অবশেষে হার মানলেন রানা প্লাজার অসুস্থ শ্রমিক জাহেদা

অর্থের অভাবে চিকিৎসা করাতে না পেরে অকালেই চলে গেলেন রানা প্লাজার অসুস্থ শ্রমিক জাহেদা বেগম (২৫)। শনিবার সকাল আনুমানিক ৭টার দিকে সাভার পৌর এলাকার বক্তারপুরের ভাড়া বাড়িতে তিনি মারা যান। তিনি রানা প্লাজার তৃতীয় তলায় অবস্থিত ‘নিউ ওয়েভ বটম লিমিটেড’ কারখানায় সেলাই সহকারী (কার্ড নং-৪৩৫০) হিসেবে কাজ করতেন।  মানিকগঞ্জের সদর থানার বালিরটেক এলাকার সাঈদ বেপারীর কন্যা জাহেদা স্বামী পরিত্যক্তা। তিনি ছোট ভাইয়ের সঙ্গেই থাকতেন। তার মৃত্যুর পর শনিবার বিকালে সাভার পৌর এলাকার বাঁশপট্টি কবরস্থানে লাশটি দাফন করা হয়। রানা প্লাজা গার্মেন্টস ইউনিয়ন সভাপতি এমদাদুল ইসলাম জানান, সুচিকিৎসার অভাবে জাহেদার মৃত্যু হয়েছে। রানা প্লাজা ধসে পড়ার চার দিন পর ধ্বংস স্তূপের নিচ থেকে তাকে উদ্ধার করে উদ্ধারকর্মীরা। আর্থিক সঙ্কটের কারণে পরিবারের পক্ষ থেকে চিকিৎসা করাতে না পারায় তিনি মারা যান। মৃতের বড় বোন শাহেদা বেগম বলেন, জাহেদা লিভার, মাথা ও মেরুদণ্ডে মারাত্মক আঘাত পায়। প্রায়ই তার রক্ত বমি হতো। অর্থের অভাবে ঠিকমতো চিকিৎসা করাতে না পারায় তার মৃত্যু হয়েছে। সরকারিভাবে তেমন কোন সহযোগিতা তার বোন পায়নি বলেও তিনি জানান। ছোট ভাই মো. রাসেল জানায়, অর্থ ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসার অভাবে তার বোন অকালে মারা যায়। ভাল চিকিসার ব্যবস্থা করলে তার বোন হয়তো বেঁচে যেতো। তিনি বলেন, গত মাসের মাঝামাঝি সময়ে জাহেদাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসকরা লিভারে একটি অপারেশন করাতে বলেন। কিন্তু অর্থের অভাবে অপারেশন করা সম্ভব হয়নি। মানুষের কাছ থেকে ধার-দেনা ও সুদে টাকা নিয়ে যতটকু সম্ভব চিকিৎসা করানো হয়েছে। এদিকে আবার বাড়িভাড়াও ৫ মাসের বাকি পড়ায় বাড়িওয়ালাও চাপ দিতে থাকেন। ফলে অর্থের অভাবে চিকিৎসা করানো আর সম্ভব হয়নি। তিনি আরও বলেন, রানা প্লাজা ধসে পড়ার তিন মাস আগেই সে ওই কারখানায় চাকরি নেয়। ভবন ধসের চার দিন পর ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে তাকে উদ্ধারের পর প্রথমে সাভার সিএমএইচ-এ নেয়া হয়। সেখান থেকে গণস্বাস্থ্য হাসপাতাল ও পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু সরকার কিংবা বিজিএমইএ থেকে কোন সহযোগিতা না পেয়ে আর চিকিৎসা করানো সম্ভব হয়নি তাদের। সাহায্য হিসেবে বিকাশের মাধ্যমে চার দফায় শুধু ৯৫ হাজার টাকা পেয়েছে জাহেদা। সাভার নামা বাজারে চটের বস্তার দোকানের কর্মচারী রাসেল আরও জানান, ভগ্নিপতি রেজাউল করিম আড়াপাড়া এলাকায় একটি হোটেলে কাজ করে। কয়েক বছর হলো জাহেদার কোন খোঁজখবর নেয় না। তার একমাত্র সন্তান রিমা আক্তার (৮)-কে সঙ্গে করে নিয়ে যায়। এর পর থেকে বড় বোন জাহেদা তার সঙ্গেই বক্তারপুরে মালেক বেপারীর ভাড়া বাড়িতে থাকতো।  তবে স্ত্রী মারা যাওয়ার খবর শুনে ভগ্নিপতি রেজাউল লাশ দেখতে এসেছিল। তিনি ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, বোনের মৃত্যুর পরও কোন সংগঠন বা কোন সংস্থার কেউ আমাদের সান্ত্বনা দিতেও আসেনি। এমনকি রানা প্লাজা ধসের ১৮ মাসেও কেউ তার কোন খোঁজ নেয়নি।

No comments

Powered by Blogger.