কোকেন কাণ্ড- দুই প্রতিষ্ঠানের দিকে নজর তদন্ত দলের by মহিউদ্দীন জুয়েল

চট্টগ্রাম বন্দরে তেলের ড্রামে কোকেন পাওয়ার ঘটনায় বিদেশী প্রতিষ্ঠান বলিভিয়ার ‘ইমপোর্ট এক্সপোর্ট ইএল ভাইভেন এসআরএল’ ও উরুগুয়ের ‘সাউথ ফ্রেইট লজিস্টিক নামের দুটি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের দিকে নজর পুলিশ সদস্য, শুল্ক গোয়েন্দা ও এই বিষয়ে গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্যদের। কেবল তাই নয়, এমভি থর স্ট্রিট নামের যে জাহাজে এসব মাদক বাংলাদেশে আনা হয়েছে সেই জাহাজে করে ইতিপূর্বে ভোজ্যতেল আমদানির নামে কোকেন পাচার হয়েছে কিনা তাও খতিয়ে দেখলে অনেক কিছু বেরিয়ে আসবে বলে তাদের ধারণা।
গতকাল মানবজমিনের সঙ্গে আলাপকালে এমনি কথা বলেছেন সংশ্লিষ্ট সদস্যরা। তবে তদন্তের স্বার্থে এখনই সব কিছু জানাতে চায় না তারা। কারণ যেহেতু বিষয়টি জাতিসংঘ পর্যন্ত গড়িয়েছে তাই এখন এই ইস্যুটি আর বাংলাদেশে নেই। বিশ্বব্যাপী নজর হয়ে গেছে। সেই কারণে কোন তথ্য আগাম দিতে চায় না কমিটির কোন সদস্য।
তদন্ত কমিটির একটি সূত্র জানায়, দায়িত্ব এড়াতে ইতিমধ্যে খান জাহান আলী লিমিটেডের মালিক নুর মোহাম্মদ পুলিশকে জানিয়েছেন তিনি এই ঘটনার সঙ্গে কোনভাবেই জড়িত নন। তার এক কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা সোহেল প্রতিষ্ঠানটির ঠিকানা ও প্যাড ব্যবহার করে জালিয়াতির মাধ্যমে প্রাইম হ্যাচারি নামে বলিভিয়া থেকে ১০৭ ড্রামের এই চালানটি এনেছে।
অন্যদিকে তার এই কথা কোনভাবেই বিশ্বাস করতে পারছে না পুলিশ সদস্যরাও। এর আগে একইভাবে সূর্যমুখী তেলের নামে বিদেশ থেকে কি পরিমাণ ভোজ্যতেল ড্রামে করে আনা হয়েছে তা খতিয়ে দেখতে বন্দরের কাগজপত্র যাচাই বাছাই করবেন তারা।
সানফ্লাওয়ার তেল আমদানির ঘোষণা দিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে আসা  কনটেইনারটির নম্বর ছিল সিডিএইইউ- ৯১৪৫৭৬৯/১৯৩৮৪৪)। প্রতি ড্রামের ওজন ছিল ১৮৫ কেজি। এর মধ্যে যে ড্রামে কোকেন পাওয়া গেছে তার ওজন ধারণা করা হচ্ছে ৬১ কেজি। অতীতে একই কায়দায় এভাবে তেলের সঙ্গে কোকেন পাচার হয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে খান জাহান আলীর চালান দেখতে কাজ করা হবে আগামীকাল থেকে।
কমিটির সদস্যদের কারও কারও ধারণা, এই ঘটনার সঙ্গে বিদেশের একটি সিন্ডিকেটও ওতপ্রোতভাবে জড়িত। কেননা, জাল করা কাগজপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, চীন থেকে কন্টেইনারটি খালি পাঠানো হয় বলিভিয়ার মন্টিকন বন্দরে। তারপর বলিভিয়ার ‘ইমপোর্ট এক্মপোর্ট ইএল ভাইভেন এসআরএল’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান চালানটি রপ্তানি করে। আর পণ্যের ফরোয়ার্ডিং এজেন্ট ছিল উরুগুয়ের ‘সাউথ ফ্রেইট লজিস্টিক’ নামের আরেকটি প্রতিষ্ঠান। সবমিলিয়ে এসব প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের জড়িত থাকার বিষয়টি একেবারেই উড়িয়ে দিচ্ছেন না কেউ।
এ বিষয়ে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান হোসাইন আহমেদ মানবজমিনকে বলেন, এই ঘটনার সঙ্গে দেশের বাইরের একটি চক্র জড়িত এটা নিশ্চিত। তারা রুট হিসেবে ব্যবহার করতে চট্টগ্রাম বন্দরকে বেছে নিয়েছে। আমাদের কমিটি যেখান থেকে চালানটি এসেছে ও যাদের মাধ্যমে তা আনা হয়েছে সেগুলো বের করার চেষ্টা করবে।
চট্টগ্রাম পুলিশ কমিশনার আবদুল জলিল মণ্ডল বলেন, জাতিসংঘ দল আসলে প্রথমেই তারা খুঁজবে কোন দেশ থেকে চালানটি এসেছে। তারপর ওরা দেখবে কোন কোন বন্দর দিয়ে সেটি আনা হয়েছে। জাহাজটিতে এর আগে এসব পণ্য আনা হয়েছে কিনা। এরপর সবশেষে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠানটির ভূমিকা যাচাই করবে।
তিনি আরও বলেন, বুঝা যাচ্ছে দেশের বাইরের অনেকে এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত। খান জাহান আলীর কর্মকর্তা সোহেল যাদের নাম বলেছে তাদের অনেকে লন্ডনে আছেন। তাদের অবস্থান চিহ্নিত করা গেলে ঘটনা অনেকখানি খোলাসা হবে।
সানফ্লাওয়ার তেল ঘোষণা দিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আসা ১০৭টি কন্টেইনারের একটিতে গত ২৭শে জুন তরল কোকেনের অস্তিত্ব মিলে। ঢাকার বিসিএসআইআর ও বাংলাদেশ ড্রাগ টেস্টিং ল্যাবরেটরিতে পাঠানোর পর তারা কোকেন থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। এর আগে গত ৮ই জুন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও নৌবাহিনীর ল্যাবের প্রাথমিক পরীক্ষায় কোন তরল কোকেন না থাকার কথা জানিয়েছিলেন কর্মকর্তারা।

No comments

Powered by Blogger.