বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা বন্ধে চাপ বাড়ছে -বিবিসির প্রতিবেদন

বাংলাদেশে চলমান রাজনৈতিক সহিংসতা বন্ধে সরকার ও বিরোধী দলকে আলোচনায় বসতে আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ছে। কিন্তু স্বজন হারানো কিছু পরিবারের জন্য তা ইতিমধ্যে অনেক দেরি হয়ে গেছে। এ বছরের শুরু থেকে এ পর্যন্ত রাজনৈতিক অস্থিরতায় কমপক্ষে ১০০ জন মারা গেছেন। আহত হয়েছেন কয়েক শ’ মানুষ। বিবিসির এক প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়। প্রতিবেদনের শুরুতে পেট্রলবোমা হামলার শিকার এক বাংলাদেশী নুরুজ্জামান ও তার পরিবারের ঘটনা তুলে ধরা হয়। যে বাসে চড়ে তারা বাড়ি ফিরছিলেন তা আর গন্তব্যে পৌঁছায়নি। বাসটি পেট্রলবোমা হামলার শিকার হয়। নুরুজ্জামানের মা নুরুন নাহার বলেন, ভোরের দিকে একটা ফোন আসে। আমার পুত্রবধূ ফোনে আমাকে জানায়, ‘আমার ছেলে আর নাতনী পেট্রলবোমা হামলায় নিহত হয়েছে। তিনি আরও বলেন, মানুষ এখানে অনিশ্চয়তায় দিনাতিপাত করছে। আপনি বাসা থেকে বের হলে কোন নিশ্চয়তা নেই যে, নিরাপদে ফিরে আসবেন।’ এমন দুর্দশা শুধু নুরুজ্জামানের পরিবারের নয়। জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া সহিংসতায় নিহত ও আহতদের বেশির ভাগই বাসে, ট্রাকে পেট্রলবোমা হামলা শিকার। সহিংস পরিস্থিতি ছড়িয়ে দেয়া এ সঙ্কটের মূলে রয়েছে সরকার ও বিরোধীদের মধ্যকার রাজনৈতিক বিরোধ। বিরোধী বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল, বিএনপি গতবছরের নির্বাচন বর্জন করে। তারা অবাধ ভোটের সুযোগ না দেয়ার অভিযোগ আনে সরকারের বিরুদ্ধে। জানুয়ারি মাসে তারা প্রতিবাদ কর্মসূচির ডাক দেয়। কিন্তু সহিংস হামলার পেছনে তাদের সম্পৃক্ততা অস্বীকার করেছে। জানুয়ারির  পর থেকে বিভিন্ন শহরে সহিংসতা বৃদ্ধি পেয়েছে। বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া বলেন, এখানে কোন গণতান্ত্রিক সুযোগ নেই। আমরা কোন সমাবেশ বা অন্য কোন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড আয়োজন করতে পারি না। এ কারণে আমরা অবরোধের ডাক দিয়েছি। কিন্তু আমরা এটা শান্তিপূর্ণভাবে পালন করতে চাই। এসব পেট্রলবোমা হামলা কারা চালাচ্ছে আমরা তা জানি না।  আমাদের সমর্থকরা এতে জড়িত নয়। আমাদের সম্পৃক্ততা কেউই প্রমাণ করতে পারবে না। বিরোধী দল আরও বলেছে যে, তাদের কয়েক ডজন সমর্থক প্রতিবাদ কর্মসূচিতে মারা গেছে। তারা পুলিশের বিরুদ্ধে কঠোর দমনপীড়ন নীতি অবলম্বনের অভিযোগ এনেছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ বলছে, পুলিশ শুধু তাদের দায়িত্ব পালন করছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী  লীগ নেতা নুহ-উল-আলম লেনিন, বিরোধীদের ডাকা এ অবরোধে জনগণের কোন সমর্থন নেই বলে দাবি করেছেন। তিনি বলেছেন, আমরা এর বিরুদ্ধে জনগণকে একত্রিত করছি। মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আমাদের দায়িত্ব। দেশে যারা নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে চায় প্রয়োজনে আমরা তাদের বিরুদ্ধে আরও কঠোর হবো। প্রতিবেদনের শেষে বলা হয়, বাংলাদেশের গণতন্ত্র দুর্বল আর রাজনৈতিক বিভক্তি গভীরে প্রোথিত। সেইসঙ্গে দেশটির দীর্ঘ সামরিক শাসনের ইতিহাস রয়েছে। বর্তমানে ক্রমবর্ধমান মৃত্যুর ঘটনায় উদ্বিগ্ন পশ্চিমা শক্তিগুলো। তারা উভয় পক্ষকে আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত এসব আহ্বান অরণ্যে রোদন বলেই প্রতীয়মান হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.