প্রার্থিতা নিয়ে জটিলতা কাটেনি বিএনপিতে by কাফি কামাল ও কাজী সুমন

সিটি নির্বাচনে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষদিন আগামীকাল। কিন্তু এখন পর্যন্ত প্রার্থিতা নিয়ে জটিলতা কাটেনি বিএনপিতে। মেয়র ও কাউন্সিলর কোন পদেই সমর্থন চূড়ান্ত করতে পারেনি বিরোধী জোট। তিন সিটির মধ্যে ব্যতিক্রম একমাত্র চট্টগ্রাম। সেখানে সমর্থন চূড়ান্ত করে ইতিমধ্যে প্রচারণা শুরু করেছেন বিরোধী নেতারা। কিন্তু ঢাকায় চিত্র তার বিপরীত। ঢাকা দক্ষিণে বিএনপি সমর্থিত বিশিষ্ট নাগরিকদের প্ল্যাটফরম ‘আদর্শ ঢাকা আন্দোলন’ মেয়র পদে মির্জা আব্বাসের প্রতি সমর্থন চূড়ান্ত করেছে। প্ল্যাটফরম সংশ্লিষ্টরা গণমাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করলেও এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসেনি। অন্যদিকে ঢাকা উত্তরে সমর্থন প্রত্যাশী মূল প্রার্থী আবদুল আউয়াল মিন্টুর মনোনয়ন বাতিলের ঘটনা পাল্টে দিয়েছে পুরো পরিস্থিতি। নির্বাচনের আগেই যা বিরোধী জোটের জন্য একটি বিশাল ধাক্কা। হাইকোর্টে রিট খারিজ হওয়ার পর আপিল করেছেন তিনি। মিন্টুর জন্য শেষ মুহূর্তের অপেক্ষার পাশাপাশি এখন বিকল্প হিসেবে জটিলতায় বিএনপি। মিন্টুর ছেলে তাবিথ আউয়াল ও সমমনা দল বিকল্পধারার মাহী বি চৌধুরীর ব্যাপারে চলছে রশি টানাটানি। দল ও জোটের নেতারা এ নিয়ে একমত হতে পারেননি। জোটের বাইরে থাকা সমমনা দলগুলোকে কাছে টানা ও শরিকদের মধ্যে আস্থা মজবুত করা যুক্তিতে প্রথম বিকল্প ভাবা হচ্ছিল মাহীকে। তার ব্যাপারে শীর্ষ নেতৃত্ব ও ‘আদর্শ ঢাকা আন্দোলন’ সংশ্লিষ্টরা ইতিবাচক থাকলেও জোটের প্রভাবশালী শরিকদের রয়েছে ভিন্নমত। অন্যদিকে বিএনপির জন্য মিন্টুর দেড় দশকের অবদানের বিষয়টি বিবেচনায় রেখে তাবিথের বিষয়টিও উড়িয়ে দিতে পারছে না। ফলে মেয়র পদে জটিলতা কাটিয়ে উঠতে পারেনি বিএনপি। চূড়ান্ত করা যায়নি কাউন্সিলর পদে সমর্থনও। সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে মহানগর বিএনপি নেতারা প্রকাশ্যে মতবিনিময় ও বৈঠকের মাধ্যমে বিষয়টি চূড়ান্ত করার সুযোগও পাচ্ছে না। এমনকি বিএনপি সমর্থিত বিশিষ্ট নাগরিকদের প্ল্যাটফরম ‘আদর্শ ঢাকা আন্দোলন’-এর কমিটি গঠনেও হয়েছে অনাকাঙ্ক্ষিত বিলম্ব। প্রথমদিকে ‘শত নাগরিক’-এর নেতৃত্ব বিএনপিতে নির্বাচনী আলোচনা শুরু হলেও তারা বিএনপিপন্থি পেশাজীবী সংগঠনগুলোর বিরোধিতার মুখে পড়ে। শেষ পর্যন্ত সবার সমন্বয়ে ‘আদর্শ ঢাকা আন্দোলন’ নামে নতুন প্ল্যাটফরম গঠন করা হয়েছে। তবে বিএনপি, ২০ দলীয় জোটের নেতা, আদর্শ ঢাকা আন্দোলনের নেতারা জানিয়েছেন, আজ-কালের মধ্যেই সবকিছু চূড়ান্ত হবে। তারা আশা করছেন, ৯ই এপ্রিল মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার ও ১০ই এপ্রিল প্রতীক বরাদ্দের পর জোরেশোরে জনসংযোগের মাঠে নামবে বিএনপি জোট সমর্থিত প্রার্থীরা। এদিকে বিএনপির সমর্থন প্রত্যাশী মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীসহ দলের নেতাকর্মীদের বেশির ভাগই একাধিক মামলার আসামি। নির্বাচনী কর্মকাণ্ড পরিচালনার পরিবেশ তৈরি করতে বিরোধী প্রার্থীদের জামিনের জন্য প্রধান বিচারপতির কাছে আবেদন করেছেন বিএনপির আইনজীবীরা। বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও সুপ্রিম বারের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন বলেন, আমরা নির্বাচনে প্রার্থীদের আগাম জামিনের জন্য প্রধান বিচারপতির কাছে আবেদন করেছি। তিনি বলেছেন, বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।  