চিকিৎসায় অবহেলা রাস্তায় বাচ্চা প্রসব প্রসূতির by আবু হেনা মোস্তফা কামাল

চিকিৎসা অবহেলার কারণে ফরিদগঞ্জে এক প্রসূতি মায়ের প্রসব হয়েছে রাস্তায়। এর আগে চিকিৎসক ও ধাত্রী’র হয়রানির শিকার হয়েছেন ওই প্রসূতি। তাকে নিয়ে তার নিকটাত্ময়ীরা ছুটেছেন এক ক্লিনিক থেকে অন্য ক্লিনিকে। প্রাইভেট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদের দূর দূর করে তাড়া করেছে গভীর রাত পর্যন্ত। অমানবিক আচরণসহ সিজারিয়ান অপারেশনের পরামর্শও দেয়া হয়েছিল তাকে। ভূক্তভোগী ওই নারীর স্বামী রিয়াদ হোসেন সোমবার বিকালে ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এ নির্যাতনের বিচার চেয়েছেন।

সংবাদ সম্মেলন লিখিত বক্তব্যে রিয়াদ হোসেন বলেন, শনিবার সকাল ১০ টায় তার স্ত্রী পারভীন সুলতানার প্রসব বেদনা উঠে। তিনি তাকে নিয়ে যান ডা. পরেশ চন্দ্র পাল এর স্ত্রী পেশাদার ধাত্রী রঞ্জু রাণী পালের বাসায়। রঞ্জু রাণী তার কিছু পরীক্ষা নীরিক্ষা করে অপেক্ষা করতে থাকেন। এক পর্যায়ে রোগীর পানি ভাংতে থাকে। তা দেখে রঞ্জু রাণী প্রসূতীর পেটে দড়ি বাঁধেন। এ সময় তিনি যানতে চান এখানে আসার আগে অন্য ডাক্তার দেখানো হয়েছে কিনা। জবাবে দেখানো হয়েছে বলে জানানো হয়। এতে তিনি ক্ষেপে যান এবং প্রসূতি ও তার স্বজনদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। তার আচরণে ভীত হয়ে সন্ধ্যা ৬ টায় স্বজনরা প্রসূতিকে নিয়ে যান ফরিদগঞ্জ সেন্ট্রাল হাসপাতালে (প্রা:)।
সেখানে ফরিদগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রসূতি বিশেষজ্ঞ ও সার্জিক্যাল ডাক্তার শায়লা জাহান প্রসূতীকে দেখে বলেন, এই মূহুর্তে দ্রুত অপারেশন করতে হবে ও পাঁচ ব্যাগ রক্ত লাগবে। প্রসূতির স্বজনরা রক্ত দিতে চাইলে তারা বলে এই রক্ত হবে না। চাঁদপুর থেকে রক্ত কিনে আনতে হবে টাকা দেন। এর মধ্যে ডা. শায়লা জাহান জানতে পারেন এই রোগীকে রঞ্জু রানী পালের কাছে নেয়া হয়েছে। এতে ডা. শায়লা জাহানও ক্ষেপে যান এবং তাদের সেন্ট্রাল হাসপাতাল থেকে বের করে দেন। এরপর তারা সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টায় যান চাঁদপুরের মিডল্যান্ড (প্রা.) হাসপাতালে। সেখানেও প্রসূতি অপারেশন করা লাগবে বলে ভর্তি করা হয় এবং দুই ব্যাগ রক্ত দেয়া হয়। কিন্তু, রাত ১২ টায় বলা হয় এ রোগী তাদের পক্ষে অপারেশন করা সম্ভব হবে না। তারা প্রসূতীকে ঢাকা মোডক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন।
এতে ঢাকা রওয়ানা হয়ে পথিমধ্যে মতলব ফেরী ঘাটের নিকট এ্যাম্বুলেন্সের ভেতরে বাচ্চা প্রসব হয়ে যায়। এ সময় দ্রুত এ্যাম্বুলেন্স ঘুরিয়ে প্রসূতিকে নিয়ে একইভাবে পূর্বের প্রত্যেকটি প্রাইভেট হাসপাতালে ছুটাছুটি করেন তারা। কেউ রোগী ভর্তি করতে চাননি। আবশেষে তারা যান চাঁদপুর জেনারেল হামপাতালে। সেখানে অনুনয় বিনয় করার পর প্রসূতি নারী কাটাসহ যাবতীয় চিকিৎসা দেয়া হয়। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত মা ও শিশু দুজনই সুস্থ্য আছে বলে তার স্বজনরা জানান। এদিকে, ডাক্তার, ধাত্রী ও প্রাইভেট হাসপাতালে বিপদগ্রস্ত রোগী নিয়ে এমনি নির্যাতন ও হয়রানিমূলক কর্মকান্ডের বিচার ও প্রতিকার প্রার্থনা করেছেন তার স্বজনেরা। তারা স্বাস্থ্য মন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট সকলের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান বিল্লাল হোসেন ও রিয়াদের আত্মীয় স্বজন।

No comments

Powered by Blogger.