মার্লোন হঠাৎ জড়িয়ে ধরলেন আমাকে

শুটিংয়ের এক পর্যায়ে রোমান্টিক একটি দৃশ্যে অভিনয়ের আগে মার্লোন ব্রান্ডো হঠাৎ করেই আমাকে জড়িয়ে ধরলেন। আমি সঙ্গে সঙ্গে ফিসফিস করে বললাম, তোমার সাহস তো কম নয়! এরকম আর কখনও করবে না। বেচারা মার্লোন! ‘ইয়েসটারডে, টুডে, টুমরো’ বইতে এসব কথা লিখেছেন হলিউডের কিংবদন্তি অভিনেত্রী, মডেল সোফিয়া লরেন। তার লেখা এ বইটি লন্ডনে প্রকাশিত হচ্ছে ৩রা নভেম্বর। এতে তিনি আরও লিখেছেন-
আমার জন্য সবচেয়ে মারাত্মক অভিজ্ঞতা হচ্ছে জেলে যাওয়া। ট্যাক্স ফাঁকির অভিযোগে আমি অভিযুক্ত হলাম। সে অভিযোগটি ছিল সম্পূর্ণই মিথ্যা। আমি বিদেশ থাকতাম। আমার সহকারী হয়তো সবসময় ইতালিতে আয়কর দাখিল করতে পারতো না। আমি পরে আপিল করি। কিন্তু ১৯৮০ সালে আমি ৩০ দিনের কারাদণ্ড পাই। আমার দু’টি বিকল্প ছিল। হয় জেলে যাওয়া, নয়তো কখনই নিজের দেশে ফেরত না যাওয়া। আমার ১৪ ও ৯ বছরের বাচ্চারা আমাকে বিদায় জানাতে এলো। আমি মনে করার চেষ্টা করছিলাম তাদের অবস্থাটা। আমি রোমে নামার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ কার এসে আমাকে নিয়ে গেল। আমি ছিলাম ২৪ নম্বর কয়েদি। আমার বোন মারিয়া প্রতি রাতে আমাকে সঙ্গ দিতে আমার জানালার পাশে থাকতো। স্বাধীনতাহীন জীবনের চেয়ে মারাত্মক কিছুই হতে পারে না। ইতালিতে অনেক কিছুই সম্ভব। অনেক সময় নিষপাপ মানুষকেও জেলে পচতে হয়। জেলে যাওয়ার ১১ দিন শেষ। আমি আমার দিনলিপি লিখছি। কত চিন্তা এসে ভর করে। কত দুশ্চিন্তা, কত ভয়। পরাধীন জীবনটা অসহ্য লাগছিল। সবাই আমার দিকে তাকিয়ে থাকতো। জুনের ৫ তারিখ আমি জেল ত্যাগ করি। এরপর রোমে আমি আমার মায়ের বাসায় থাকি। আমি শুকিয়ে গিয়েছিলাম, ঘোর আচ্ছন্ন হয়ে গিয়েছিলাম। এর মধ্যে চার্লি চ্যাপলিন আমার স্বপ্নের মতো একটি কাজের অফার দিলেন। তার পরিচালিত শেষ ছবিতে তিনি ব্র্যান্ডোর বিপরীতে আমাকে অভিনয় করতে বললেন। ছবিটি ছিল, অ্যা কাউন্টেস ফ্রম হংকং। ১৯৬৫ সালে শুরু হওয়া সে ছবির প্রথম শ্যুটিং-এ আমি তাড়াতাড়ি পৌঁছলাম। ছবির চিত্রনাট্যের প্রতিটি লাইন তখন আমার ঠোঁটস্থ। আমার প্রথম দৃশ্যের শ্যুটিং-এর সময় চলে এল, কিন্তু আমার সহ-অভিনেতাকে পাওয়া যাচ্ছিল না! তখন চার্লি চ্যাপলিন আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি জানো ব্র্যান্ডো কোথায়? আমি কিছুটা বিব্রত হয়ে জানালাম, দুঃখিত, চার্লি। আমার জানা নেই। আমি বিশ্ব চলচ্চিত্র জগতের এক জীবন্ত কিংবদন্তির সামনে দাঁড়িয়ে ছিলাম। আমি কিছুতেই বুঝতে পারছিলাম না, কিভাবে কেউ তার প্রতি এতটা অশ্রদ্ধা দেখাতে পারে। চার্লি বারংবার নিজের ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছিলেন আর পায়চারী করছিলেন। প্রায় ৪৫ মিনিট পর ব্র্যাভো এসে পৌঁছলেন। কিন্তু তাকে খুব সজীব দেখাচ্ছিল। সম্ভবত সে জানেও না, সে কি করেছে! চার্লি তার দিকে আস্তে করে হেঁটে গেলেন। এরপর তার শীতল চাহনি ব্রান্ডোর পা থেকে মাথা পর্যন্ত বুলিয়ে গেল। এরপর চার্লি বললেন, যদি তুমি আগামীকালও দেরিতে আসার চিন্তা করে থাকো, বা পরশু দিন বা তার পরের দিনও, তাহলে তুমি এক্ষুণি এ সেট ছেড়ে চলে যেতে পারো। ব্রান্ডো যেন বেলুনের মতো চুপসে গেলেন। এরপর ক্ষমা চাইলেন দেরি হওয়ার জন্য। তার মস্তক ছিল অবনত। এরপর কিছুতেই তার সংলাপ মুখে আসছিল না। তার সে সপষ্ট কণ্ঠ আর সংলাপ যেন নিমিষে মিইয়ে গেল। এরপর থেকে সে আর কখনও দেরিতে আসে নি। শ্যুটিং-এর এক পর্যায়ে ছবির এক রোমান্টিক দৃশ্যে অভিনয়ের আগে, হঠাৎ করে আমাকে জড়িয়ে ধরেনি। আমি জানি সে অত্যন্ত নিরীহ! কিন্তু এর পর থেকে আমি আর তার কাছাকাছি হতে পারিনি।  ১৯৫৭ সালে অড্রে হেপবার্ন আমাকে ও কার্লোকে সুইস এক শ্যালেতে লাঞ্চের দাওয়াত দিল। এটি ছিল খুবই সুন্দর। এখানে অড্রে তার স্বামী মেল ফেরোরকে নিয়ে থাকতো। সবাই সাদা কাপড় পরা ছিল। আমরা কিছুক্ষণ কথা বললাম, তার বাসাটা ঘুরিয়ে দেখালো। এরপর আমরা খেতে বসি। খেতে খেতে কিছুক্ষণ পর চিরচেনা হাসি মুখে নিয়ে অড্রে ঘোষণা করলো, আমি খুব বেশি খেয়ে ফেলেছি! সঙ্গে সঙ্গে আমার খাবারও শেষ! আমি তখন চালাকি করে উত্তর দিলাম, আসলেই বেশি হয়ে গেছে! সব কিছু দারুণ সুস্বাদু ছিল। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে আমি তখন ক্ষুধায় মরছিলাম। বাসায় এসে স্যান্ডউইচ খেয়ে ক্ষুধার জ্বালা নিবারণ করি।

No comments

Powered by Blogger.