তবে অনেকই অভিযোগ করেছেন, উচ্চ আদালত থেকে জামিন লাভে দেখা দিয়েছে জটিলতা। বিএনপির গণশিক্ষা সম্পাদক এডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া বলেন, সিটি নির্বাচনে প্রার্থীরা জামিন নিয়ে বিপাকে আছেন। সিএমএম কোর্ট, জজ কোর্ট যেখানেই যাই বলা হচ্ছে, রাজনৈতিক মামলা তারা জামিন দিতে পারবেন না। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে নিষেধ আছে। এদিকে সমর্থন চূড়ান্ত করে জনসংযোগে নেমেছেন সরকারি দল সমর্থিত প্রার্থীরা। যদিও তাদের অনানুষ্ঠানিক প্রচারণা চলছে শুরু থেকেই। বিপরীতে এখনও প্রচারণার মাঠে নামতে পারেনি বিরোধী জোটের সমর্থন প্রত্যাশীরা। এমনকি ঢাকা শহরের কোথাও দোয়া বা ভোট চেয়ে সাঁটানো একটি ব্যানার-পোস্টারও চোখে পড়েনি। ওদিকে ঢাকা দক্ষিণে ইতিমধ্যে বিএনপির তরফে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের পক্ষে সমর্থন চূড়ান্ত করেছে ‘আদর্শ ঢাকা আন্দোলন’। কিন্তু বিএনপির সমর্থন প্রত্যাশী বাকি তিনজন এখনও মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেননি। এমনকি এ ব্যাপারে দল, প্ল্যাটফরম বা প্রার্থীদের পরস্পরের আলাপ-আলোচনাও হয়নি। মহানগর বিএনপির প্রভাবশালী দুটি গ্রুপ ছাড় দেয়ার মানসিকতা না দেখানোয় এখনও ঐকমত্যে পৌঁছুতে পারেনি। ওদিকে ঢাকা মহানগর উত্তরে বিএনপির সমর্থন প্রত্যাশী একক প্রার্থী ছিলেন চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুল আউয়াল মিন্টু। তার প্রার্থিতা বাতিল হওয়ায় মনোনয়নপত্রের বৈধতা নিয়ে হাইকোর্টের আপিলের শুনানি হবে আগামীকাল। ফলে শেষদিন পর্যন্ত তার জন্য অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে। যদিও শেষ দিন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও দাখিল করেছেন তার ছেলে তাবিথ আউয়াল। কিন্তু মিন্টুর এ ভুলের বিষয়টি সহজে নিতে পারছে না বিএনপি নেতাকর্মীরা। মিন্টুর কারণে সেখানে বিএনপির অন্য কোন নেতা মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেনি। এখন চূড়ান্তভাবে তার প্রার্থিতা অবৈধ বিবেচিত হলে বিকল্প প্রার্থী সমর্থন দেয়া ছাড়া কোন উপায় নেই। এদিকে মঙ্গলবার রাতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন আবদুল আউয়াল মিন্টুর স্ত্রী ও ছেলে তাবিথ আউয়াল। এদিকে নানা জটিলতা পেরিয়ে এগোতে গিয়ে কাউন্সিলর প্রার্থীদের দিকে খুব একটা মনোযোগই দিতে পারেনি সংশ্লিষ্টরা। সরকারি দলের সমর্থন প্রত্যাশীদের সংখ্যা যেখানে কমে এসেছে সেখানে দ্বিধাদ্বন্দ্বে বিএনপির সমর্থন প্রত্যাশীরা। বিএনপি ও জোটের একাধিক নেতা জানান, ঢাকা মহানগরের মতো চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপিতেও দলীয় কোন্দল আছে। কিন্তু