রানা প্লাজা ধসে ৩০% ক্ষতিপূরণ পাচ্ছে ২,৮০০ জন

রানা প্লাজা ধসে আহত ও নিহত শ্রমিক পরিবারের ২,৮০০ জন ৩০ শতাংশ ক্ষতিপূরণ পাচ্ছে। ক্ষতিপূরণের অর্থ পাওয়া নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট পরিবারের সদস্যদের কাছে চিঠি দিয়েছে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) নেতৃত্বাধীন রানা প্লাজা সমন্বয় কমিটি। এবার প্রাপ্য ক্ষতিপূরণের ৩০ শতাংশ অর্থ চলতি মাসের শেষে সবার ব্যাংক হিসাবে চলে যাবে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে। রানা প্লাজা সমন্বয় কমিটি বিষয়টির চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে। এর আগে ক্ষতিপূরণের ৪০ শতাংশ পেয়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা। আইএলও সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। আইএলও বাংলাদেশ অফিসের গণসংযোগ কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মুয়ীদ মানবজমিনকে বলেন, শ্রমিকদের অর্থ পাওয়ার বিষয়টি নির্দিষ্ট কোন সময় নির্ধারণ করা হয়নি। তবে এ মাসেই ব্যাংক অ্যাকাউন্টে চলে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, আইএলও থেকে সব আহত ও নিহত শ্রমিকের পরিবারের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। ওই চিঠিতে কোন শ্রমিক কি পরিমাণ অর্থ পাবে তা জানিয়ে দেয়া হয়েছে। যাতে কোন ঝামেলা না হয়। সূত্র জানায়, ভবনধসে ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনের দাবিনামা বা ক্লেইম ফরম অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ দেয়ার জন্য ৩ কোটি ডলার বা ২৪০ কোটি টাকা প্রয়োজন। তবে রানা প্লাজা ডোনারস ট্রাস্ট ফান্ড নামের আন্তর্জাতিক তহবিলে জমা আছে ২ কোটি ১০ লাখ ডলার। এ অর্থ থেকে গত বছর ৫ কিস্তিতে আহত ও নিহত শ্রমিক পরিবারের ২,৭৭০ জন তাদের প্রাপ্য ক্ষতিপূরণের ৪০ শতাংশ পান। তবে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলের প্রাপ্ত সহায়তা ও এককালীন দেয়া ৫০ হাজার টাকা কর্তন করে রাখা হয়েছিল। আর এবার ক্ষতিপূরণের বাকি ৬০ শতাংশের মধ্যে ৩০ শতাংশ অর্থ দেয়া হচ্ছে। রানা প্লাজা সমন্বয় কমিটি মতে, গত বছর দাবিনামার কাজ সম্পন্ন না হওয়ায় ধাপে ধাপে অর্থ দেয়া হয়েছিল। এবার সেটি হচ্ছে না। সবাই একসঙ্গে পাবেন। সমন্বয় কমিটির তথ্য অনুযায়ী, ইতিমধ্যে দাবিনামা পূরণের কাজ শেষ হয়েছে। রানা প্লাজা ধসে ২,৮৩২ জন আহত, নিহত ও নিখোঁজ শ্রমিক পরিবারের ৫,০২২ জন সদস্য দাবিনামা পূরণ করেন। তাদের মধ্যে নিখোঁজ শ্রমিক আছেন ১৪১ জন। তাদের সবার জন্য পৃথক ব্যাংক হিসাব খোলা হয়েছে। অবশ্য সবাই ক্ষতিপূরণ পাবেন না, কারণ অনেকেই কম আহত হয়েছেন। আবার কেউ কেউ অনেক আগেই পুরোপুরি সুস্থ হয়েছেন। এমনটাই জানিয়েছেন সমন্বয় কমিটির সদস্যরা। তবে এবার ৩০ শতাংশ ক্ষতিপূরণ পাচ্ছেন প্রায় ২,৮০০ জন। এদিকে সব মিলিয়ে ৭০ শতাংশ ক্ষতিপূরণ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হলেও বাকি ৩০ শতাংশের অর্থ প্রাপ্তি নিয়ে অনিশ্চয়তা কাটছেই না। আন্তর্জাতিক তহবিলে এখনও ৯০ লাখ ডলারের ঘাটতি আছে। দীর্ঘদিন ধরেই ক্রেতা ও ব্র্যান্ড তহবিলে কোন অর্থ দিচ্ছে না। তবে গত ফেব্রুয়ারিতে ইতালিভিত্তিক গ্রোবাল ফ্যাশন ব্র্যান্ড বেনেটন ক্ষতিপূরণের অর্থ দিতে সম্মত হয়। এক বিবৃতিতে ব্র্যান্ডটি তখন জানায়, বৈশ্বিকভাবে গ্রহণযোগ্য তৃতীয় পক্ষের একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তারা ক্ষতিপূরণের অর্থ দিতে কাজ করছে। একাধিক শ্রমিক সংগঠনের নেতারা বলছেন, রানা প্লাজা ধসের পর ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের সহায়তার জন্য প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে ১২৭ কোটি টাকার মতো জমা পড়ে। সেখান থেকে চিকিৎসা, অনুদানসহ বিভিন্ন খাতে খরচ হয় মাত্র ২২ কোটি টাকা। সেই তহবিল থেকে এখন ৭২ কোটি টাকা দিলে সহজেই এ ক্ষতিপূরণের বিষয়টির সমাপ্তি টানা যায়। উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ২৪শে এপ্রিল সাভারের রানা প্লাজা ধসে ১,১৩৬ জন শ্রমিক নিহত হন। আহত হন আরও অনেকে। এ ঘটনার পর দেশ-বিদেশে সমালোচনার ঝড় উঠলে আইএলওর নেতৃত্বে রানা প্লাজা সমন্বয় কমিটি গঠিত হয়। এতে বিদেশী ক্রেতা প্রতিষ্ঠান, দেশী-বিদেশী শ্রমিক সংগঠন ও সরকারের প্রতিনিধিরা আছেন।

No comments

Powered by Blogger.