প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে বিরোধপূর্ণ সমুদ্রসীমা নিরসনে জয়ী হয়েছি -চট্টগ্রামে প্রধানমন্ত্রী

চট্টগ্রামে নৌবাহিনী আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর পরই আমরা প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে বিরোধপূর্ণ সমুদ্র এলাকা নির্ধারণের উদ্যোগ নেই। আর সে কারণেই আন্তর্জাতিক আদালতের রায়ের মাধ্যমে ২০১২ সালে মিয়ানমার ও চলতি বছর ভারতের সঙ্গে শান্তিপূর্ণভাবে সমুদ্রসীমা নির্ধারণ সম্ভব হয়েছে। আমরা জয়ী হয়েছি। তিনি গতকাল নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ ওসমানকে ন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড পুরস্কার প্রদান করেন। পরে এক বক্তব্যে শেখ হাসিনা নৌবাহিনীর উদ্দেশ্যে আরও বলেন, বিশাল সমুদ্র আপনাদের কর্মক্ষেত্র।  লোকচক্ষুর অন্তরালে থেকে উত্তাল সাগরে কঠোর পরিশ্রম করেন। আমি বিশ্বাস করি, নতুন উদ্দীপনা ও মনোবল নিয়ে দেশের বিশাল জলসীমা, সার্বভৌমত্ব রক্ষা, সমুদ্র সম্পদের সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যে সেবা আপনারা দিয়ে যাচ্ছেন তা জাতি কখনও ভুলবে না।

তিনি বলেন, অবকাঠামো উন্নয়ন, যুদ্ধজাহাজ সংগ্রহ ও বিদ্যমান জাহাজগুলোর অপারেশনাল সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এছাড়া, সেনাবাহিনী ও বিমানবাহিনীরও ব্যাপক সমপ্রসারণ ও আধুনিকায়ন করেছে সরকার। ২০০৯ সালে আমরা সরকার গঠন করে সশস্ত্র বাহিনীর উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখি। ৩ বাহিনীর সদস্যরা জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে এদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকাকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে বলে উল্লেখ করে বলেন, আমাদের রয়েছে ৭১০ কিলোমিটার উপকূলীয় এলাকা। যেখানে ৩ কোটি মানুষ সাগরের ওপর নির্ভরশীল। সম্পদ আহরণ ও নিরাপদ বাণিজ্য নিশ্চিত করতে সমুদ্র এলাকার নিরাপত্তা জোরদার করা জরুরি। তাই  নৌবাহিনীকে একটি দক্ষ, আধুনিক ও ভারসাম্যপূর্ণ ত্রিমাত্রিক বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলতে সরকার বেশকিছু পরিকল্পনা নিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় মোট ১৬টি জাহাজ নৌবাহিনীতে যুক্ত হয়েছে। আরও দু’টি হেলিকপ্টার ও দু’টি মেরিন  পেট্রল এয়ারক্রাফটও সংযোজন করা হয়েছে। একটি শক্তিশালী নৌবহর গঠনের জন্য অত্যাধুনিক দু’টি করভেট চীনে নির্মাণাধীন রয়েছে। অন্যদিকে দু’টি সাবমেরিনও আগামী বছরের মধ্যে নৌবাহিনীতে সংযোজিত হবে।
 শেখ হাসিনা বলেন, পটুয়াখালীতে নৌবাহিনীর সবচেয়ে বড় ঘাঁটির কাজ চলছে। অন্যদিকে খুলনা শিপইয়ার্ডে দু’টি কন্টেইনার শিপ তৈরি হয়েছে। এখানে ৫টি পেট্রল ক্রাফট তৈরি হয়েছে, যা নিজস্ব যুদ্ধজাহাজ নির্মাণের সক্ষমতা বাড়িয়ে দিয়েছে। এই ধরনের প্রকল্পের কারণে বিদেশের ওপর আমাদের নির্ভরশীলতা অনেক কমে এসেছে।
নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ ওসমানকে ন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড পুরস্কার প্রদান করা প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে দেশে-বিদেশে বড় অবদান রেখেছে জাহাজটি। পুরস্কার পাওয়ার দাবি রাখে সেটি। এই সময় তিনি স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, বহুমুখী নিয়ন্ত্রিত ক্ষেপণাস্ত্রবাহী যুদ্ধ জাহাজ বানৌজা ওসমান ১৯৮৯ সালে বাংলাদেশ  নৌবাহিনীতে কমিশন লাভ করে। দেশের সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষায় ব্যাপক অবদান রেখেছে জাহাজটি। এটি দেশে ও বিদেশে ৫ শতাধিক মহড়ায় অংশ নিয়েছে এবং এতে নৌবাহিনীর ৪৪৫ জন কর্মকর্তা ও নাবিক প্রশিক্ষণ নিয়েছে। এর আগে প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রামে এসে পৌঁছলে নৌবাহিনী প্রধান ভাইস অ্যাডমিরাল এম ফরিদ হাবিব, এনডিসি, পিএসসি তাকে স্বাগত জানান। অনুষ্ঠানে এই সময় মন্ত্রীরা ছাড়াও বিভিন্ন সমাজের বিভিন্ন স্তরের লোকজন উপস্থিত ছিলেন। নৌবাহিনীর একটি সূত্র জানায়, খুলনা শিপইয়ার্ড চায়না ক্লাসিফিকেশন সোসাইটির তত্ত্বাবধানে ও চায়না শিপ বিল্ডিং অফসোর কোম্পানির কারিগরি সহায়তায় নৌবাহিনীর জন্য পাঁচটি মধ্যম মানের যুদ্ধ জাহাজ তৈরি করছে। ইতিমধ্যে বিএনএস পলাশ ও বিএনএস সুরমা নামে দু’টি যুদ্ধযান নৌবাহিনীর কাছে হস্তান্তরের পর প্রধানমন্ত্রী  কমিশনিং করেছেন। তৃতীয় জাহাজটির নির্মাণ ও পরীক্ষামূলক পরিচালনের পর গতকাল প্রধানমন্ত্রী তা উদ্বোধন করেন।

No comments

Powered by Blogger.