রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে ২৫০ রোগীর সেবায় ১০ চিকিৎসক by কাজী তানভীর মাহমুদ

নামেই আধুনিক, কিন্তু আধুনিকতার ছোঁয়া লাগেনি। চাপ বেড়েছে, তবে সেই চাপ সামলে ওঠার সামর্থ্য নেই। যেখানে কমপক্ষে ৪২ জন চিকিৎসক থাকার কথা, সেখানে আছেন মাত্র ১০ জন। বেশির ভাগ বিভাগে কোন চিকিৎসকই নেই। এভাবেই নামমাত্র সেবা দিয়ে চলছে রাজবাড়ী সদর হাসপাতাল।

১৯৭০ সালে ৫০টি শয্যা নিয়ে শুরু হয়ে ২০০৩ সালে ১০০ শয্যায় উন্নীত হয় হাসপাতালটি। কিন্তু বর্তমানে প্রত্যেক দিন গড়ে আড়াইশ’ রোগী ভর্তি থাকছেন। সিট সঙ্কটের কারণে  ফ্লোরে, বারান্দায়, রাস্তায় শুয়ে সেবা নিচ্ছেন তারা। ফলে একদিকে সিট সংখ্যার চেয়ে প্রায় ৩ গুণ রোগী আর অন্যদিকে চিকিৎসক সঙ্কট নিয়ে অব্যাহত চাপ মোকাবিলায় হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতালটি। রোগীরা এসে সেবা না পেয়ে হা-হুতাশ করেন। সামর্থ্যবানরা চলে যান অন্যত্র। কিন্তু যারা থাকেন তারা রীতিমতো বঞ্চিত থাকেন প্রত্যাশিত চিকিৎসা সেবা থেকে। এখানে যে সব চিকিৎসক সেবা দিয়ে চলেছেন, তারা জনবল সঙ্কটের কারণে কুলিয়ে উঠতে পারছেন না। এরসঙ্গে আছে হাসপাতালটির অবকাঠামোগত ও চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার নানা সমস্যা। ওষুধ সঙ্কট এখানে চিরাচরিত ঘটনা। এখন আর রোগীরা এনিয়ে কোন অভিযোগ করেন না। অনেকটাই যেন গা-সওয়া হয়ে গেছে। এখানে চিকিৎসকের অনেক কাজই চালিয়ে নেন নার্সরা। রাতে চিকিৎসক পাওয়া তো ভাগ্যের ব্যাপার।
সূত্র জানায়, সিট সঙ্কটের পাশাপাশি চিকিৎসক ও কর্মচারীদের আবাসিক ব্যবস্থা অত্যন্ত করুণ। এখানে নিয়মিত সিজার, ডিএনসি, চোখের ছানি অপসারণ, সার্জারি, নাক-কান-গলাসহ সাধারণ অপারেশন হয়। বরাট ইউনিয়নের নবগ্রামের মনিরাম রবি দাসের ছেলে বিষ্ণু রবি দাস জানান, এখানকার খাবার মুখে নেয়া যায় না। আর পানি পুরোপুরিই ব্যবহারের অযোগ্য। বাথরুমে কোনভাবেই যাওয়া যায় না। মেডিসিন বিভাগে ভর্তি ৭০ বছরের রঞ্জিত কুমার চক্রবর্তী জানান, ৫ দিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি। সকালে একবার ডক্তার আসেন। আর সারা দিন ডাকাডাকি করলেও চিকিৎসক পাওয়া যায় না। ভ্যানচালক মো. সেলিম মিয়া (৩৫) বলেন, দুপুরে মোটা চালের ভাত-পাঙাশ মাছের টুকরো আর পানির মতো ঝোল দেয়া হয়। রাতেও একই অবস্থা। ডাক্তাররা যে সব ওষুধ লিখে দেন তার সবই বাইরে থেকে কিনতে হয়। রাজবাড়ী সিভিল সার্জন ডা. মাহাবুবুল হক জানান, ১০০ শয্যার হাসপাতালে ৫০ শয্যার জনবলও নেই। কিন্তু সেবা দিতে হচ্ছে আড়াইশ’ রোগীর। এই চাপের কারণে স্বাভাবিক ভাবেই সেবায় কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। তবে চিকিৎসকরা চেষ্টা করছেন। শিগগিরই আরও কিছু ডাক্তার এখানে যোগ দিবেন। তাতে চিকিৎসক সঙ্কটের কিছুটা সমাধান হবে। তবে হাসপাতালে এখন পর্যাপ্ত ওষুধ আছে। ওষুধের কোন ঘাটতি নেই। খাবারের মান নিয়েও কোন সমস্যা নেই।

No comments

Powered by Blogger.