‘প্রাচীন হিন্দুশাস্ত্রে মহাকর্ষ বল ও চাঁদে পানির অস্তিত্বের উল্লেখ ছিল’

স্যার আইজ্যাক নিউটনের ১৫০০ বছর পূর্বেই মহাকর্ষ বল সমপর্কে জানতেন আর্যভট্টের মতো ভারতীয় প্রাচীন জ্যোতির্বিদরা। মহাকর্ষ বলের অস্তিত্ব ও চাঁদে পানি থাকার বিষয়ে ইঙ্গিত ছিল প্রাচীন হিন্দুশাস্ত্র বেদ-এর কিছু শ্লোকেও। এ দাবি করেছেন ভারতের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় বিজ্ঞানী ও ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা আইএসআরও-এর সাবেক চেয়ারম্যান জি মাধভন নায়ার। এ খবর দিয়েছে এনডিটিভি। মর্যাদাবান পদ্মবিভূষণ খেতাব জয়ী ৭১ বছর বয়সী এ বিজ্ঞানী আরও বলেন, ধাতুবিদ্যা, বীজগণিত, জ্যোতির্বিদ্যা, গণিত, স্থাপত্যবিদ্যা ও জ্যোতিষশাস্ত্র সমপর্কে পশ্চিমারা জানার বহু আগেই বেদ সহ অন্যান্য প্রাচীন হিন্দুশাস্ত্রে উল্লেখ ছিল। বেদ সমপর্কিত একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বক্তৃতা দেয়ার সময় মাধবন নায়ার বলেন, বেদে উল্লিখিত ওই তথ্যগুলো ছিল ‘সংক্ষিপ্ত বিন্যাসে’ সজ্জিত। তার মতে, এ কারণে আধুনিক বিজ্ঞানের জন্য এসব গ্রহণ করা কঠিন হয়ে গেছে। তিনি বলেন, বেদের একটি শ্লোকে রয়েছে যে, চাঁদে পানির অস্তিত্ব রয়েছে, কিন্তু কেউই এটি বিশ্বাস করেনি। কিন্তু আমাদের চন্দ্রায়ণ  অভিযানে (ভারতের চাঁদ অনুসন্ধান অভিযান) আমরা পানির অস্তিত্ব প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি। আমরাই ছিলাম প্রথম, যারা এটি আবিষ্কার করতে পেরেছিল। তবে তার মতে, বেদের সবকিছু বোঝা সম্ভব নয়, কেননা এটি শুদ্ধ সংস্কৃত ভাষায় রচিত হয়েছিল। পঞ্চম শতাব্দীর ভারতীয় জ্যোতির্বিদ ও গণিতবিদ আর্যভট্টের বিষয়েও অনেক কিছু বলেছেন মাধবন নায়ার। তিনি বলেন, আমরা সত্যিই আর্যভট্ট ও ভাস্করকে নিয়ে গর্ববোধ করি। তারা গ্রহ সমপর্কিত কাজে ও অন্যান্য গ্রহ আবিষ্কারে প্রচুর অবদান রেখেছিলেন। এটা ছিল চ্যালেঞ্জিং একটি কাজ। তিনি বলেন, চন্দ্রায়ণ অভিযানেও আর্যভট্টের সমীকরণ ব্যবহৃত হয়েছিল। এমনকি নিউটন জানতে পারার ১৫০০ বছর পূর্বেও আমাদের প্রাচীন ধর্মশাস্ত্রে মহাকর্ষীয় ক্ষেত্র সমপর্কে উল্লেখ ছিল। তার দাবি, হারাপ্পা সভ্যতার বিভিন্ন শহর নির্মাণে হিসাব করতে জ্যামিতি ব্যবহৃত হয়েছিল। এছাড়া বৈদিক সময়েও পিথাগোরিয়ান উপপাদ্যসমূহের উল্লেখ ছিল। উল্লেখ্য, এতদিন ধরে বহু বিজেপি নেতা দাবি করে আসছেন, প্রাচীন হিন্দুশাস্ত্র সমূহে প্লাস্টিক সার্জারি ও বায়ুগতিবিদ্যা সহ বহু বৈজ্ঞানিক তথ্যের উল্লেখ ছিল। এবার এ ধরনের নতুন দাবি করলেন নায়ার। তিনি আরও বলেন, মহাকাশবিদ্যা ও পারমাণবিক শক্তি সমপর্কে বহু তথ্য রয়েছে বেদে। আমরা ৬০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত ঠিক ছিলাম। তখন থেকে শুরু করে স্বাধীনতাপ্রাপ্তি পর্যন্ত বহিরাক্রমণ চলে আমাদের ওপর। তবে আমাদের স্বাধীনতার পর থেকে আমরা সমৃদ্ধ হচ্ছি। আমরা শান্তিপূর্ণ কাজে ব্যবহারের জন্য পরমাণু পাঠোদ্ধার করেছি। আরও অনেক প্রাচীন হিন্দুশাস্ত্রে বৈজ্ঞানিক তথ্য থাকার কথা উল্লেখ করে নায়ার বলেন, এসব হচ্ছে সেসব মৌলিক বিষয়, যা সমপর্কে পশ্চিমাদের কোন ধারণাই ছিল না। তবে এ তথ্যগুলো সংক্ষিপ্ত হওয়ায় আধুনিক বিজ্ঞান এসব মেনে নিতে রাজি নয়। এছাড়া বেদ পড়তে হলে, একজনকে অবশ্যই সংস্কৃত ভাষা জানতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.