এইচএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর আনন্দে–উৎকণ্ঠায় সারা দিন

প্রতিবছর উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার ফল ঘোষণার পর নামকরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থীদের বাঁধনহারা উচ্ছ্বাস চোখে পড়ে। কিন্তু এবার সেই আনন্দ-উচ্ছ্বাস থাকলেও নিজেদের প্রতিষ্ঠানের সাফল্য নিয়ে উদ্যাপন ছিল না। অবশ্য সেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তালিকা না করার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন শিক্ষকেরা। প্রতিবারই সেরা প্রতিষ্ঠানের তালিকায় প্রথম দিকে থাকত রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ। এবারও তাদের ফল ভালো।
প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ সুফিয়া খাতুন মনে করেন, সেরা প্রতিষ্ঠানের আলাদা তালিকা না করার সিদ্ধান্ত ভালো হয়েছে। তিনি বলেন, এই তালিকা শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভিন্ন প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। অনেক ভালো ফলাফল করার পরও যখন কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সেরা তালিকায় থাকে না, তখন সবার মধ্যে একধরনের হতাশার সৃষ্টি হয়। এবারে তালিকা না থাকায় সেই নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না।
রাজধানীর আরেক নামকরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ। প্রতিষ্ঠানটির সহকারী প্রধান শিক্ষক এম এ সালাম খানও মনে করেন, এ সিদ্ধান্তটি সঠিক। তিনি বলেন, এটি একটি সময়োপযোগী পদক্ষেপ। এতে প্রতিষ্ঠানগুলোর অযৌক্তিক প্রতিযোগিতা কমবে।
আনন্দ-উৎকণ্ঠা: পাসের হার ও জিপিএ-৫ দুটোই কমেছে—এই খবর গণমাধ্যমে শিক্ষার্থীরা সবাই জেনে যান। তাই নামকরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থীদের উৎকণ্ঠা বাড়ছিল জিপিএ-৫ পাওয়া না-পাওয়া নিয়ে।
এইচএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর জিপিএ–৫ পাওয়ার আনন্দ সেলফিতে ধরে রাখার মুহূর্ত। গতকাল হলিক্রস স্কুল অ্যান্ড কলেজে l সাবিনা ইয়াসমিন
ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজে গিয়ে দেখা যায়, ফলাফল টাঙানোর বোর্ডের সামনে বিশাল না হলেও একটা জটলা তৈরি হয়েছে। ফাঁক গলে ফারুক আহমেদ চোখ রাখলেন বিজ্ঞান বিভাগের ফলের তালিকায়। মুহূর্তেই তাঁর মুখে হাসি। ছেলে আহমেদ আদনান ফারুক জিপিএ-৫ পেয়েছেন। খুশির এই খবরটি সঙ্গে সঙ্গেই মুঠোফোনে জানিয়ে দেন ছেলেকে।
ফারুক আহমেদ বলেন, সকালে সারা দেশে ফলাফলের কিছুটা অবনমন দেখে ছেলে কিছুটা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে। ভয়ে কলেজে আসেনি। এ জন্য তিনি এসেছেন ফল জানতে।
এবারের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৪৫৯ জন। ৮৫২ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে অকৃতকার্য চারজন। পাসের হার ৯৯.৫৩। এর মধ্যে মানবিক শাখায় শতভাগ পাস করেছেন।
ফল জানতে দুপুরের আগেই শিক্ষার্থী-অভিভাবকেরা কলেজ প্রাঙ্গণে এসে জড়ো হতে থাকেন। বেলা দুইটার পরপর কলেজের অধ্যক্ষ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান সুবহানী মাইকে সংক্ষিপ্ত ফলাফল ঘোষণা করলে উল্লাসে ফেটে পড়েন সবাই। ঢোলের তালে তালে চলে নাচ।
আসাদুজ্জামান সুবহানী বলেন, পরীক্ষার ফলে তিনি সন্তুষ্ট। তাঁর কলেজটি আবাসিক বলে হরতাল-অবরোধের সময় অনেক পরীক্ষার্থী নিজ নিজ বাড়িতে চলে যান। এ জন্য পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়ে একটু ঘাটতি ছিল। কিন্তু শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগের কারণে ফল আশানুরূপই হয়েছে।
বেলা একটার দিকে মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের কলেজে গিয়ে দেখা যায়, কলেজ ভবনের সামনে জড়ো হয়েছেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা। অনেকের চোখে-মুখে উৎকণ্ঠা। কলেজ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, দুইটায় ফল টাঙানো হবে। বোর্ডে ফল টাঙানোর আগেই অনেকে উল্লাস প্রকাশ শুরু করলেন। কারণ, তারা ইতিমধ্যে মুঠোফোনে নিজের ফল পেয়ে গেছেন। কিছুক্ষণের মধ্যে বোর্ডেও ফল টাঙানো হলো। অনেকেই কাঁদছেন। কেউ কেউ ভালো ফল করার আনন্দে, কারও চোখে পানি প্রত্যাশিত ফল না পেয়ে।
কলেজ মাঠে ছোটাছুটি করছিলেন দুই বন্ধু ফারহানা হোসেন ও অদিতি ভৌমিক। দুজনই জিপিএ-৫ পেয়েছেন। ফারহানা বললেন, ‘আগের রাত থেকেই টেনশন ছিল। সকালে যখন জানা গেল যে সারা দেশে ৪৩ হাজারের মতো শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছেন, তখন টেনশন আরও বেড়ে গিয়েছিল। খুব ভয় লাগছিল।’
এবার রাজধানীর নামকরা এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির ফল কিছুটা খারাপ। আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সহকারী প্রধান শিক্ষক এম এ সালাম খান জানান, বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ৬২৪ জনের মধ্যে দুজন ফেল করেছেন। মানবিক বিভাগ থেকে ফেল করেছেন ২০ জন আর বাণিজ্যে তিনজন।
আইডিয়ালের মাঠে উচ্ছ্বাসের কিছুটা কমতি থাকলেও ভিন্ন চিত্র ছিল ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজে। ফল ঘোষণার পর শিক্ষার্থীদের ঢাকঢোল বাজিয়ে নেচে-গেয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে দেখা গেছে। অনেকে দলে দলে মুঠোফোনে সেলফি তুলছিলেন।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ সুফিয়া খাতুন জানান, শিক্ষার্থীদের পাসের হার ৯৯.৪। মোট ১ হাজার ৪৪১ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৯৩৩ জন। আর ফেল করেছেন ছয়জন।

No comments

Powered by Blogger.