প্রতারণা ও জালিয়াতির মামলা আবার পুলিশের কাছে

প্রতারণা ও জালিয়াতির বেসরকারি মামলাগুলো দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) আইনের ধারা থেকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এখন এ-সংক্রান্ত মামলাগুলো যাবে পুলিশের কাছে। তবে সরকারি সম্পত্তি এবং সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জালিয়াতি ও প্রতারণাসংক্রান্ত মামলাগুলো দুদক আইনে তদন্ত ও বিচার হবে।
মন্ত্রিসভা দুর্নীতি দমন আইনের প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনার এই প্রস্তাবটি গতকাল সোমবার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে বাংলাদেশ সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে এই অনুমোদন দেওয়া হয়। বৈঠকের শুরুতে ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদতবার্ষিকী উপলক্ষে শোক প্রস্তাব গৃহীত হয়।
বৈঠক শেষে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইয়া জানান, দুদক আইনে প্রতারণা ও জালিয়াতির মামলাগুলো অন্তর্ভুক্ত করায় দুই ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হয়। হাজার হাজার প্রতারণা মামলা দুদক আইনে দায়ের হওয়ায় সেগুলোর নিষ্পত্তিতে জটিলতা সৃষ্টি হয়। তা ছাড়া, দুদক আইনে জালিয়াতি ও প্রতারণা মামলা অন্তর্ভুক্ত থাকায় পুলিশ এ ধরনের মামলা নিতে অনীহা প্রকাশ করে। এতে এ ধরনের মামলার স্তূপ জমে যায়, বিচার নিষ্পত্তিতে বেশ বিলম্ব ঘটে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, দুদক আইনে দায়ের হওয়া মামলাগুলোর বিচার বিশেষ জজ আদালতে হওয়ায় এগুলো নিষ্পত্তিতে বেশ সময় লাগছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে আইন ও বিচার বিভাগ বিষয়টি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে অবহিত করে। এরপর আইনটি সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়।
উল্লেখ্য, ২০১০ সালে মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত দুদক সংশোধন আইনে প্রতারণা ও জালিয়াতির মামলা অন্তর্ভুক্ত ছিল না। কিন্তু সংসদীয় কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে ২০১৩ সালে ওই সংশোধনী পাস হওয়ার সময় এ ধরনের মামলা দুদক আইনে যুক্ত করা হয়।
এক প্রশ্নের জবাবে সচিব জানান, প্রতারণা ও জালিয়াতির বিদ্যমান মামলাগুলোর বিচার যে অবস্থায় ছিল সেই অবস্থাতেই বিশেষ আদালত থেকে বিচারিক আদালতে হস্তান্তর করা হবে এবং ওই অবস্থা থেকেই বিচার শুরু হবে। আবার একইভাবে মামলার তদন্ত যে পর্যায়ে ছিল সেই পর্যায়েই পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হবে। তবে দুদক আইনে প্রাথমিক তথ্য অনুসন্ধানের পর্যায়ে যেসব মামলা ছিল, সেগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিষ্পত্তি হবে। অভিযোগকারী নতুন করে পুলিশের কাছে অভিযোগ করতে পারবে।
দুদক আইনের সংশোধনের এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে দুদক। দুদক কমিশনার (তদন্ত) মো. সাহাবুদ্দিন গতকাল বিকেলে দুদক কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘সীমিত জনবল নিয়ে ব্যক্তি পর্যায়ের প্রতারণা ও জালিয়াতির অপরাধ দুদকের পক্ষে অনুসন্ধান ও তদন্ত করা সম্ভব হচ্ছিল না। ফলে সাধারণ জনগণকে পর্যাপ্ত ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। এ কারণে আমরা ব্যক্তি পর্যায়ে প্রতারণা-জালিয়াতিসংক্রান্ত অপরাধ অনুসন্ধান ও তদন্তের ভার পুলিশকে ফিরিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব দিই।’ তিনি মনে করেন, এর মাধ্যমে দুদকও নিজ সক্ষমতা অনুসারে কাজ করতে পারবে।
জাতীয় পুষ্টিনীতির খসড়া অনুমোদন: মন্ত্রিসভা গতকাল জাতীয় পুষ্টি নীতির খসড়া অনুমোদন করেছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, সব নাগরিকের পুষ্টি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বর্তমান সরকারের নেওয়া ভিশন-২০২১-এর আলোকে এই নীতি প্রণীত হয়েছে। নীতিতে মা, কিশোরী এবং শিশুর পুষ্টি নিশ্চিত করার বিষয়ে অধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
জনগণের জীবনমান উন্নয়নের মাধ্যমে অপুষ্টি নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ ও জাতীয় উন্নয়নে এটি কার্যকর করা হবে। নীতি অনুযায়ী ন্যাশনাল নিউট্রিশন কাউন্সিলের পরিবর্তে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে ‘ন্যাশনাল নিউট্রিশন কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিল’ গঠিত হবে। কাউন্সিল নীতি বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেবে।
এ ছাড়া মন্ত্রিসভা গতকাল বাংলাদেশ ও কানাডার মধ্যে স্বাক্ষরিত এয়ার সার্ভিস চুক্তির খসড়া অনুমোদন করেছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, এর ফলে দুই দেশের মধ্যে যাত্রী ও পরিবহন বিমান চলাচলে সুবিধা হবে। এই চুক্তির ফলে প্রতি সপ্তাহে দুই দেশের মধ্যে তিনটি যাত্রীবাহী বিমান ও তিনটি পরিবহন বিমান চলাচল করবে।

No comments

Powered by Blogger.