বন্দুকযুদ্ধে মৃত্যু

মৃত্যুর চেয়ে কঠিন হচ্ছে জীবন। কেননা দুঃখ-কষ্ট বিপদ-আপদ কেবল জীবনেই ভোগ করতে হয়। আর মৃত্যু তা থেকে মুক্তি দেয়। এই চিরন্তন বাণীর মর্ম উপলব্ধি করতে পারছেন বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন পেট্রলবোমার নাশকতায় অগ্নিদগ্ধ নিরীহ মানুষ। তাদের দগ্ধ যন্ত্রণার অনুভূতি ও বীভৎস মুখচ্ছবি দেখে মানুষ আঁতকে উঠলেও পরিবর্তন আসছে না নাশকতাকারীদের মনে। এ বাস্তবতায় নাশকতাকারীদের দমন করতে গিয়ে বন্দুকযুদ্ধের ঘটনায় তৈরি হচ্ছে আরেক বিয়োগান্ত অধ্যায়ের। বার্ন ইউনিটে যেমন জ্বলছে সাধারণ মানুষ- যারা রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নয়, রাজনীতি বোঝে না, জীবন-জীবিকার স্বার্থে পথে বেরিয়ে হচ্ছে বর্বরতার শিকার- তেমনি বন্দুকযুদ্ধের শিকার হচ্ছে অরাজনৈতিক মানুষ। একটি সংবাদপত্রে বলা হয়েছে, কথিত বন্দুকযুদ্ধে গুলিবিদ্ধ ১৫ জনের ৯ জনই অরাজনৈতিক ব্যক্তি। অর্থাৎ দেশের সাধারণ মানুষকে শাঁখের করাতের মতো কাটছে বিদ্যমান অপরাজনীতি। আমি হিন্দু, শিবির নই- একথা বলেও রেহাই মিলছে না সাধারণ মানুষের। ভুল রাজনীতির পাতা ফাঁদে এভাবেই প্রাণ হারাচ্ছে মানুষ। সন্ত্রাসীর কোনো জাত নেই, কোনোভাবেই সন্ত্রাসীদের প্রশ্রয় দেয়া যাবে না। কিন্তু সন্ত্রাস দমন এবং সন্ত্রাসীকে আটক করতে গিয়ে যেন কোনোভাবেই রাষ্ট্রের নিরীহ মানুষ ভুলের শিকার হয়ে প্রাণ না হারায় সেজন্য সতর্ক থাকতে হবে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীকে।
বৃহস্পতিবার যুগান্তরে যশোরের মনিরামপুরে বন্দুকযুদ্ধে দুই বিএনপি কর্মী নিহত হওয়ার খবর প্রকাশিত হয়েছে। এ নিয়ে ১৫ দিনে মনিরামপুরের বেগারিতলায় বন্দুকযুদ্ধ ও ট্রাকচাপায় ছয় বিএনপি ও জামায়াত কর্মী নিহত হয়েছে। পুলিশ ও নিহতের স্বজনদের দাবি পরস্পরবিরোধী। পুলিশ বলছে, তারা বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে আর স্বজনরা জানিয়েছেন, মঙ্গলবার পুলিশ ছয়জনকে ধরে নিয়ে যায়, চারজনকে ছেড়ে দেয়, দুজন পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছে। একটা কথা সবার স্মরণ রাখা প্রয়োজন, প্রত্যেক মানুষের জীবনই মূল্যবান। বার্ন ইউনিটে দগ্ধ মানুষ, যাদের অনেকেই মারা যাচ্ছেন, আর কথিত বন্দুকযুদ্ধ ও ট্রাকচাপায় মানুষের মৃত্যু- কোনোটিই গ্রহণযোগ্য নয়। তাদের মৃত্যু যেন আমাদের বেঁচে থাকাকে তিরস্কার না করে। আমরা মানুষ হননের এই শাঁখের করাত রাজনীতির অবসান চাই। আর চাই স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি।

No comments

Powered by Blogger.