কোবানিতে থমকে গেছে আইএস

মার্কিন নেতৃত্বাধীন বাহিনীর ব্যাপক বিমান হামলার মুখে সিরিয়ার কোবানি শহরের ওপর ইসলামিক স্টেটের (আইএস) হামলা কিছুটা থমকে গেছে। কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ কুর্দি অধ্যুষিত শহরটির এক-তৃতীয়াংশ এলাকা আইএসের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে—এমন খবর প্রকাশের পরদিনই নতুন এ তথ্য পাওয়া গেল। খবর এএফপি, বিবিসি ও রয়টার্সের। মার্কিন সামরিক বাহিনী গত বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে জানায়, কোবানিসংলগ্ন এলাকাগুলোতে আইএসের স্থাপনা লক্ষ্য করে নয় দফায় বিমান হামলা চালানো হয়েছে। এতে আইএস জঙ্গিদের ব্যবহৃত ভবন ও যানবাহনের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র কোবানির পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। কুর্দি মিলিশিয়ারাই এখনো ওই শহরের অধিকাংশ এলাকা নিয়ন্ত্রণ করছে। কুর্দি যোদ্ধাদের একজন কমান্ডার দাবি করেন, কোবানির মাত্র ২০ শতাংশ এলাকা আইএসের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তিনি বলেন, ‘কুর্দি যোদ্ধারা তেতে রয়েছে। তারা ঘুম ছাড়াই অভিযানে যেতে প্রস্তুত।’ কুর্দি বাহিনী জানায়, আইএস ট্যাংক, মর্টার, রকেটসহ ভারী অস্ত্রশস্ত্র ব্যবহার করে হামলা চালাচ্ছে। এই হামলা মোকাবিলা করতে কুর্দিদেরও জরুরি ভিত্তিতে ভারী অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ প্রয়োজন। সিরিয়ায় নিযুক্ত জাতিসংঘের বিশেষ দূত স্টেফান ডি মিসটুরা গত বুধবার বলেন, কোবানি শহর রক্ষায় প্রয়োজনীয় সবকিছুই করা হবে।
আইএসের জঙ্গিদের হাতে শহরটির পতন ঘটলে পাশের দেশ তুরস্ক হুমকির মুখে পড়বে। গতকাল শুক্রবার জেনেভায় সংবাদ সম্মেলনে মিসটুরা বলেন, ‘কোবানি থেকে কুর্দিদের শরণার্থী হিসেবে প্রবেশ করতে দেওয়ার জন্য তুর্কি কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’ এ সময় তিনি আইএসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে আগ্রহী স্বেচ্ছাসেবকদের তুর্কি সীমান্ত ব্যবহার করে কোবানি শহরে প্রবেশ করতে দিতেও তুর্কি সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। তুরস্কের পার্লামেন্ট সিরিয়া ও ইরাকে আইএসের বিরুদ্ধে হামলা চালানোর অনুমোদন দিলেও দেশটি সীমান্তে সেনা মোতায়েন ছাড়া কিছুই করেনি। তুরস্কের কুর্দি জনগোষ্ঠী তাদের স্বজাতিকে বাঁচাতে কোবানিতে সামরিক হস্তক্ষেপ করার জন্য বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছে। বিক্ষোভের সময় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গত কয়েক দিনে অন্তত ২০ জন নিহতও হয়েছে। কোবানিতে তুরস্কের পুরোনো শত্রু কুর্দিদের বিরুদ্ধে আইএসের লড়াইকে দৃশ্যত ইতিবাচকভাবেই দেখছে আঙ্কারা। কোবানিসংলগ্ন তুর্কি সীমান্ত শহর সুরুকের গভর্নর আবদুল্লাহ কিফতসি বলেন, কোবানিতে অবরুদ্ধ কুর্দিদের জন্য তাঁরা মানবিক সহায়তা পাঠাচ্ছেন। কিন্তু সামরিক সহায়তা দেওয়া অসম্ভব। এই মুহূর্তে তুরস্কের প্রথম অগ্রাধিকার হলো নিজের সীমান্ত রক্ষা করা।
তুর্কি প্রধানমন্ত্রী আহমেত দাভুতোগ্লু গতকাল আঙ্কারায় সাংবাদিকদের বলেন, তুরস্ক সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের যেমন বিরোধিতা করে, ঠিক তেমনই বিরোধিতা করে আইএসের। বর্তমান পরিস্থিতির জন্য বাশার ও আইএস উভয়ই দায়ী। তিনি বলেন, কেউ প্রমাণ করতে পারবে না তুরস্ক আইএসকে সমর্থন দিচ্ছে। এদিকে আইএসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে আগামী সপ্তাহে আঙ্কারায় আলোচনায় বসছে যুক্তরাষ্ট্র ও তুরস্কের সামরিক বাহিনীর একটি যৌথ দল। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জেন সাকি গত বৃহস্পতিবার এ তথ্য জানান। সাকি জানান, আলোচনায় আইএসের বিরুদ্ধে লড়াই জোরদার করার বিষয়টি প্রাধান্য পাবে। আইএসের সঙ্গে আলোচনা করা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন জঙ্গি ওই সংগঠনটির হাতে শিরশ্ছেদ হওয়া মার্কিন সাংবাদিক জেমস ফলির বাবা জন ফলি। ফরাসি একটি বেতারের সঙ্গে আলাপকালে জন ফলি বলেন, ‘আমি মনে করি আইএসের সঙ্গে আলোচনা করা উচিত। সামরিকভাবে এই সমস্যার সমাধান হবে না।’ গত আগস্টে সাংবাদিক জেমস ফলিকে গলা কেটে হত্যা করার ভিডিও প্রকাশ করে আইএস।

No comments

Powered by Blogger.