নাগরিকদের জানমালের নিরাপত্তা দিন

বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে গেছে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের একটি প্রতিনিধিদল। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ওপর খুন গুম ক্রসফায়ার ও মতপ্রকাশের করুণ দশা তারা স্বচক্ষে দেখেছেন। বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়কে ঘিরে যে অমানবিক আচরণ রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে করা হচ্ছে তাও তারা সরেজমিনে দেখেছেন। স্পিকার, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী, আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধিদল, মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান এবং নাগরিক সমাজের বিভিন্ন প্রতিনিধিদলের সাথে বৈঠক করে দেশে মানবাধিকার বিপর্যয় বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তারা। আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ এবং বেআইনি কার্যক্রমের বিষয় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে স্পষ্ট হয়ে গেছে। নাগরিকদের জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে আর কত দিন নিষ্ঠুরতা চলবে এখন এটাই প্রশ্ন সবার মনে। বাংলাদেশে বেআইনিভাবে মানুষের জানমালের ওপর আক্রমণ হচ্ছে এ ধরনের জোরালো অভিযোগের পর ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রতিনিধিদল পাঁচ দিনের এ সফর করল। উদ্বেগ জানানোর পাশাপাশি এক বিবৃতিতে তারা বলেছেন, ২০২১ সালের মধ্যে মধ্য আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার ঘোষিত লক্ষ্য অর্জনে বাংলাদেশকে অবশ্যই মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের ওপর শ্রদ্ধাশীল থাকতে হবে। রাজনৈতিক অচলাবস্থাকে কেন্দ্র করে দেশে মানবাধিকার অধিক হারে লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের অনেক উন্নয়ন প্রকল্প বাংলাদেশে বাস্তবায়নাধীন। এসব প্রকল্পের সফল বাস্তবায়নের জন্য তাদের সাথে সুসম্পর্ক দরকার। তাদের সাথে সম্পর্কের গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি হচ্ছে মানবাধিকার ও গণতন্ত্র। এখন এ দু’টি বিপন্ন হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আহ্বান উপেক্ষিত হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকে অসাধুতার আশ্রয় নেয়া হচ্ছে। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তাদের সাথে বৈঠকের পর জানান, মানবাধিকার নিয়ে ইইউ পার্লামেন্ট কোনো উদ্বেগ জানায়নি। এই অসত্য বক্তব্য নিয়ে তারা অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। তারা জানান, মানবাধিকারের অবনতির বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করাই এ সফরের লক্ষ্য। বাংলাদেশের মানবাধিকার কমিশনের প্রশ্নবিদ্ধ অবস্থানও তাদের চোখে ধরা পড়ে। মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান সন্ত্রাস ও সহিংসতা বন্ধের বিষয়ে জোর দেন। প্রতিনিধিদল এ সময় গণহারে আটকের বিষয়টি তার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। মানবাধিকারের জন্য সৃষ্ট প্রতিষ্ঠানটি অনেক ক্ষেত্রে সরকারের সমান্তরাল অবস্থানে চলছে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের মৌলিক অধিকার কতটা নাজুক হতে পারে তা এ প্রতিনিধিরা অনুমান করতে পেরেছেন।
মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য সরকারের বিরুদ্ধে দীর্ঘ দিনের অভিযোগ। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার গ্রুপগুলো অব্যাহতভাবে বিষয়টি সরকারকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছে। রাজনৈতিক অচলাবস্থায় এ পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। অন্যদের মতো ইউরোপীয় পার্লামেন্ট সরকারকে একই বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়ে গেল। জনসাধারণের মৌলিক মানবিক অধিকার ফিরিয়ে জনজীবনে শান্তি ও স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে পারে সরকার। অন্য দিকে আগের মতোই যদি একগুঁয়েভাবে অগ্রসর হতে থাকে তার পরিণতি কারো জন্য ভালো হবে না।

No comments

Powered by Blogger.