সিটি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গতবারের মতো এবারও একটি ঐকমত্যে এসেছেন তারা। ইতিমধ্যে চট্টগ্রাম বিএনপির শীর্ষ দুই নেতা কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এবং মহানগর সভাপতি আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সমর্থিত প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা শুরু করেছেন। কিন্তু ঢাকার পরিস্থিতি ভিন্ন। শারীরিক অসুস্থতার কারণে ৫ই জানুয়ারি অবরোধ কর্মসূচির আগেই চিকিৎসার জন্য আমেরিকা গেছেন সাবেক মেয়র ও মহানগর বিএনপির একটি অংশের নিয়ন্ত্রণকারী সাদেক হোসেন খোকা। আন্দোলন কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে আত্মগোপনে আছেন আরেক অংশের নিয়ন্ত্রক দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। দুই নেতার দ্বন্দ্ব, একজনের বিদেশে অবস্থান এবং অন্যজন আত্মগোপনে থাকায় মহানগর নেতাকর্মীদের মধ্যে সমন্বয় হচ্ছে না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই শীর্ষ পর্যায় থেকে নিজেদের পছন্দের লোকজনকে প্রার্থী করতে চাপ সৃষ্টি করছেন সংশ্লিষ্ট নেতাদের ওপর। খোদ বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াও রয়েছেন এ দ্বিমুখী চাপে। সংশ্লিষ্টরা জানান, সার্বিকভাবে বিপর্যয়কর রাজনৈতিক পরিস্থিতিতেও ব্যক্তিস্বার্থের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বের হতে পারছেন না বিএনপি নেতারা।
‘আদর্শ ঢাকা আন্দোলন’ নামে নতুন কমিটি: এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসর এমাজউদ্দীন আহমদকে আহ্বায়ক, সাংবাদিক নেতা শওকত মাহমুদকে সদস্য সচিব ও প্রফেসর ড. মাহবুবউল্লাহকে কোষাধ্যক্ষ করে শত নাগরিক ও পেশাজীবী সংগঠনগুলোর সমন্বয়ে গঠন করা হয়েছে ‘আদর্শ ঢাকা আন্দোলন’-এর কেন্দ্রীয় কমিটি। গতকাল সংগঠনের আহ্বায়ক প্রফেসর  ড. এমাজউদ্দীন আহমেদ স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ কমিটির ঘোষণা দেয়া হয়। কমিটির যুগ্ম আহ্বায়কদের মধ্যে রয়েছেন- রুহুল আমিন গাজী, আনহ আক্তার হোসেন, ডা. একেএম আজিজুল হক, ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, কৃষিবিদ আনোয়ারুন্নবী মজুমদার বাবলা, ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন, ড. সুকোমল বড়ুয়া, সানাউল্লাহ মিয়া, মাসুদ আহমেদ তালুকদার, ড. সিরাজুল ইসলাম, কামালউদ্দিন সবুজ, আবদুল হাই শিকদার, বেবী নাজনীন, ড. তাহমিনা আক্তার টপি, রফিকুল ইসলাম, জাকির হোসেন, বিজন কান্তি সরকার, এলবার্ট পি কস্টা, ড. এমএ সবুর, হাসান জাফির তুহিন। সংগঠনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা হলেন- ডা. এমএ মাজেদ, বিচারপতি এমএ রউফ, খন্দকার মাহবুব হোসেন, আসাফ-উদ দৌলা, ডা. জাফরউল্লাহ চৌধুরী, এমএ হালিম, ড. ইউসুফ হায়দার, ড. সদরুল আমিন, গোলাম সরোয়ার, মাহফুজ উল্লাহ, এমএ কাইয়ুম, ইব্রাহিম খলিল ও জিন্নাতুন্নেছা তাহমিদা বেগম। প্রচার উপ-কমিটির সদস্যরা হলেন- মাহফুজ উল্লাহ, হারুন উর রশীদ, ডা. রফিকুল ইসলাম বাচ্চু, ড. আক্তার হোসেন, আবদুল হাই শিকদার, সৈয়দ আবদাল আহমেদ, ড. মামুন আহমেদ, কাদের গনি