বিষের খাদ্য, খাদ্যের বিষ- গুরুতর স্বাস্থ্যবিপদে বাংলাদেশ

(শাকসবজি, চিংড়ি ও শুঁটকিতে ক্ষতিকর মাত্রায় কীটনাশকের অস্তিত্ব পেয়েছে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি)। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি কীটনাশক ব্যবহার করা হচ্ছে শুঁটকিতে। ২০১১ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত দেশের ১২টি জেলার বিভিন্ন বাজার থেকে সংগৃহীত ৪৫৪টি নমুনা পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে বারি এই তথ্য জানিয়েছে। এতে বলা হয়, এখনই ব্যবস্থা না নিলে কীটনাশকের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ হতে পারে।) খাদ্যে বিষের মাত্রার ভয়াবহতা নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি)। গবেষণায় উপস্থাপিত চিত্রটি বিপজ্জনক: শাকসবজি, চিংড়ি ও শুঁটকিতে ক্ষতিকর মাত্রায় কীটনাশক এবং চালে সিসার উপস্থিতি পেয়েছে বারি। এসবের প্রকোপে মৃত্যুর তথ্যও উেল্লখ করা হয়েছে গবেষণাপত্রে। সব মিলিয়ে বিরাট স্বাস্থ্যঝুঁকিতে বাংলাদেশের মানুষ। বারির গবেষণা দেখাচ্ছে, অধিকাংশ সবজিতেই কীটনাশকের অবশেষ রয়ে যাচ্ছে। ফলন ভালো করা এবং পোকামাকড় তাড়ানোর জন্য প্রায় সব চাষেই কীটনাশক ও রাসায়নিক সার দেওয়া হয়। বিপণন পর্যায়েও কৃষিজ খাদ্যে মেশানো হয় নানা রকম রাসায়নিক উপাদান। অধিকাংশ চালের জাতেও মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর সিসার উপস্থিতি মিলেছে। বাজারে চর্ব্য, চূষ্য, লেহ্য হেন উপাদান পাওয়া কঠিন, যেখানে ভেজাল ও বিষাক্ত পদার্থ নেই। গবেষকেরা ক্রমবর্ধমান ক্যানসার, কিডনি ও ফুসফুসের রোগসহ অনেকগুলো স্বাস্থ্যবিপর্যয়ের সঙ্গে অস্বাস্থ্যকর ও বিষাক্ত উপাদানসমৃদ্ধ খাবারকে দায়ী করেন। অনেক ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী ও বিকলাঙ্গ শিশুর জন্মেরও কারণ এসব। মঙ্গলবারের প্রথম আলোয় প্রকাশিত এ-বিষয়ক সংবাদে উল্লেখ আছে, ২০০৯ সালে ধামরাইয়ে তিনজন এবং ২০১৩ সালে দিনাজপুর ও ঠাকুরগাঁওয়ে ১৪ শিশুর মৃত্যুর জন্য দায়ী ছিল খাদ্যে ব্যবহৃত কীটনাশক। দেশে সরকারিভাবে কীটনাশকের ব্যবহার কমানোর প্রচেষ্টা খুবই নগণ্য। বাণিজ্যের প্ররোচনায় ক্ষতিকর হাইব্রিড ও জেনেটিক্যালি মডিফায়েড খাদ্যের প্রচলনও বাড়ানো হচ্ছে। জনস্বাস্থ্যের মতো গুরুতর জাতীয় স্বার্থেই এখন কৃষি ও কৃষককে কীটনাশকের ওপর নির্ভরতা কমানো প্রয়োজন। দেশের কোটি কোটি মানুষকে ধীরে ধীরে খাদ্যবিষের শিকার হওয়ার দিকে ঠেলে দেওয়ার দায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা এড়াতে পারেন না। বিষমুক্ত খাদ্য নিশ্চিত করা বিপুল কর্মযজ্ঞের ব্যাপার। কিন্তু অর্থনীতি ও জীবনের স্বার্থে সরকারকে উদ্যোগী ভূমিকা নিতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.