বান্ধবীর সঙ্গে রাত কাটাতে গিয়ে অস্ত্র খোয়ালেন এসআই জাহিদ

বান্ধবীর সঙ্গে রাত কাটাতে গিয়ে পাবনা সদর থানার এসআই জাহিদুল ইসলাম তার নামে ইস্যুকৃত সরকারি একটি পিস্তল ও আট রাউন্ড গুলি ভর্তি একটি ম্যাগজিন হারিয়ে ফেলেছেন। ঘটনার সাত দিনেও অস্ত্রটি উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। তবে কথিত বান্ধবীসহ দুই জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ঘটনার দুইদিন পর এসআই নাজমুল হক বাদী হয়ে একটি চুরি মামলা দায়ের করেছেন। যার মামলা নং ৪৯। এসআই জাহিদকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। মামলার এজহার থেকে জানা যায়, গত ২৭শে অক্টোবর সোমবার ডিউটি শেষে এসআই জাহিদুল ইসলাম রাত ৯ টার দিকে পূর্ব পরিচিত বান্ধবী ফরিদা ইয়াসমিনকে সঙ্গে পাবনা শহরের শালগাড়িয়া টিবি হাসপাতালের পিছনের একটি বাসায় রাত যাপন করে। কথিত বান্ধবী ফরিদা ইয়াসমিন সিরাজগঞ্জ শহরের জানপুর ব্যংকপাড়ার শহিদুল ইসলামের স্ত্রী। রাতের কোন এক সময় আট রাউন্ড গুলি ভর্তি একটি ম্যাগজিনসহ একটি পিস্তল হারিয়ে যায়। ঘটনার দুই দিন পর ২৯ শে অক্টোবর বুধবার থানায় অজ্ঞাত আসামী করে একটি মামলা দায়ের করা হয়। বাড়ি মালিকের ছেলে কাজী সালাউদ্দিন সুজন ও কথিত বান্ধবীকে আটক করে থানায় দুই দিন জিজ্ঞাসাবাদ শেষে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।
গ্রেপ্তার কাজী সালাউদ্দিন সুজনের মা ও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগে কর্মরত সাজেদা খাতুন রিনা বলেন, একই বিভাগে চাকুরী করার সুবাদে সিরাজগঞ্জ পরিবার পরিকল্পনা বিভাগে কর্মরত ফরিদা ইয়াসমিনের সাথে পাঁচ বছর পূর্বে আমার পরিচয় হয়। সেই সুবাদে মাঝে মধ্যে আমার সঙ্গে তার ফোনালাপ হতো। এরই এক পর্যায়ে ২৭শে অক্টোবর সোমবার সকালে ফরিদা জানায়, ব্যংকে কর্মরত তার স্বামী শহিদুল ইসলাম পাবনায় বদলী হয়েছে। বাসা খুঁজতে আমার বাসায় এক রাত অবস্থান করার অনুমতি চায়। এতে আমি রাজি হলে ফরিদা সন্ধ্যা ৭ টার দিকে একাকী আমার বাসায় আসে। স্বামীর কথা জিজ্ঞাসা করতেই সে বলে, প্রথম আসছে তাই কিছু ফলমূল নিয়ে আসছে সে। এরপর রাত ৯ টার দিকে এক ভদ্রলোক আমার বাসায় আসে এবং ফরিদা আমাকে তার স্বামী হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেয়। এর পূর্বে কখনো তার স্বামীর সঙ্গে আমার পরিচয় হয়নি। রাতে আমি সথাসাধ্য অতিথী আপ্যায়নের পর বাসার একটি রুমে তাদের থাকার ব্যবস্থা করি। সকালে ওই ঘরে ঝগড়ার শব্দ শুনে দড়জায় নক করলে দরজা খুলে দেয় এবং ফরিদার স্বামী জানায় তার পিস্তল হারিয়ে গেছে। পিস্তলের কথা জিজ্ঞেস করতেই সে তার আসল পরিচয় দেয় এবং বলে ফরিদা তার স্ত্রী নয় বান্ধবী। পরে থানা থেকে সাদা পোষাকে কয়েকজন লোক পুলিশ পরিচয় দিয়ে আমার ছেলেকে নিয়ে যায়। এবং অস্ত্রটি উদ্ধার করে দেয়ার কথা বলে তাকে শারীরিক ভাবে চরম নির্যাতন করা হয়। আমার ছেলেকে বিনা অপরাধে ২ দিন পুলিশী হেফাজতে রেখে নির্যাতন শেষে জেল হাজতে প্রেরণ করেন। বিষয়টি সংবাদকর্মীদের অবহিত করা হলে আমার ছেলেকে গুম করার হুমকী দেয় থানা পুলিশ বলে তিনি অভিযোগ করেন।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত এসআই জাহিদুল ইসলাম তার ব্যবহৃত সরকারী পিস্তল হারিয়ে যাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তবে কথিত বান্ধবীকে নিয়ে স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে অন্যের বাড়িতে রাত কাটানোর বিষয়ে কথা বলতেই তিনি মুঠোফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।
এ ব্যাপারে পাবনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কাজী হানিফুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, হারিয়ে যাওয়া অস্ত্রটি উদ্ধারের চেষ্টা চলছে ও মামলা হয়েছে। এসআই জাহিদের বান্ধবীসহ এক যুবককে সন্দেহমুলক ভাবে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে সে বলেন বাইরে আছি পরে কথা বলছি বলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন। পাবনার পুলিশ সুপার মিরাজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, এসআই জাহিদকে দায়িত্বহীনতার অপরাধে সাময়িক ভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। অস্ত্রটি উদ্ধারের জন্যে গ্রেপ্তারকৃতদের রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.