্দেশ্যে পূর্ববঙ্গ ও আসাম প্রাদেশিক সরকারের গঠিত কমিটির সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন। ০২. মুসলমানদের উচ্চশিক্ষার খাতে বিশেষ অনুদানের ব্যবস্থা। ০৩. ঢাকা ও চট্টগ্রামে এমন দু’জন কমিশনার নিয়োগ, যাদের অনুরূপ অভিজ্ঞতা রয়েছে। পূর্ববাংলা ও আসামের মুসলমানদের শিক্ষাসংক্রান্ত বিষয় তত্ত্বাবধানের জন্য একজন যুগ্ম পরিচালক বা সহপরিচালক নিয়োগ। ০৪. এক্সিকিউটিভ কাউন্সিলে এমন একজন অফিসার রাখা, যিনি পূর্ববাংলা ও আসামের প্রশাসনিক কার্যাবলি পরিচালনার ব্যাপারে অভিজ্ঞ। ০৫. বঙ্গ প্রেসিডেন্সির গভর্নর কলকাতা ও ঢাকা এই উভয় শহরে সমভাবে অবস্থান। ০৬. বঙ্গ প্রেসিডেন্সির মুসলমানদের নিয়োগ এবং পালাক্রমে একজন হিন্দুর পর একজন মুসলমান সদস্য বঙ্গ প্রেসিডেন্সির এক্সিকিউটিভ কাউন্সিলে নিয়োগ। ০৭. পূর্ববঙ্গের জন্য স্বতন্ত্রভাবে বার্ষিক বাজেট প্রণয়ন। অথবা পূর্ববঙ্গের রাজস্ব এখানকার জেলাগুলোর শাসনব্যবস্থা ও উন্নয়ন খাতে ব্যয় করতে হবে। ০৮. সরকারি চাকরিতে আরো অধিক হারে মুসলমানদের নিয়োগ।
ওই দাবিগুলোর সূত্র ধরে লর্ড হার্ডিঞ্জ ১৯১২ সালের ২৯ জানুয়ারি ঢাকা সফরে এসে তিন দিন অবস্থান করেন। ওই সময় নওয়াব সলিমুল্লাহর নেতৃত্বে এতদঞ্চলের ১৯ জন মুসলমান প্রতিনিধি ৩১ জানুয়ারি বড়লাটের কাছে দাবিদাওয়া পেশ করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে বড়লাট ঢাকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা এবং মুসলমানদের জন্য একজন বিশেষ শিক্ষা অফিসার নিয়োগের কথা ঘোষণা করেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কথা জানতে পেরে কংগ্রেসি নেতৃবৃন্দ ও হিন্দু বুদ্ধিজীবীরা সেটা বাতিল করার জন্য উঠে পড়ে লাগেন। কিন্তু নওয়াব সলিমুল্লাহ ও সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরীর অক্লান্ত প্রচেষ্টায় সেটা বাস্তবায়িত হয়। ১৯১২ সালের ২ মার্চ কলকাতায় ডালহৌসি ইনস্টিটিউট যুক্ত বঙ্গের মুসলিম নেতাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়। নওয়াব সলিমুল্লাহ সভাপতির ভাষণে বলেন, রাজনৈতিক বিষয়ে নির্লিপ্ত থেকে মুসলমানদের স্বার্থ নিয়ে বিরুদ্ধবাদীদের ইচ্ছামতো ক্রীড়া করতে দেয়ার সময় আর নেই। শাসকেরা যাতে দেশ শাসনের ব্যাপারে মুসলমানদের কথায় কর্ণপাত করেন, সে জন্য আমরা আজ কৃতসংকল্প। তিনি পূর্ববঙ্গ ও পশ্চিমবঙ্গ দু’টি স্বতন্ত্র প্রাদেশিক লীগকে একত্র করে বঙ্গ প্রেসিডেন্সি লীগ গঠন এবং এর দফতর ঢাকায় রাখার প্রস্তাব করেন।

No comments

Powered by Blogger.