শহরের দিকে ধেয়ে আসছে পদ্মা by আবুল কালাম মুহম্মদ আজাদ

রাজশাহী নগরের বুলনপুর এলাকায় টুবি স্পার ও ৩ নম্বর গ্রোয়েনের মাঝে ভেঙে
এভাবেই শহরে ঢুকে পড়েছে পদ্মা। গতকাল দুপুরে তোলা ছবি l প্রথম আলো
ক্ষতিগ্রস্ত গ্রোয়েন ও স্পার মেরামত হয়নি, বর্ষার আগেই এগুলো মেরামতের দাবি
রাজশাহী শহরের টি-গ্রোয়েনের দক্ষিণ পাশে গত বছরও ছিল বাবলা আর ঘন নলখাগড়ার বন। ছিল ফুচকার দোকান। রোজ বিকেলে দেখা যেত দর্শনার্থীদের ভিড়। চলত আড্ডা। কিন্তু আজ সেখান দিয়ে বয়ে যাচ্ছে পদ্মা নদীর মূল ধারা।
দুই বছর আগেও এই ধারাটি ছিল প্রায় পাঁচ কিলোমিটার পশ্চিমে পবার নবগঙ্গা এলাকায়। সেখান থেকে শহরকে চার কিলোমিটার বাঁয়ে রেখে দক্ষিণ দিক দিয়ে প্রবাহিত হত পদ্মা। এখন নগরের গা ঘেঁষে বয়ে যাচ্ছে নদী। ইতিমধ্যে শ্রীরামপুর এলাকার টি-গ্রোয়েন পার হয়ে এসেছে। প্রবল স্রোতের কারণে ৩ ও ৫ নম্বর গ্রোয়েন এবং বুলনপুর এলাকার ‘টুবি স্পার’ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আগামী বর্ষার আগেই এগুলো মেরামত করতে না পারলে রাজশাহী শহর হুমকির মুখে পড়তে পারে বলে স্থানীয় লোকদের আশঙ্কা।
রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) এক প্রকৌশলীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাঁদের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রোয়েন ও স্পার মেরামত এবং নগরের পাঁচ কিলোমিটার এলাকার প্রতিরক্ষাকাজের জন্য ২৩০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে, কিন্তু তা এখনো অনুমোদিত হয়নি। গত দুই বছরে পাউবো প্রতিরক্ষা কাজের জন্য কোনো প্রকল্প পাস করাতে পারেনি। শুধু বর্ষায় ভাঙন শুরু হলে জরুরি রক্ষণাবেক্ষণের কাজে ব্যয় করছে।
ওই প্রকৌশলী আরও জানান, পদ্মার দক্ষিণ তীরে (শহরের ঠিক বিপরীত দিকে) জরুরি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ২ কোটি ৮৪ লাখ টাকা ব্যয় করা হয়েছে। এই বিপুল অর্থ ব্যয় করেও দক্ষিণ তীরের চরখিদিরপুর ও খানপুর বিজিবি ক্যাম্প এবং খিদিরপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়টি সরিয়ে নিতে হয়েছে। রক্ষণাবেক্ষণ কোনো কাজে আসেনি। একইভাবে বাঁ তীরে বুলনপুর এলাকার ৩ নম্বর গ্রোয়েনের পূর্ব ও পশ্চিম পাশে গত বছর বর্ষার সময় তীব্র ভাঙন দেখা দেয়। জরুরিভাবে এই ভাঙন মোকাবিলার জন্য ১ কোটি ৬৫ লাখ টাকা ব্যয় করা হয়। গতবার অল্পের জন্য রক্ষা পায় একটি পাকা কবরস্থান ও জিয়ানগর এলাকার বাড়িঘর।
স্থানীয় ব্যক্তিরা বলছেন, শুধু জরুরি মুহূর্তে এসব কাজ করতে গিয়ে সরকারের অর্থই অপচয় হচ্ছে। এই টাকা মানুষের কোনো কাজে আসছে না।
গতকাল রোববার বুলনপুর এলাকায় অবস্থিত ‘টুবি স্পার’-এর কাছে গিয়ে দেখা যায়, এটি একেবারে জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। পানির তোড়ে মাথা ভেঙে গেছে। এলোমেলো হয়ে আছে ইট খুলে। চারদিকে ইটের স্তূপ। যেকোনো সময় পানির তোড়ে ভেসে যেতে পারে এগুলো।
স্পারের পশ্চিম পাশে কিছু পাথর ফেলে গতবার স্পারটিকে কোনো রকমে বাঁচানো গেছে। এবার এটির অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। গৃহবধূ আশরাফুন নাহার (৫৫) এই এলাকায় আছেন ৩০ বছর ধরে। তিনি বলেন, অনেক দিন আগে এই এলাকার বাড়িঘর ভেঙে নদী সরে এসেছিল। তারপর আবার চার-পাঁচ কিলোমিটার দূরে চলে যায়। কিন্তু এবার আবার নদী কাছে আসাতে ভয় লাগছে।
নগরের শ্রীরামপুর এলাকায় অবস্থিত টি-গ্রোয়েনের বিপরীতে যেখানে বাবলা ও নলখাগড়ার বন ছিল, সেই পর্যন্ত নদী এসে গেছে। এক বছরের মাথায় এখানে পদ্মার মূল প্রবাহটি দক্ষিণ দিকে মোড় নিয়েছে। নদীর এই মোহনাটি গত বছরও এর প্রায় ৫০০ মিটার পশ্চিমে রাজশাহী পুলিশ লাইন গেটের পাশে ছিল। প্রতিবছর এটি সরে আসছে।
টি-গ্রোয়েনের পাশে একটি বাড়ির গৃহবধূ রিজিয়া বেগম (৫০) বলেন, এই গ্রোয়েন ভাঙলে শহরই ভেসে যাবে।
জানতে চাইলে রাজশাহী পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী হারুন অর রশিদ প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা তিন বছরে বাস্তবায়নযোগ্য একটি প্রকল্প জমা দিয়েছেন। বর্তমানে এটি পরিকল্পনা কমিশনে আছে। দ্রুত প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য ঢাকায় জেলা প্রশাসকদের সম্মেলনে তুলে ধরা হবে।

No comments

Powered by Blogger.