আবু তাহেরের শ্বাসরুদ্ধকর ৪০ ঘণ্টা by একে আজাদ
বেঁচে
থাকার আশা ছেড়েই দিয়েছিলেন কনটেইনারের মধ্যে আটকে পড়া ট্রাক হেলপার আবু
তাহের (৩২)। ভাগ্যগুণে তিনি জীবিত আছেন। দীর্ঘ ৪০ ঘণ্টা পর মংলা বন্দর জেটি
থেকে মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে উদ্ধার করা হয়েছে। আবু তাহের জানান,
চট্টগ্রামের আনোয়ারায় তার বাড়ি। তার পিতার নাম সাবের হোসেন। গত ২৫শে
ডিসেম্বর মাল খালাস করতে ট্রাকের সাথে তিনি চট্টগ্রাম বন্দর জেটিতে আসেন।
কাজের ফাঁকে ক্লান্ত শরীরে একটি খালী কন্টেইনারের মধ্যে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন
তিনি। এরপর কখন যে ঘুমিয়ে পড়েন তিনি তা টের পাননি। ঘুম ভাঙলে উঠে দেখেন
তিনি কন্টেইনারের মধ্যে বন্দি। অনেক চিৎকার-চেঁচামেচি করেও কোন লাভ হয়নি।
এভাবে কেটে যায় দীর্ঘ প্রায় ৪০ ঘণ্টা। পরে হঠাৎ লোকজনের উপস্থিতি টের পেলে
তিনি আবারও কন্টেইনারের ভিতরে শব্দ করার চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে মংলা বন্দর
জেটিতে কর্মরত শ্রমিকরা কন্টেইনার খুলে মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে উদ্ধার
করেন। হাসপাতালের বেডে শুয়ে তিনি ভাঙা ভাঙা গলায় বলছিলেন এসব কথা। অসুস্থ
থাকায় তিনি বেশি কথা বলতে পারেননি। তবে তার দু’চোখে ছিল বেঁচে থাকার নতুন
স্বপ্ন। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে তিনি বলেন, আল্লাহ্ যে আমাকে বাঁচিয়ে রাখবেন
বুঝতে পারিনি। মংলা বন্দর জেটির নিরাপত্তা কর্মকর্তা মো. জহির জানান,
বৃহস্পতিবার রাত সোয়া ১০টায় জেটিতে কর্মরত শ্রমিকরা কন্টেইনারের মধ্যে শব্দ
শুনতে পেয়ে নিরাপত্তাকর্মীদের খবর দেয়। পরে কন্টেইনারের তালা খুলে
মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করা হয় আবু তাহেরকে। তাকে বন্দর হাসপাতালে চিকিৎসা
দেয়া হচ্ছে। তিনি বর্তমানে আশঙ্কামুক্ত বলে জানান হাসপাতালে কর্তব্যরত ডা.
প্রকাশ। কন্টেইনার হ্যান্ডলিং ঠিকাদার মেসার্স খুলনা ট্রেডার্সের
ম্যানেজার মাসুদ কবীর বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ৩০৯ টি কন্টেইনার নিয়ে
বিদেশী পতাকাবাহী জাহাজ এমভি এলিয়ান এস বৃহস্পতিবার বিকাল ৪ টায় মংলা
বন্দরের জেটিতে ভিড়ে। তার মধ্যে খালি ছিল ৭২টি। জাহাজটি চট্টগ্রাম বন্দর
থেকে ২৫ মার্চ দুপুরে মংলার উদ্দেশে ছেড়ে আসে। রাতে জাহাজ থেকে কন্টেইনার
নামানোর সময় জিইএসইউ ৯১২২৯১ ৯ ৪৫আর১ নামের একটি কন্টেইনারের ভিতর থেকে
চিৎকারের শব্দ আসে। পরে জেটিতে নামানোর পর কন্টেইনারটি খোলা হলে একজন জীবিত
লোক পাওয়া যায়।
No comments