চৌধুরী, বশীর আল হেলাল, এস আল মামুন, হুমায়ুন কবির, শেখ শফি শাওন ও কাজী আসাদুজ্জামান মামুন। বিবৃতিতে প্রফেসর এমাজউদ্দীন বলেন, দীর্ঘসময় পর অনুষ্ঠেয় এ নির্বাচনে নির্ভয়ে যোগ্য প্রার্থীকে ভোট দিয়ে ঢাকা মহানগরীকে নিরাপদ ও পরিচ্ছন্ন বাসযোগ্য আদর্শ শহরে পরিণত করতে নাগরিক সমাজ দৃঢ় সংকল্প। ঢাকার মানুষের এই স্বপ্ন পূরণে আসন্ন ভোটকে ভীতিমুক্ত, শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠু করা, প্রার্থী ও ভোটারদের জন্য বৈষম্যহীন পরিবেশ সৃষ্টি সর্বোপরি রাজধানীর পরিচালনা এবং উন্নয়নকে প্রকৃত নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের হাতে ন্যস্ত করার লক্ষ্যে আমরা নিম্নবর্ণিত ব্যক্তিবর্গ ‘আদর্শ ঢাকা আন্দোলন’ নামে একটি মঞ্চ গঠনে উদ্যোগী হয়েছি। এর গঠন নিম্নরূপ এবং কমিটির পরিধি প্রয়োজনে বিস্তৃত হবে। সদস্যদের নাম পরে ঘোষণা করা হবে। এদিকে পুরানা পল্টন ৩৭/২ ঠিকানায় গণসংস্কৃতি দল-এর কার্যালয় থেকে নিজেদের কার্যক্রম শুরু করেছে ‘আদর্শ ঢাকা আন্দোলন’। যোগাযোগসহ সংশ্লিষ্টদের সুবিধার কথা বিবেচনায় রেখেই পুরানা পল্টনে নির্বাচন কেন্দ্রিক এ প্ল্যাটফরমের কার্যালয় চালু করা হয়েছে। গতকাল বিকালে সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী কর্মীদের আনাগোনায় মুখরিত দেখা গেছে কার্যালয়।
চূড়ান্ত হয়নি কাউন্সিলর প্রার্থী: রাজধানীর উত্তর ও দক্ষিণ সিটিতেও কাউন্সিলর পদে একক প্রার্থী দিচ্ছে বিএনপি। তবে প্রতিটি ওয়ার্ডেই রয়েছে দলের একাধিক প্রার্থী। একক প্রার্থী চূড়ান্ত করতে বিভিন্ন এলাকায় কাজ করছে একাধিক টিম। ইতিমধ্যে দলের হাইকমান্ডের দপ্তরে কাউন্সিলর প্রার্থীদের সম্ভাব্য একটি তালিকা পাঠানো হয়েছে। শিগগিরই দল থেকে যাদের সমর্থন দেয়া হবে তাদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে। তবে পেশাজীবী নেতাদের নিয়ে গড়া নতুন প্ল্যাটফরম ‘আদর্শ ঢাকা আন্দোলন’-এর ব্যানার থেকেই আসতে পারে সে ঘোষণা। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটির প্রতিটি ওয়ার্ডেই বিএনপির ৩-৪ জন করে কাউন্সিলর প্রার্থী রয়েছে। কোন কোন ওয়ার্ডে রয়েছে ৫ জনও। দলের সমর্থন আদায় করতে প্রতিদিনই ঢাকা দক্ষিণের মেয়র প্রার্থী ও মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মির্জা আব্বাসের শাহজাহানপুরের বাসায় ভিড় করছেন কাউন্সিলর প্রার্থীরা। দক্ষিণ সিটির কাউন্সিলর প্রার্থীর তালিকা চূড়ান্ত করতে মির্জা আব্বাসের অনুসারী দলের কয়েকজন নেতা কাজ করছেন। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকায় মির্জা আব্বাস এখনও নিরাপদ অবস্থানে থাকলেও একক কাউন্সিলর প্রার্থী চূড়ান্ত করার ব্যাপারে অনুসারী নেতাদেরকে তার  মতামত দিচ্ছেন। আর উত্তর সিটিতে মহানগর কমিটির সদস্য সচিব হাবিব-উন নবী খান সোহেল, যুগ্ম আহ্বায়ক এমএ কাইয়ুম, আনোয়ারুজ্জামান আনোয়ারসহ কয়েকজন নেতা কাজ করছেন। তারা প্রার্থীদের অতীত কর্মকাণ্ড, দলের আন্দোলন-সংগ্রামের ভূমিকাকে প্রাধান্য দিচ্ছেন। দুই সিটির একটি কাউন্সিলর প্রার্থীদের সম্ভাব্য একটি তালিকা দলের হাইকমান্ডের দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। সূত্রে জানা গেছে, অবিভক্ত ঢাকা সিটির বেশির ভাগ কমিশনারই ছিল বিএনপি সমর্থিত। তাদের মধ্যে ৬ জন মারা গেছেন আর একজন গুম হয়েছেন। বাকি প্রায় সবাই এবারের সিটি নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে প্রার্থী হয়েছেন। সাবেক কমিশনার যারা প্রার্থী হয়েছেন তারাই কাউন্সিলর পদে পেতে পারেন দলের সমর্থন। ওদিকে গতকাল থেকে আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থীরা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচারণা শুরু করলেও বিরোধী শিবিরে কাটেনি গ্রেপ্তার আতঙ্ক। এমনকি দলের নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের তালা খুলে দেয়া হলেও ভয় কাটেনি নেতাকর্মীদের। অনেকে চুপিসারে কার্যালয়ে গেলেও কিছুক্ষণ অবস্থান করেই চলে আসছেন। এখনও বন্ধ রয়েছে ভাসানী ভবনের মহানগর বিএনপির কার্যালয়টি। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির কাউন্সিলর প্রার্থীরা জামিন প্রার্থনা করলেও আদালত তাদের জামিন দিচ্ছে না। কাউন্সিলর পদে একক প্রার্থী চূড়ান্ত করার ব্যাপারে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান মানবজমিনকে বলেন, কাউন্সিলর প্রার্থীদের তালিকা চূড়ান্ত করতে মেয়র প্রার্থীদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। যুবদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এড. আবদুস সালাম বলেন, আমাদের অনেক প্রার্থীর মোবাইল ফোন বন্ধ। মামলা থাকার কারণে অনেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। আবার সরকার দলীয় ক্যাডাররা বিএনপি প্রার্থীদের বাসা গিয়ে হুমকি-ধামকি দিচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে আমরা সম্ভাব্য কাউন্সিলর প্রার্থীদের তালিকা প্রস্তুত করছি। দলের হাইকমান্ড সেই তালিকা যাচাই-বাছাই করে তাদের নাম ঘোষণা করবে। তবে প্রতীক বরাদ্দের পরই প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশ করা হতে পারে। ১০নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী ও মহানগর বিএনপির সদস্য মো. হারুণ-অর রশিদ বলেন, কাউন্সিলর প্রার্থীদের একটি তালিকা দলের হাইকমান্ডের দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। যারা দলের সমর্থন পাবেন আজ-কালের মধ্যে সেখান থেকে তাদের তালিকা প্রকাশ করা হবে। ঢাকা উত্তর সিটির ২৫ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপির সমর্থন প্রত্যাশী কাউন্সিলর প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার মিরাজউদ্দিন হায়দার আলী বলেন, এই ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে মোট ১৩ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে বিএনপির রয়েছেন পাঁচজন প্রার্থী। ঢাকা মহানগর কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক আনোয়ারুজ্জামান আনোয়ারের নেতৃত্বে  একটি টিম তেজগাঁও এলাকার ওয়ার্ডগুলোর প্রার্থী চূড়ান্ত করতে কাজ করছে। আমি শুনেছি- বুধবারের মধ্যে কাউন্সিলর প্রার্থীর তালিকা প্রকাশ করা হতে পারে।

No comments

Powered by Blogger.