রায় দিল স্কটল্যান্ডের জনগণ

ভোটকেন্দ্রের বাইরে দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য ছিল ‘হ্যাঁ’ আর
‘না’ দুই পক্ষেরই পোস্টার। এর পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন
একজন ভোটার। গতকাল স্কটল্যান্ডে গণভোট চলার
সময় এডিনবরা থেকে তোলা ছবি। এএফপি
স্বাধীনতার প্রশ্নে রায় দিয়েছে স্কটল্যান্ডের জনগণ। গতকাল বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত ঐতিহাসিক গণভোটে তাঁরা যুক্তরাজ্যের সঙ্গে থাকা কিংবা আলাদা হয়ে যাওয়ার ব্যাপারে অভিমত জানিয়ে দিয়েছেন। তবে ফল জানা যাবে আজ স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে সাতটার মধ্যে (বাংলাদেশ সময় দুপুর সাড়ে ১২টার মধ্যে)। খবর বিবিসি, রয়টার্স ও এএফপির। স্কটল্যান্ডজুড়ে পাঁচ হাজার ৫৭৯ কেন্দ্রে গতকাল সকাল সাতটায় ভোট গ্রহণ শুরু হয়। চলে রাত ১০টা পর্যন্ত। ৪২ লাখ ৮৫ হাজার ৩২৩ জন ভোটার ভোট দেওয়ার জন্য নিবন্ধন করেন, যা ভোটার হওয়ার যোগ্য নাগরিকদের প্রায় ৯৭ শতাংশ। তাই ব্যাপক ভোট পড়ার প্রত্যাশাই করছিলেন সংশ্লিষ্টরা।
ভোট পড়ার হারে স্কটল্যান্ডের নির্বাচনের ইতিহাসেই রেকর্ড হতে পারে বলে ধারণা করছেন অনেকে। ভোট গ্রহণ শেষ হওয়ার পর ৩২টি স্থানীয় কাউন্সিলে গণনা শুরু হয়। সেখানে গণনা শেষে কর্মকর্তারা রাজধানী এডিনবরায় প্রধান গণনা কর্মকর্তা মেরি পিটকাইথলির কাছে তথ্য পাঠাবেন। প্রধান গণনা কর্মকর্তার অনুমোদনের পর স্থানীয় গণনা কর্মকর্তারা ফল ঘোষণা করবেন। সব গণনা শেষ হওয়ার পর কেন্দ্রীয়ভাবে আনুষ্ঠানিক ফল ঘোষণা করবেন মেরি পিটকাইথলি। তিনি জানান, শুক্রবার (আজ) ‘সকালের নাশতার সময়’ ফল ঘোষণা করা হবে। নির্বাচন কার্যালয় বলছে, শুক্রবার সকাল সাড়ে ছয়টা থেকে সাড়ে সাতটার মধ্যে ফল ঘোষণা করা হতে পারে। এডিনবরার একটি কেন্দ্রে ভোট দিতে যাওয়া ব্যবসায়ী রন জানান, তিনি স্কটল্যান্ডের স্বাধীনতার পক্ষে ভোট দেবেন। তিনি বলেন, ‘আজ স্কটল্যান্ডের জন্য ঐতিহাসিক একটি দিন। সারা জীবন এই দিনটির জন্য অপেক্ষা করেছি। এটাই যুক্তরাজ্য থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময়।’ মধ্য স্কটল্যান্ডের স্টার্লিং কাউন্সিল এলাকার গণনা কর্মকর্তা বব জ্যাক জানান, সকাল থেকেই এলাকার কেন্দ্রগুলোতে ভোটারের লাইন পড়ে যায়। অনেকেই কেন্দ্র খোলার আগেই লাইনে দাঁড়ান। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভোটারও বাড়তে থাকে। স্কটল্যান্ডের ফার্স্ট মিনিস্টার ও স্বাধীনতাকামী নেতা অ্যালেক্স স্যামন্ড পূর্বাঞ্চলীয় শহর পার্থে সমর্থকদের উদ্দেশে বলেন, ‘এই গণভোট আমাদের সারা জীবনের জন্য একটি সুযোগ। এই সুযোগ দুই হাতে কাজে লাগাতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘স্কটল্যান্ডের ভবিষ্যৎ অবশ্যই স্কটল্যান্ডবাসীর হাতে ছেড়ে দিতে হবে।’ সকাল পৌনে ১০টার দিকে নিজের নির্ধারিত কেন্দ্রে ভোট দেন স্যামন্ড। গণভোটে ১৬ ও ১৭ বছর বয়সীরাও ভোট দিয়েছে। যুক্তরাজ্যে এই প্রথমবারের মতো এই বয়সীরা ভোটার হিসেবে নিবন্ধিত হয়। ফল যা-ই হোক, জিতবেন স্যামন্ড: বিশ্লেষকেরা বলছেন, গণভোটের ফল যা-ই হোক না কেন, জয়ী হবেন এই স্যামন্ড। স্কটল্যান্ড স্বাধীন হলে তিনিই বিবেচিত হবেন এই স্বাধীনতার জনক তথা স্কটল্যান্ডের নায়ক হিসেবে। আর স্বাধীন না হলে যুক্তরাজ্য সরকারের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী স্কটল্যান্ড সরকার কর আদায় ও ব্যয়ের ক্ষেত্রে আরও ক্ষমতা পাবে। সেটাও স্কটল্যান্ডের স্বাধীনতাকামীদের জন্য একধরনের জয়। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন, উপপ্রধানমন্ত্রী নিক ক্লেগ ও প্রধান বিরোধী দল লেবার পার্টির নেতা এডওয়ার্ড মিলিব্যান্ড ‘না’ ভোটের পক্ষে প্রচারণা চালিয়েছেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী গর্ডন ব্রাউনও ‘না’ ভোটের পক্ষে প্রচারণা চালিয়েছেন। তাঁরা স্কটল্যান্ডকে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে রাখার পক্ষে। গর্ডন ব্রাউন ও ‘না’ প্রচারাভিযানের অন্যতম নেতা অ্যালিস্টার ডার্লিং নিজ নিজ কেন্দ্রে ভোট দেন।

No comments

Powered by Blogger.