বিজেএমসির লোকসানি পাটকল

বাংলাদেশ জুট মিলস কর্পোরেশনের (বিজেএমসি) আওতাধীন মিলগুলোর অব্যাহত লোকসানের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। প্রতিষ্ঠানগুলোকে লাভজনক করতে ব্যালেন্সিং মডার্নাইজেশন রেনোভেশন অ্যান্ড এক্সপেনশন (বিএমআরই) প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়নের তাগিদ দেয়া হয়েছে। কথায় আছে, সরকারি মাল দরিয়ামে ঢাল। অর্থাৎ জিনিসটা যদি হয় রাষ্ট্রের, তাহলে সেটা দরিয়ার জলে ভাসিয়ে দিতে কোনো সমস্যা নেই। যুগ যুগ ধরে লোকসমাজে প্রচলিত প্রবাদ-প্রবচনগুলো যে এখনও আমাদের জন্য প্রাসঙ্গিক, তার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে বিজেএমসির আওতাধীন মিলগুলোর কর্মকাণ্ডে। এ স্বল্প সম্পদের দেশে দিনের পর দিন ভর্তুকি দিয়ে প্রতিষ্ঠান চালানো গরিবের হাতি পোষার শামিল। অথচ এদিকে ভ্রুক্ষেপ করার কোনো প্রয়োজন মনে করছে না সংশ্লিষ্টরা, এটি দুঃখজনক। শুধু বিজেএমসির নিয়ন্ত্রণাধীন মিলগুলোই নয়, অধিকাংশ রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানই লোকসানে চলছে। এসব প্রতিষ্ঠানের কাঁধে বিপুল অংকের দায়-দেনাও রয়েছে। অপরিমেয় লোকসানের কারণে সরকার বা কর্পোরেশনের পক্ষে সেগুলো পরিচালনা করা অসম্ভব হয়ে পড়াই স্বাভাবিক। লোকসানের বোঝা টানতে গিয়ে বাড়তি চাপ পড়ছে জাতীয় বাজেটের ওপর।
দেশে এমনিতেই কর্মসংস্থানের সুযোগ সীমিত। ক্রমাগত লোকসানের মুখে এসব প্রতিষ্ঠান চিরতরে বন্ধ হয়ে গেলে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র আরও সংকুচিত হয়ে পড়বে, যা বলাই বাহুল্য। তাই এমন পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত যাতে নিভে যাওয়া কিংবা নিভু নিভু প্রদীপ প্রাণ ফিরে পেয়ে পূর্ণ আলোয় উদ্ভাসিত হয়। কোনো প্রতিষ্ঠান লোকসানি হওয়ার পেছনে নানা কারণ থাকে। এর মধ্যে মাথাভারি প্রশাসন ও দুর্নীতি অন্যতম। বিজেএমসির আওতাভুক্ত মিলগুলোয় নতুন প্রাণের সঞ্চার করতে হলে এদিকটায় মনোযোগ দেয়া জরুরি। বস্তুত সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোয় ক্ষমতার অপব্যবহার, ভুয়া বিল-ভাউচারসহ অন্যান্য আর্থিক দুর্নীতি স্বাভাবিক নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতে কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী সম্পদের পাহাড় গড়ে তুললেও রাষ্ট্র ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। দেশ থেকে দুর্নীতির জঞ্জাল দূর করতে দুর্নীতি দমন কমিশনকে শতভাগ কার্যকর করা প্রয়োজন। পাশাপাশি দুর্নীতির বিরুদ্ধে জনসচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। সরকার বিজেএমসির লোকসানি মিলগুলোকে লাভজনক করতে দ্রুত পদক্ষেপ নেবে- এটাই প্রত্যাশা।

No comments

Powered by Blogger.