স্কুলছাত্র জুবায়ের হত্যার নেপথ্যে সমকামিতা

সমকামিতায় লিপ্ত না হওয়ায় রাজধানীর উত্তরায় ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের ‘ও’ লেভেল পড়ুয়া জুবায়ের আহমেদকে হত্যা করেছে বিদেশী নাগরিক আবু ওবায়েদ কাদের (৪৬)। ফুটবল প্রশিক্ষক আলজেরিয়ার এই নাগরিক পানিতে চুবিয়ে জুবায়েরকে হত্যা করে। এ ঘটনা জুবায়েরের বন্ধু ইসমাইল দেখে ফেললে তাকে বিদেশে নিয়ে যাওয়ার প্রলোভন ও হুমকি দেয় কাদের। যে কারণে বন্ধু ইসমাইল হত্যার ব্যাপারে মুখ খোলেনি সে। বিদেশীকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিলে হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটিত হয় বলে দাবি করেছেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের ডিসি শেখ নাজমুল আলম।
গোয়েন্দারা জানান, সমকামী বিদেশীর নাগরিক কাদেরের লোলুপ দৃষ্টি পড়েছিল স্কুল ছাত্রটির ওপর। আবু ওবায়েদ কাদের কিশোরদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করে সমকামিতায় লিপ্ত হতেন।

রোববার দুপুরে ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে ডিসি শেখ নাজমুল আলম সাংবাদিকদের জানান, জোবায়েরের মা দিলারা জামান তার ছেলেকে হত্যার অভিযোগ এনে উত্তরা পূর্ব থানায় একটি মামলা করেন। এতে আবু ওবায়েদ কাদেরকে প্রধান আসামি ও ইসমাইল নামে অপর একজনকে সহযোগী আসামি করা হয়। পরবর্তীতে আবু ওবায়েদ কাদের ও ইসমাইল হোসেনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ইসমাইল হোসেন ইংরেজি মাধ্যমের নবম শ্রেণীর ছাত্র ও জুবায়েরের খেলার সাথী। দু’জনেই বর্তমানে পুলিশ হেফাজতে রয়েছে। জুবায়ের হত্যার পর থেকেই ইসমাইল কিশোরগঞ্জে তার গ্রামের বাড়িতে অবস্থান করছিল। গত শুক্রবার উত্তরা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। গতকাল শনিবার তাকে আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড চাইলে চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর হয়।
এর আগে গত রোববার আবু ওবায়েদ কাদেরকে গ্রেফতার করা হয়। গত শুক্রবার তাকে চারদিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। তার আগে তাকে তিন দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়।
সংবাদ সম্মেলনে শেখ নাজমুল আলম বলেন, গ্রেফতারকৃতরা জিজ্ঞাসাবাদের জানিয়েছে- গত ৪ অক্টোবর বিকেল ৫টার পরে প্রশিক কাদের, জুবায়েরসহ আরো কয়েকজন উত্তরা ৪ নম্বর সেক্টরের মাঠে ফুটবল খেলে। খেলা শেষে কাদের, জুবায়ের ও ইসমাইল মাঠের পাশের পুকুরে গোসল করতে নামে। এসময় প্রশিক্ষক কাদের জুবায়েরকে জড়িয়ে ধরে সমকামিতায় লিপ্ত হওয়ার চেষ্টা করে। এতে জুবায়ের বাঁধা দিলে তাকে পানিতে চুবিয়ে হত্যা করে সেখানে লাশ ডুবিয়ে দেয়। বিষয়টি ইসমাইল দেখে ফেলায় তাকে বিদেশে নিয়ে যাওয়ার প্রলোভন  দেখায়। এছাড়া বিষয়টি প্রকাশ না করতে হুমকি দেয়া হয় তাকে।
নাজমুল আলম জানান, জুবায়ের ওই দিন রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত বাসায় না ফেরায় তাকে খোঁজা শুরু হয়। পরের দিন সকাল ৬টার দিকে আলজেরিয় নাগরিক আবু ওবায়েদ কাদের, জুবায়েরের মোবাইল ফোনে কল দিয়ে জানায় জুবায়ের কোথায় আছে তিনি তা জানেন। তার কথাবার্তায় সন্দেহ হলে বিষয়টি জুবায়েরের পরিবারের সদস্যরা থানা পুলিশকে অবহিত করেন। পরে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে কাদের জানায় জুবায়েরের লাশ পুকুরে আছে। পরে সেখান থেকে লাশ উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ মর্গে পাঠানো হয়।
ডিসি শেখ নাজমুল জানান, আবু ওবায়েদ কাদের একজন সমকামী। সে পাসপোর্টবিহীন অবস্থায় দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশে অবৈধভাবে বসবাস করছে। সে ফুটবল প্রশিক্ষণের নামে কিশোরদের সাথে সখ্য গড়ে তোলে এবং পরবর্তী সময়ে তাদেরকে সমকামিতায় বাধ্য করে থাকে। তার ফেসবুক ও  মোবাইল ফোনে সমকামিতার যথেষ্ট তথ্য প্রমাণ রয়েছে বলে জানান তিনি।
উল্লেখ্য, ঈদের আগের দিন রোববার দুপুরে উত্তরার ৪ নম্বর সেক্টরের পার্ক কল্যাণ সমিতির মাঠের পাশের পুকুর থেকে জুবায়েরের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস। তার আগের দিন শনিবার থেকে সে নিখোঁজ ছিল।

No comments

Powered by Blogger.