রাস্তায় ভ্রাম্যমাণ আদালত, বাস উধাও! by কমল জোহা খান

ঢাকার আগারগাঁওয়ের তালতলা এলাকায় সোমবার
ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ফিটনেসবিহীন গাড়ি
পরীক্ষার জন্য দাঁড় করানো হচ্ছে। ছবি: সাজিদ হোসেন
জনা ত্রিশেক সদস্য নিয়ে সোমবার দুপুরে ঢাকার আগারগাঁও তালতলা এলাকায় ফিটনেসবিহীন যানবাহন আটকে অভিযান চালায় ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ভ্রাম্যমাণ আদালত। দুপুর সাড়ে ১২টায় অভিযান শুরু হতে না হতেই ব্যস্ত এই রাজপথ থেকে উধাও হয়ে যায় যাত্রীবাহী বাস।
দুই নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ মশিউর রহমান ও মো. আবদুল কুদ্দুসের নেতৃত্বে দেড় ঘণ্টার এই অভিযানে আটক করা হয় ১৫টি বাস, বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয় ১০ জন বাসচালককে। কিন্তু বাস মালিকেরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকলেও তাঁরা রয়ে যান ধরাছোঁয়ার বাইরে। অভিযানে আটক বাসগুলো থেকে দুর্ভোগে পড়েন শতাধিক যাত্রী।
অভিযান চলার সময় রাজপথে বাস কমে যাওয়াকে সাফল্য মনে করছেন ডিএমপির নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মশিউর রহমান।
তবে এভাবে চললে ঢাকায় বাস চলাচল বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই বলে জানান বাস মালিকেরা। আর প্রাইভেট কার, মোটরসাইকেল, পিকআপ ভ্যান অভিযানের আওতার বাইরে থাকার সমালোচনা করেছেন সাধারণ যাত্রীরা।
সাড়ে ১১টায় অভিযান শুরুর কথা জানায় ডিএমপির গণমাধ্যম শাখা। কিন্তু অভিযান শুরু হয় নির্ধারিত সময়ের এক ঘণ্টা পর। ম্যাজিস্ট্রেট মশিউর রহমানের নেতৃত্বে আগারগাঁও আবহাওয়া অধিদপ্তরের সামনের সড়কে ব্যারিকেড বসিয়ে বাস থামানো শুরু হয়। রাস্তার অন্যপ্রান্তে ম্যাজিস্ট্রেট আবদুল কুদ্দুসের নেতৃত্বে ডিএমপির পুলিশ সদস্যরা একের পর এক বাস থামাতে থাকেন।
কিন্তু একদিকে যেমন বাস আটক করা হয়, নামিয়ে দেওয়া হয় যাত্রীদের। ভাড়া ফেরত নিয়ে চালকের সহযোগীদের সঙ্গে চলে যাত্রীদের বাগ্‌বিতণ্ডা। আবদুল শুকুর নামে এক যাত্রী বলেন, ‘গুলিস্তান যাব। এভাবে মাঝপথে আমাদের নামিয়ে কী লাভ! এখান থেকে তো অন্য বাসও পাওয়া যাবে না। শুধু বাস ধরে কেন? প্রাইভেট কারের কি ফিটনেস আছে! ’
অন্যদিকে অভিযানের খবর পেয়ে আগারগাঁও মোড় ও তালতলা মোড় থেকে ঘুরে যেতে থাকে একের পর যাত্রীবাহী বাস। তাই অভিযান শুরুর মাত্র দশ মিনিটের মধ্যে কমে যায় বাসের সংখ্যা।
আটক বাস থেকে নামিয়ে আনা হয় চালকদের। বাসের ফিটনেসের কাগজ থাকলেও লাইসেন্স না থাকার কারণ দেখিয়ে চালকদের বিভিন্ন মেয়াদের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
ঢাকেশ্বরী-মিরপুর রুটের সেফটি পরিবহনের চালক ইব্রাহিম বলেন, ‘আমার গাড়ির ফিটনেসের কাগজ ঠিক আছে। আমার বিআরটিএর দেওয়া রানার লাইসেন্স আছে। মূল লাইসেন্স পাব দুই মাস পর। তবুও আমাকে আটক করা হইছে।’
ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে ১৫ জন চালকের সাজা হলেও, অভিযান শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বাস মালিক সমিতির মালিক ও নেতাদের ছিল সরব উপস্থিতি। কেউ ছিলেন তদবিরে ব্যস্ত। কেউবা মুঠোফোনে যোগাযোগ করছিলেন ঊর্ধ্বতন কর্তাব্যক্তিদের সঙ্গে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের সামনে মিরপুর-গুলিস্তান রুটের ইটিসি পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘যেসব বাস আটক করছে সব বাসের ফিটনেস ঠিক আছে। তবুও মামলা দেওয়া হচ্ছে। প্রাইভেট কার ধরা হচ্ছে না কেন! এভাবে অভিযান চললে আমাদের বাস চালানো বন্ধ করা ছাড়া উপায় নেই।’
পাঁচ দিন ধরে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালিয়েছে। এসব অভিযানে ২১টি বাস ডাম্পিংয়ে দেওয়া হয়েছে জানিয়ে ডিএমপির ম্যাজিস্ট্রেট মশিউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘অভিযানের সময় বাস কমে গেছে এটাই আমাদের সাফল্য। আনফিট বাসে অনেক যাত্রীর ভোগান্তি হয়। আর প্রাইভেট কারে মাত্র চারজন থাকেন। তাই বাস বেশি ধরা হচ্ছে।’

No comments

Powered by Blogger.