পাহাড়ি জেলাগুলোতে সরকারি চাকরিজীবীদের কাছে চাঁদা চেয়ে চিঠি

চাঁদাবাজি বেড়ে গেছে পাহাড়ি জেলাগুলোতে। এসব জেলায় উপজাতিভিত্তিক আঞ্চলিক সংগঠনগুলো এসব অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছে। তারা পাহাড়ি জেলায় কর্মরত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছে মাসিক একটি নির্ধারিত অঙ্ক জমা দেয়ার অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দিচ্ছে। গেল সপ্তাহে বিষয়টি জানিয়ে দেশের এক শীর্ষ গোয়েন্দা সংস্থা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে। ওই চিঠির সঙ্গে চাঁদাবাজির চিঠি যোগ করে দেয়া হয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থার চিঠিতে বলা হয়েছে, সম্প্রতি ইউপিডিএফ’র পক্ষ হতে খাগড়াছড়ি জেলাধীন পানছড়ি উপজেলার সকলস্তরের চাকরিজীবীদের কাছে চাঁদা দেয়ার জন্য নোটিশ দেয়া হয়েছে। গত ৫ই ডিসেম্বর ইউপিডিএফ-এর নেতা মাইকেল চাকমা স্বাক্ষরিত এ ধরনের একটি চিঠি পানছড়ি উপজেলার চাকরিজীবীদের কাছে পাঠানো হয়। ওই চিঠি অনুযায়ী চাকরিজীবীদের মাসিক বেতনের ২% করে ১২ মাসের টাকা এক সঙ্গে হিসাব করে বছরের শুরুতেই চিঠিতে দেয়া মোবাইল নম্বর ০১৫৫৯৭৯২৩৮৮ পাঠানোর জন্য নির্দেশ দেয়া হয়। এ ছাড়া ১ম শ্রেণীর কর্মকর্তাদের বেতনের ৩% টাকা দেয়ার জন্য বলা হয়। একই ধারাবাহিকতায় ইউপিডিএফ এবং জেএসএস (সংস্কারবাদী), মহালছড়ি উপজেলা শাখা কর্তৃক মহালছড়ি বাজারের ছোট-বড় প্রায় ৩০০টি দোকান থেকে বার্ষিক চাঁদা আদায় শুরু করা হয়েছে। উল্লেখ্য, প্রত্যেক দোকানদারকে উভয় সংগঠনকেই চাঁদা দিতে হয় বলে জানা যায়। চাঁদার পরিমাণ উল্লেখপূর্বক কুপনের পেছনে কত তারিখের মধ্যে তা পরিশোধ করতে হবে, তা লিখে দিয়ে কুপনটি ব্যবসায়ীদের নিকট পৌঁছে দেয়া হয়। এ ছাড়াও গত ১৯শে জানুয়ারি মহালছড়ি উপজেলায় জেএসএস (সংস্কারবাদী)-এর সন্ত্রাসী নয়ন চাকমা কর্তৃক স্থানীয় পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের ২২ জন (৬ জন বাঙালিসহ) শিক্ষকের কাছে এক হাজার টাকা করে বাৎসরিক চাঁদা দাবির প্রতিবাদে ওই স্কুলের ৬ জন বাঙালি শিক্ষক শিক্ষাদান থেকে বিরত থাকে। তবে বাকি ১৬ জন উপজাতি শিক্ষক ১৬ (ষোল) হাজার টাকা চাঁদা দেয় বলে জানা যায়। গোয়েন্দা সংস্থার চিঠিতে বলা হয়েছে, সাধারণ বছরের শুরুতেই উপজাতীয় সশস্ত্র সংগঠনগুলো প্রতিটি খাত থেকে চাঁদার হার নতুন করে বর্ধিত হারে নিরুপণপূর্বক এ ধরনের রিসিট বা চিঠি বিতরণ করে থাকে। উপজাতি-বাঙালি উভয় সম্প্রদায়ই চাঁদাবাজির শিকার হচ্ছে। শীর্ষ গোয়েন্দা সংস্থাটি তাদের মতামতে বলেছে, এ ধরনের চাঁদা দেয়ার জন্য আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলগুলো তাদের সশস্ত্র শাখার মাধ্যমে স্থানীয় বিভিন্ন শ্রেণী বা পেশার লোককে বাধ্য করে থাকে যা সার্বিকভাবে পার্বত্য এলাকার শান্তি প্রতিষ্ঠা কার্যক্রম ব্যাহত করছে। এ অবস্থায় সাধারণ জনগণকে চাঁদা প্রদানের নিরুৎসাহিত করতে সামাজিক যোগাযোগ বৃদ্ধি এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসমূহকে সম্মিলিতভাবে কাজ করার জন্য উদ্যোগ নেয়া যায়। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, গোয়েন্দা সংস্থাটির অবগতি ও সুপারিশের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সহসাই এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলোকে চিঠি দেবে।

No comments

Powered by Blogger.