বিএসসির ভাগিনা খুন- সবকিছু কেড়ে নিয়ে একজন বলে ‘এবার তোকে মারতে হবে’

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি শিল্পপতি নূরুল ইসলাম বিএসসির ভাগিনা ওবায়দুলের কাছ থেকে ল্যাপটপ ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়ার পরও কপালে পিস্তল ঠেকিয়ে গুলি করেছে ৩ সন্ত্রাসী। এই ঘটনায় তাই ছিনতাইকারী জড়িত থাকার বিষয়টি এখন আর বড় করে দেখছে না পুলিশ।
তাদের মতে, কোটি টাকার ব্যবসায় নিয়োজিত থাকায় ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব কিংবা ঈর্ষান্বিত হয়েও পেশাদার খুনি দিয়ে কাজটি করাতে পারেন যে কেউ। খুনের আলামত দেখেই তাই এখন সন্দেহ করা হচ্ছে। ঘটনার সময় প্রত্যক্ষদর্শী রিকশাচালক জাহাঙ্গীর কলাবাগান থানায় পুলিশকে জানিয়েছে, যারা খুনের ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের দেখে ছিনতাইকারী মনে হয় না। কারণ মালামাল লুটের সময় ওবায়দুল কোন ধরনের বাধা দেননি। ধস্তাধস্তি ছাড়াই সবকিছু কেড়ে নিয়ে মোটরসাইকেলে আসা ৩ আরোহীর একজন বলে উঠে ‘এবার তোকে মারতে হবে’। 
জাহাঙ্গীর নিহত ওবায়দুল হাসানের পারিবারিক সদস্যদের আরও জানিয়েছেন, মাত্র ১০ মিনিটের মধ্যে তার কাছ থেকে ল্যাপটপ, মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়ে এ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করেছে ৩ সন্ত্রাসী। এই সময় তারা ঢাকার ১০৩, সার্কুলার রোডের ওই জায়গায় রাত ঠিক সাড়ে ১২টার সময় এসে গতিরোধ করে। পরে ঘটনা ঘটিয়ে দ্রুত চলে যায়। কলাবাগান থানা পুলিশ মানবজমিনকে জানায়, ইতিমধ্যে এই ঘটনার ভিডিও ফুটেজ শনাক্ত করেছে তারা। যেখানে দেখা গেছে, ৩ জন আরোহী তার গতিরোধ করে কিছু কথা বলতে থাকে। নিহত ওবায়দুল হাসান বিষয়টি টের পেয়ে আগে থেকেই তাই সবকিছু দিয়ে দেয়।
এখন মালামাল পাওয়ার পরও ছিনতাইকারীরা কেন তাকে খুন করলো তা বড় করে দেখছেন পুলিশ সদস্যরা। তাদের ভাষ্য, ছিনতাইকারীদের যেহেতু কোন ধরনের বাধা দেয়া হয়নি তার মানে ওদের টার্গেট ছিল ওবায়দুল। ঘটনার আগে তার মোবাইলের সব কললিস্ট চেক করছেন আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরা।
এ বিষয়ে ঢাকা কলাবাগান থানার ওসি ইকবাল হোসেনকে বলেন, প্রত্যক্ষদর্শী রিকশা চালক জাহাঙ্গীরের বর্ণনার সঙ্গে ভিডিও ফুটেজের চিত্র হুবহ মিলে গেছে। কারণ ছিনতাইকারীরা বাধা না পেলে কখনোই গুলি করে না। এই ক্ষেত্রে হয়েছে উল্টো। তার মানে এখানে অন্য কিছুর গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা এসআই আনসার আলীকে দিয়ে একটি তদন্ত কমিটি করেছি। আশা করছি শিগগিরই প্রতিবেদন জমা দিতে পারবো। তবে ঘটনার সঙ্গে ৩ জন জড়িত এটা নিশ্চিত হয়েছি। লুট করা মালামাল মোটরসাইকেলে বসা ৩ জনের মধ্যে মাঝে বসা ব্যক্তি নিয়ে গেছে। আর গুলি করেছে মোটরসাইকেলের পেছনে বসা ব্যক্তি।
নিহত ওবায়দুল হাসানের বড় ভাই শেখ আহমেদ গতকাল দুপুরে মানবজমিনকে বলেন, আমার মামা আসলে রাজনীতি করতেন। কিন্তু ওবায়দুল তার ধারেকাছে ছিল না। সে খুবই চুপচাপ থাকতো। কয়েক মাস আগে বিয়ে করে সংসারটা গুছিয়ে এনেছিল। এই মুহূর্তে সন্দেহটা নতুনভাবে আবার দানা বাঁধতে শুরু করেছে।
তিনি আরও বলেন, প্রথমে ছিনতাইকারী মনে হলেও এখন আমাদের ধারণা অন্যকিছু। কিন্তু ওর তো কোন শত্রু নেই। তাহলে ব্যবসায়িক বিরোধটা কোথা থেকে আসবে। এই কথা সত্যি ওবায়দুল সাবজিরো আইসক্রিম পার্লারের বসুন্ধরা সিটি শাখার ব্যবস্থাপক ছিলেন। প্রতিদিন তাই তাকে অনেক লেনদেন করতে হতো।
প্রসঙ্গত, গত শুক্রবার রাতে কলাবাগানের বাসায় ফেরার পথে সন্ত্রাসীদের হাতে খুন আওয়ামী লীগ নেতা নুরুল ইসলাম বিএসসির ভাগিনা ওবায়দুল। ঘটনার পরপরই আদনান নামের তার অপর এক খালাতো ভাই বাদী হয়ে থানায় মামলা করেন। মাত্র ৭ মাস আগে বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন নিহত ওবায়দুল।

No comments

Powered by Blogger.