টেস্ট কেস এবং নয়া নির্বাচন by সাজেদুল হক

ঠিক এই মুহূর্তে তিন সিটি নির্বাচন কেন হাজির হলো তা এক বিরাট প্রশ্ন। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন অবশ্য আইনে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই হচ্ছে। কিন্তু দুই ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচন ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে বছরের পর বছর। দুষ্টু লোকরা এতদিন বলে আসছিলেন, পরাজয়ের ভয়ে ক্ষমতাসীনরা নির্বাচন দেননি। তাহলে এখন প্রশ্ন উঠেছে, জয় নিশ্চিত হওয়ার পরই কি তবে নির্বাচনের আয়োজন করা হয়েছে? সিটি নির্বাচন নিয়ে এরই মধ্যে নানা সমীকরণ তৈরি হয়েছে। নির্বাচন কমিশন, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি তিন পক্ষের জন্যই টেস্ট কেস হিসেবে দেখা দিয়েছে এ নির্বাচন। একপক্ষ খুব সম্ভবত এরই মধ্যে হেরে গেছে। ‘স্বাধীন নির্বাচন কমিশন’ নিয়ে বহু আলোচনা হয়েছে। তবে তারা কতটা স্বাধীন তা গত কয়েক দিনে পরিষ্কার হয়ে গেছে। নানা কিসিমের নির্বাচন কমিশন দেখার অভিজ্ঞতা রয়েছে বাংলাদেশের মানুষের। কেন্দ্র দখল আর জাল ভোট কোন কিছুই নতুন নয়। তবে ভোটের আগেই এভাবে পক্ষ নিয়ে ফেলা একেবারেই নতুন। সিটি নির্বাচনে বিএনপির অংশ নেয়া নিয়ে স্পষ্টতই দলটিতে দুটি মত রয়েছে। দলের একটি অংশ মনে করে জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনরত দলাটির সিটি নির্বাচনে অংশ নেয়া উচিত হবে না। কিন্তু আরেকটি অংশের মত, আন্দোলন কৌশলের অংশ হিসেবেই বিএনপির উচিত নির্বাচনে অংশ নেয়া। শেষ পর্যন্ত এ মতটিই গ্রহণ করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। বিএনপির এক শীর্ষ নেতা বলেছেন, আমি যতটা সম্ভব তৃণমূলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা বলেছেন, বিএনপির উচিত নির্বাচনে অংশ নেয়া। আওয়ামী লীগকে সব জায়গাতেই চ্যালেঞ্জ করা উচিত। তবে বিএনপি নির্বাচনে আসার সিদ্ধান্তের পর নানা নাটকীয়তা দেখা যাচ্ছে। ক্ষমতাসীন দলের নেতা স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য হাজী সেলিমকে নির্বাচনে অংশ না নিতে বাধ্য করা হয়েছে।
এ অবস্থায় আত্মগোপনে থাকা বিএনপি নেতাকর্মীরা যেন দলীয় প্রার্থীর সমর্থনে নির্বাচনের মাঠে না নামতে পারেন সে ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সর্বোচ্চ অ্যাকশনে রয়েছে। তাদের পক্ষ থেকে অবশ্য যুক্তি দেখানো হচ্ছে প্রার্থী নয়, তারা আসামি ধরতে অভিযান চালাচ্ছে। তবে নির্বাচন কমিশনের অবস্থান সবচেয়ে বিস্ময়কর। ইতিহাসে সম্ভবত এই প্রথম, নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে প্রার্থীদের গ্রেপ্তারের পক্ষে ওকালতি করা হচ্ছে। সর্বশেষ আবদুল আউয়াল মিন্টুর মনোনয়নপত্র বাতিল আরও বহু প্রশ্নই সামনে নিয়ে এসেছে। আবদুল আউয়াল মিন্টু ৭-৮ বছর ধরে ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। প্রচারণাও চালিয়ে আসছিলেন। এখন তার মনোনয়নপত্র বাতিল হয়ে গেল। অভিযোগ, মনোনয়নপত্রে সমর্থক হিসেবে যিনি স্বাক্ষর করেছেন তিনি উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকার ভোটার নন। এখন ক্ষমতাসীনদের হেভিওয়েট প্রার্থী আর যাই হোক হেভিওয়েট কোন প্রার্থীর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পড়ছেন না।
সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দল হিসেবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকেও কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হচ্ছে। আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে এ নির্বাচন মনিটর করা হচ্ছে, প্রার্থীও ঠিক করে দেয়া হয়েছে। বিদ্রোহীদের দেয়া হয়েছে কঠোর হুঁশিয়ারি। অন্যদিকে, সিটি নির্বাচনে মাঠে নামাই বিএনপি প্রার্থীদের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। চট্টগ্রামে অবশ্য বিএনপি নেতারা কিছুটা হলেও মাঠে নামতে পেরেছেন। কিন্তু ঢাকায় বিরোধী নেতারা এখনও আত্মগোপনে রয়েছেন। এ অবস্থায় নির্বাচন আর আন্দোলনের ভবিষ্যৎ নিয়ে দলটিতে নানা দুশ্চিন্তা রয়েছে।
এ পরিস্থিতিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিষয়টিও ফের আলোচনায় এসেছে। মঙ্গলবার এক বেসরকারি টিভি চ্যানেলের সাক্ষাৎকারে প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ রেহমান সোবহানের কাছে জানতে চাওয়া হয়, আপনি কি একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের স্বপ্ন দেখেন? জবাবে তিনি বলেন, কেন নয়। অবশ্যই দেখি। এফবিসিসিআই সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদও আরেকটি নির্বাচনের ইঙ্গিত দিয়েছেন। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, সরকারের ওপর আন্তর্জাতিক ও দেশীয় মহল থেকে একটি মধ্যবর্তী নির্বাচনের ব্যাপারে চাপ রয়েছে। যদিও সে চাপ সরকারকে বাধ্য করার মতো কিছু নয়। তবে এর পরও মধ্যবর্তী নির্বাচনের এক ধরনের আলোচনা আছে। জিয়া পরিবার এবং বিএনপি জোটের শতাধিক নেতা নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষিত হলেই এ ধরনের নির্বাচন হতে পারে। খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা বিচারাধীন। এমনকি তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবায়দা রহমানের বিরুদ্ধে মামলা সচলেরও উদ্যোগ নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, সরকার তার আশপাশের সব পথই বন্ধ করতে চায়।
লিখেছেন: সাজেদুল হক

No comments

Powered by Blogger.