শাহজালাল বিমানবন্দরে হামলা চালিয়ে পণ্য ছিনতাই by কমল জোহা খান

আবারও শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে শুল্ক কর্মকর্তাদের মারধর করে কোটি টাকার পণ্য ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় হামলায় একজন শুল্ক কর্মকর্তা আহত হয়েছেন। দেশের প্রধান বিমানবন্দরে গত চার মাসে এটি এ ধরনের দ্বিতীয় ঘটনা।
বিমানবন্দরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, এই দুটি ঘটনায় মামলা হলেও প্রায়ই ছোটখাটো এমন অনেক ঘটনা ঘটে। রাজনৈতিক দলের পরিচয় ব্যবহার করে একটি চিহ্নিত গোষ্ঠী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে ভীতি সঞ্চার করে অবৈধ পণ্য সরিয়ে নিতে এটা করছে বলে তাঁরা মনে করেন।
বিমানবন্দর ও থানা সূত্র জানায়, সর্বশেষ ১০ আগস্ট বেলা আড়াইটার দিকে বিমানবন্দরের কাস্টমের কার্গো কমপ্লেক্সের কুরিয়ার ইউনিটে এই হামলার ঘটনা ঘটে। হামলাকারীরা তিনটি ট্রলিতে করে ১৫ কার্টন পণ্য ছিনিয়ে নেয়। হামলার নেতৃত্ব দেন এসএমআই কুরিয়ার সার্ভিসের মালিক বদরুল আলম ওরফে শ্যামল। শ্যামল নিজেকে যুবলীগ নেতা হিসেবে পরিচয় দেন। ওই হামলায় তাঁর ভাই ফখরুল আলম ওরফে প্রিন্সও অংশ নেন।
বিমানবন্দরের ভিডিও ফুটেজ দেখে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, শুল্ক বিভাগের সহকারী কমিশনার রিয়াদুল ইসলাম, পাঁচজন সহকারী রাজস্ব কমর্কতা মোজাম্মেল হক, শাহজাহান আলী, মোস্তফা জামাল, মাহবুবুর রহমান ও আব্দুল সেলিম ভূঁইয়ার ওপর হামলা চালানো হয়। শ্যামলের ভাই ফখরুল প্রথমে হামলা শুরু করেন। সর্বশেষ শ্যামল হামলা চালান সহকারী কমিশনার রিয়াদুল ইসলামের ওপর। কুরিয়ার গেটের অন্য পাশে শুল্ক কর্মকর্তা মোজাম্মেলের ওপর হামলা করেন ফখরুল। হামলা শেষে মালামাল ছিনিয়ে নিয়ে সব বাধা অতিক্রম করে তাঁরা বেরিয়ে যান।
বিমানবন্দরের শুল্ক বিভাগের সূত্র জানায়, ওই দিন বিকেলেই বিমানবন্দর থানা-পুলিশ শ্যামলের উত্তরার কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে শুল্ক কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে ছিনতাই করা মালামাল জব্দ করে।
এ ঘটনায় গতকাল মঙ্গলবার বিমানবন্দর থানায় রাষ্ট্রীয় কাজে বাধা ও জীবননাশের হুমকির অভিযোগ এনে মামলা করেন সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা শাহজাহান আলী। মামলায় আলামত হিসেবে থানায় মামলার ভিডিও ফুটেজ জমা দেওয়া হয়।
শুল্ক বিভাগ ও পুলিশ সূত্রে জানায়, এসএমআই এক্সপ্রেস নামে একটি কুরিয়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠান আছে শ্যামলের। এর সূত্র ধরে কুরিয়ার ও কার্গোর মতো সংরক্ষিত এলাকায় অবাধে যাতায়াত করেন তিনি ও তাঁর লোকেরা। শ্যামল আগে ছাত্রদল করতেন। এখন নিজেকে যুবলীগের কেন্দ্রীয় নেতা বলে পরিচয় দেন। প্রধানমন্ত্রী ও যুবলীগের চেয়ারম্যানের ছবি ব্যবহার করে তিনি পোস্টার ছাপিয়ে বিমানবন্দর এলাকায় সাঁটিয়ে রেখেছেন।
তবে যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদ প্রথম আলোকে বলেন, বদরুল আলম শ্যামল নামে কেন্দ্রীয় কমিটিতে কোনো নেতা নেই। ঢাকার অন্য কমিটিতেও এই নামে কেউ আছে বলে তাঁর জানা নেই।
বদরুল আলম ওরফে শ্যামল প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনার সময় তিনি সেখানে ছিলেন। কিন্তু তিনি হামলায় অংশ নেননি। কে বা কারা এই হামলা চালিয়েছে, তা তিনি জানেন না। আর ছিনিয়ে নেওয়া পণ্যগুলোও তাঁর না।
রাজনৈতিক পরিচয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে শ্যামল বলেন, ‘আমি কখনো বিএনপির রাজনীতি করিনি। ছাত্রলীগ করতাম। এখন যুবলীগ করি। কুরিয়ার সার্ভিস ছাড়া আমার গাড়ির ব্যবসাও রয়েছে।’
গতকাল দায়ের করা মামলায় শ্যামল ও তাঁর ভাই ফখরুলসহ আটজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ৩০-৩৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। আটজনের বাকিরা হলেন শহীদুল ইসলাম, আসাদ, হাদিস উল্লাহ, ইয়াসিন, সুমন ও মোহাম্মদ আলম।
ঢাকা কাস্টম হাউসের কমিশনার লুৎফর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘বদরুল আলম শ্যামলের কথা আমি শুনেছি। কিন্তু তাকে দেখিনি। এর আগে একবার তার লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছিল। এবারও বাতিলের সুপারিশ করা হয়েছে।’
এর আগে গত ১৮ মে একইভাবে বিমানবন্দরের কুরিয়ার সার্ভিস এলাকা থেকে এক কোটি টাকার ইলেকট্রনিক পণ্য ও সাড়ে সাত কোটি টাকার ওষুধের চালান আটক করায় শ্যামলের সহযোগী আসাদ ও লেলিন দলবল নিয়ে সহকারী কমিশনার শহীদুজ্জামান সরকারের ওপর হামলা চালান এবং প্রাণনাশের হুমকি দেন। এ ঘটনায় বিমানবন্দর থানায় মামলা হয়। শ্যামলকেও আসামি করা হয়। তখন পুলিশ আসাদ ও লেলিনকে গ্রেপ্তার করেছিল। কিন্তু পরে তাঁরা জামিনে মুক্তি পান। ওই সময় সহকারী কমিশনার শহীদুজ্জামানের বাসায় কাফনের কাপড়ও পাঠানো হয়। তবে তিন মাস চলে গেলেও ওই মামলায় এখনো অভিযোগপত্র দেওয়া হয়নি।
এ ব্যাপারে বিমানবন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কামাল উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, আগের মামলার তদন্ত চলছে। খুব শিগগির চার্জশিট দেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, শ্যামলসহ বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালানো হবে।

No comments

Powered by Blogger.