সৌদিতে শ্রমিক পাঠানোর ঘোষণায় কক্সবাজারে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ বেড়েছে

প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সার্কুলার জারি করে বলেছে, সৌদি আরবে এক লাখ ২০ হাজার এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতে দুই হাজার নারী শ্রমিক নিয়োগ করা হবে। এমন ঘোষণার কারণে হঠাৎ করেই কক্সবাজারের বিভিন্ন এলাকা দিয়ে মিয়ানমারের নাগরিকদের (রোহিঙ্গা) অনুপ্রবেশ বেড়ে গেছে। বিষয়টি জানিয়ে গত ১৬ই মার্চ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবকে একটি চিঠি দিয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) অপারেশন ও প্রশিক্ষণ শাখা। চিঠিতে তারা বলেছে, বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত দিয়ে (বিশেষ করে কক্সবাজারের কাকড়া ব্রিজ, বালুখালী পান বাজার, বেতবুনিয়া বাজার, লাম্বাবিল, মোচনী কেওড়া বাগান, ২ নম্বর স্লুইস গেইট ইত্যাদি) মিয়ানমার নাগরিকদের (রোহিঙ্গা) বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ অনেকাংশে বেড়ে গেছে। বিজিবি সূত্রে জানা গেছে, গত ছয় মাসের অনুপ্রবেশের হার পর্যালোচনা করে দেখা যায়, এ বছরের জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি ও মার্চে অনুপ্রবেশকারীর হার অনেক বেশি। এর মধ্যে ২০১৪ সালের অক্টোবরে ৩৬৩ জন, নভেম্বরে ৪৭৬ জন, ডিসেম্বরে ৫৮৩ জন, এ বছরের জানুয়ারিতে ৭৩৮ জন, ফেব্রুয়ারিতে ১২১৬ জন এবং মার্চে (১০ই মার্চ পর্যন্ত) ৫৮৩ জন মিয়ানমারের নাগরিক বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে। এদের মধ্যে প্রায় সবাইকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হয়েছে। রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের হার বেড়ে যাওয়ার কারণ অনুসন্ধানে বিজিবি চিঠিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে মিয়ানমারের নাগরিক (রোহিঙ্গা) অনুপ্রবেশে সহায়তাকারীরা ফেব্রুয়ারী মাসের লোভনীয় ঘোষণা পাওয়ার পর মিয়ানমার থেকে বিভিন্নভাবে রোহিঙ্গাদের বিদেশে বিশেষ করে সৌদি আরবে পাঠানোর উদ্দেশ্যে অবৈধভাবে বাংলাদেশে নিয়ে আসছে। অপরদিকে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ প্রশাসনের লোকজনও এই সুযোগে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে পুশ-ইন করছে বলে জানা গেছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে সমুদ্রপথে মালয়েশিয়া যাওয়ার জন্য অনেক উৎসুক রোহিঙ্গা বাংলাদেশী  দালালের মাধ্যমে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ  
করছে। বাংলাদেশে এসব চক্র রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে এনে জাতীয় পরিচয়পত্র এবং পাসপোর্ট তৈরির মাধ্যমে সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং সৌদি আরবে পাঠানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। চিঠিতে আশঙ্কা প্রকাশ করে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে নানা ধরনের সমস্যা তৈরি হবে। সমস্যা উল্লেখ করে চিঠিতে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গারা গণহারে এদেশে আসতে থাকলে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত এলাকাসহ কক্সবাজারে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বেড়ে যাবে। এটা সার্বিক নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ। পাশাপাশি অনৈতিক কার্যকলাপ ও ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদক পণ্যের চোরাচালান বেড়ে যাবে। তাদের যত্রতত্র বসবাস ও বনজঙ্গল ধ্বংসের কারণে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হবে। অনুপ্রবেশকারীরা জীবিকা নির্বাহের জন্য চুরি, ডাকাতি এমনকি পতিতাবৃত্তির মতো অসামাজিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়ে আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটাতে পারে। বিজিবি সূত্রে জানা গেছে, এসব নানা বিষয় বিবেচনা করে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সীমান্তে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। একই সঙ্গে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহায়তায় সচেতনতামূলক বিভিন্ন আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হচ্ছে।

No comments

Powered by Blogger.