আট দিন পর মারা গেলেন দগ্ধ ট্রাক চালক জাহিদ

‘আমারে তুমি কার কাছে রাইখা গ্যালা’, অহন আমি পোলাডারে নিয়া কেমনে বাঁচুম’। স্বামীর পোড়া দেহ আঁকড়ে ধরে এভাবেই আহাজারি করছিলেন মধ্যবয়সী জাকিয়া আক্তার। তার আহাজারিতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে সৃষ্টি হয় এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের। মায়ের পাশে দাঁড়িয়ে এ সময় বাকরুদ্ধ একমাত্র সন্তান জিদান। চিকিৎসকদের প্রাণান্তকর চেষ্টা বিফল করে আট দিন চিকিসাধীন থেকে শুক্রবার সকালে মারা যান নরসিংদীর পলাশে অবরোধের মধ্যে পেট্রলবোমায় দগ্ধ জাহিদ হোসেন (৫০)। শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে তার মৃত্যু হয়। রাত ৯টায় চাঁদপুরের আলিমপাড়ায় তার লাশ দাফন করা হয়।
নিহতের স্বজনরা বলেছেন, ১২ ফেব্রুয়ারি রাত ৮টার দিকে ঘোড়াশালের প্রাণ কোম্পানির ফ্যাক্টরি থেকে পণ্য নিয়ে একটি ট্রাক নরসিংদীর পাঁচদোনায় যাচ্ছিল। ট্রাকটি সদর উপজেলার ভাটপাড়া সাকুরার মোড় এলাকায় পৌঁছলে রাস্তার দুই পাশ থেকে দুর্বৃত্তরা ট্রাকটিতে পেট্রলবোমা নিক্ষেপ করে। আগুন দ্রুত পুরো গাড়িতে ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় ট্রাকচালক জাহিদ মিয়া (৫০), হেলপার সেলিম মিয়া (৪০) ও প্রাণ কোম্পানির নিরাপত্তা কর্মী জুয়েল মিয়া (৩০) আগুনে দগ্ধ হন। খবর পেয়ে দমকল বাহিনীর কর্মীরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। পরে স্থানীয়রা দগ্ধদের উদ্ধার করে নরসিংদী জেলা হাসপাতালে ভর্তি করেন। অবস্থার অবনতি হলে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে আহত চালককে ঢাকায় প্রেরণ করা হয়েছে। নিহত জাহিদের বাড়ি চাঁদপুর শহরের আলিমপাড়া এলাকায়। তার বাবার নাম ওয়াসিন আহমেদ। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের আবাসিক চিকিৎসক পার্থ শঙ্কর পাল জানান, আগুনে জাহিদের শরীরের ৪০ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল। এছাড়া তার শ্বাসনালি মারাÍক ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
৫ জানুয়ারি থেকে বিএনপি জোটের টানা অবরোধে প্রায় প্রতিদিনই নাশকতার ঘটনা ঘটছে। এ পর্যন্ত পেট্রলবোমা ও ককটেল হামলায় নিহত হয়েছেন অন্তত ৫৬ জন। এসব ঘটনায় আহত হয়েছেন কয়েকশ’ ব্যক্তি।

No comments

Powered by Blogger.