চরম দুর্ভোগে সহস্রাধিক পরিবার

ঝড়ে টিনের বেড়া ও চালা—সবই উড়ে গেছে। পড়ে আছে শুধু
ঘরের খুঁটি। বাঁশ-টিনের ছাপরায় দিন কাটছে এই বৃদ্ধার। গত
মঙ্গলবার দুপুরে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার
কুশলীবাসা গ্রাম থেকে তোলা ছবি l প্রথম আলো
কুষ্টিয়া সদর, মিরপুর, দৌলতপুর ও কুমারখালী উপজেলার বেশ কয়েকটি ইউনিয়নে গত রবি ও মঙ্গলবার রাতের ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে সহস্রাধিক বাড়িঘরের টিনের চাল দুমড়ে-মুচড়ে যায়। শিলের আঘাতে সদর উপজেলার সবচেয়ে বেশি বাড়ির টিনের চালা ফুটো হয়। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছে হাজার হাজার মানুষ। এ ছাড়া বোরো ধানসহ সহস্রাধিক হেক্টর জমির পুরো ফসল নষ্ট হয়ে যায়। শত শত গাছ উপড়ে ও ভেঙে পড়ে।
কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মুজিব উল ফেরদৌস গতকাল বুধবার বিকেলে প্রথম আলোকে জানান, ঘটনার পর থেকে উপজেলা পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তারা ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের তালিকা তৈরি করেছেন। জেলায় ৩৮ হাজার পরিবার বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দুই দিনে জেলা প্রশাসনের ভান্ডার থেকে ৯৫ টন চাল ও ছয় লাখ টাকা ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। জরুরিভাবে ৪০০ টন চাল, ৪০ লাখ টাকা ও দুই হাজার বান্ডিল টিন চেয়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এ মুহূর্তে কয়েক হাজার বান্ডিল টিন খুবই প্রয়োজন বলে এই কর্মকর্তা জানান।
সদর উপজেলার বিত্তিপাড়া, উজানগ্রাম, মৃত্তিকাপাড়া, আলামপুর, আইলচারা গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, এখনো অনেকের বাড়ির টিন ফুটো অবস্থায় রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত অনেকে জানান, শিলাবৃষ্টিতে থাকার ঘরের টিন ফুটো হয়ে যাওয়ায় তাঁরা অবর্ণনীয় দুর্ভোগে পড়েছেন। হাতে টাকাপয়সা নেই যে আবার নতুন টিন কিনে ঘরবাড়ি মেরামত করবেন।
ঝড়ের পর থেকে জেলার দৌলতপুর ও ভেড়ামারা উপজেলার ৫০ শতাংশ গ্রাহক দুই দিন বিদ্যুৎ-বিচ্ছিন্ন ছিলেন। গতকাল বিকেল পর্যন্ত এ দুই উপজেলায় ৭৫ শতাংশ গ্রাহক বিদ্যুৎ পেয়েছেন।
কুষ্টিয়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মহাব্যবস্থাপক মুখলেচ গণি বলেন, ঝড়ে জেলায় শতাধিক বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে পড়েছে। অনেক জায়গায় তার ছিঁড়ে গেছে। সেগুলো মেরামত করতে একটু সময় লাগছে।
কুষ্টিয়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কিংকর চন্দ্র দাস বলেন, রবি ও মঙ্গলবারের কালবৈশাখী ও অস্বাভাবিক শিলাবৃষ্টিতে জেলায় ১ হাজার ৮৫ হেক্টর জমির বোরো ধান, ১০৪ হেক্টরের মরিচ, ৪০৫ হেক্টরের পাট, ১৮৫ হেক্টরের তিল, ৬০ হেক্টরের পান, ২০৩ হেক্টরের বেগুন, ২ হাজার ২২৭ হেক্টরের ভুট্টা, ৪৭৭ হেক্টরের কলা ও ৬৪ হেক্টর জমির অন্য সবজিসহ প্রায় পাঁচ হাজার হেক্টর জমির ফসল সম্পূর্ণভাবে নষ্ট হয়ে গেছে। এতে চরম বিপাকে পড়েছেন কৃষকেরা।
উজানগ্রামের কৃষক জাফর হোসাইন বলেন, ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে সবজি ও শসা আবাদ করেছিলেন। সব নষ্ট হয়ে গেছে। সরকার থেকে সহযোগিতা না করলে পথে বসতে হবে। কৃষক মহাম্মদ আলী ও ওহিদুল ইসলাম বলেন, মাঠের পর মাঠ বোরো ধান নষ্ট হয়ে গেছে।
সোনাইডাঙ্গা গ্রামের কৃষক দেলোয়ার হোসেন বলেন, তাঁর ১৪ বিঘা কলার খেত শিল পড়ে নষ্ট হয়ে গেছে। এখন তিনি দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
কুষ্টিয়া-৪ (খোকসা-কুমারখালী) আসনের সাংসদ আবদুর রউফ বলেন, ঘটনার পরপরই তিনি নিজে সব এলাকা ঘুরে দেখেছেন। খুব দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের ঘরে টিন দেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
জেলা প্রশাসক সৈয়দ বেলাল হোসেন বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের সঠিক তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। ফসলের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করে কৃষকদের কৃষিঋণ মওকুফের সুপারিশ করা হবে। পাশাপাশি তাঁদের যথাসাধ্য সরকারি সহায়তা দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

No comments

Powered by Blogger.