ফুকুশিমার পর প্রথম পারমাণবিক চুল্লি চালু জাপানের

জাপানের কিউশু ইলেকট্রিক পাওয়ার কোম্পানি
দক্ষিণাঞ্চলীয় কিউশু দ্বীপের সেনদাইতে অবস্থিত
পারমাণবিক চুল্লিটি গতকাল আবার চালু করে।
এর প্রতিবাদে ফটকের বাইরে গণসমাবেশ করা হয়
জাপান তার সেন্দাই শহরে অবস্থিত একটি পারমাণবিক চুল্লি গতকাল মঙ্গলবার আবার চালু করেছে। এর মধ্য দিয়ে পারমাণবিক কার্যক্রম বন্ধ রাখার নীতি থেকে সরে এল উচ্চ জ্বালানি চাহিদার দেশটি। ২০১১ সালের ফুকুশিমা পারমাণবিক বিপর্যয়ের জের ধরে ওই নীতি নিয়েছিল টোকিও। খবর এএফপি, রয়টার্স ও বিবিসির। টোকিও থেকে এক হাজার কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত সেন্দাই পারমাণবিক চুল্লি গতকাল স্থানীয় সময় সকালে চালু করে এর পরিচালনকারী প্রতিষ্ঠান ইউটিলিটি কিউশু ইলেকট্রিক পাওয়ার। এটি চালু করার ক্ষেত্রে জাপান সরকার ফুকুশিমা বিপর্যয়-পরবর্তী যেসব কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে, তা অনুসরণ করা হয়েছে। ৩১ বছর পুরোনো চুল্লিটি গতকাল স্থানীয় সময় রাত ১১টার মধ্যে পূর্ণ সক্ষমতায় এবং শুক্রবারের মধ্যেই বিদ্যুৎ উৎপাদনে ফিরবে বলে আশা করা হচ্ছিল। তবে বাণিজ্যিকভাবে কার্যক্রম শুরু করতে আগামী মাসের শুরু পর্যন্ত সময় লেগে যাবে বলে জানান প্রতিষ্ঠানটির একজন মুখপাত্র। ফুকুশিমায় অবস্থিত পারমাণবিক চুল্লিগুলো ২০১১ সালের মার্চ মাসের প্রলয়ংকরী ভূমিকম্প ও সুনামির আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ওই ঘটনার পর দেশটির অন্য পারমাণবিক চুল্লিগুলোও ধীরে ধীরে বন্ধ করে দেওয়া হয়। সর্বশেষ চালু থাকা দুটি চুল্লি বন্ধ করা হয়েছিল ২০১৩ সালে। পাশাপাশি ফুকুশিমা বিপর্যয় পারমাণবিক বিদ্যুৎ ব্যবহারের ভবিষ্যৎ নিয়েও একটা লড়াইয়ের ক্ষেত্র প্রস্তুত করেছিল। ফুকুশিমা বিপর্যয়ের কারণে বড় এলাকায় মারাত্মক তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ে। এতে করে হাজার হাজার মানুষ বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হয়। তাদের অনেকেই আর কোনো দিন সেই বাড়িতে ফিরতে পারবে না বলে মনে করা হয়। ফুকুশিমার বিপর্যয়ের শিকার চুল্লিগুলোকে পুরোপুরি বন্ধ করে দিতে কয়েক দশক সময় লেগে যেতে পারে।
ফুকুশিমা বিপর্যয়ের পর জাপানে পরমাণুবিরোধী চরম মনোভাব সৃষ্টি হয়। গতকাল সেন্দাই চুল্লি পুনরায় চালুর সময়ও তা পরিষ্কার হয়েছে। টেলিভিশনে দেখা যায়, বিক্ষোভকারীরা ওই চুল্লির সামনে পুলিশের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি করছেন। গতকাল সেখানে কমবেশি ২০০ বিক্ষোভকারী জড়ো হন, যার মধ্যে ছিলেন দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাওতো কান। তিনি দীর্ঘদিন ধরেই পরমাণুবিরোধী প্রচারণা চালিয়ে আসছেন।
‘সবার আগে নিরাপত্তা ’: জাপান বিশ্বের অন্যতম শিল্পসমৃদ্ধ দেশ হলেও প্রাকৃতিক সম্পদে তারা দরিদ্র। একটা সময় তারা মোট বিদ্যুৎ চাহিদার এক-চতুর্থাংশ পূরণে নির্ভরশীল ছিল পারমাণবিক চুল্লিগুলোর ওপরে। সব চুল্লি বন্ধ থাকায় বিপদ শুরু হয়।
ফুকুশিমার মতো বিপর্যয়ের পুনরাবৃত্তি এড়াতে জাপান বেশ কিছু কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে, বিকল্প ব্যবস্থা, বাড়তি প্রতিরোধ ব্যবস্থা এবং সুনামির ঢেউ ঠেকাতে কিছু এলাকায় সুউচ্চ দেয়াল তৈরি। দেশটির শিল্পমন্ত্রী ইয়োইশি মিইয়াজাওয়া সাংবাদিকদের বলেন, ‘জ্বালানি নিরাপত্তা, অর্থনীতি ও বৈশ্বিক উষ্ণতাবিরোধী পদক্ষেপগুলোর পরিপ্রেক্ষিত বিবেচনায় একটা একটা করে চুল্লিগুলো আবার চালু করার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু সব সময়ই নিরাপত্তার বিষয়টি প্রথম বিবেচ্য।’ আবার যদি পারমাণবিক দুর্ঘটনা ঘটে, তাহলে সরকার তা ‘দায়িত্ব নিয়ে মোকাবিলা’ করবে বলে জানান তিনি।

No comments

Powered by Blogger.