বাংলাদেশী শ্রমিকদের নিয়ে প্রতারণা

বিশাল নেটওয়ার্ক তাদের। বিদেশে কর্মী পাঠানোর নামে মানবপাচার করাই তাদের পেশা। এক্ষেত্রে প্রধান অস্ত্র মোটা বেতনের চাকরির প্রলোভন। নির্বিঘ্নে এ কাজ চালাতে খুলে বসেছে রিক্রুটিং এজেন্সি। চক্রে আছে দেশীয় সদস্যদের পাশাপাশি ভিনদেশীরাও। বিদেশী কোম্পানির চাকরির কাগজপত্র দেখিয়ে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর চোখে ধুলো দিয়ে ছাড়পত্রও ম্যানেজ করছে তারা। আর বিদেশের মাটিতে পা রাখার সঙ্গে সঙ্গেই ছিনিয়ে নিচ্ছে সকল ধরনের বৈধ কাগজপত্র। এত সব অভিযোগের মধ্যেও কর্মী নিয়োগের নামে বাইরে লোক পাঠানো অব্যাহত রেখেছে তারা। চোখের সামনে সব কিছু ঘটলেও যেন ধরাছোঁয়ার বাইরে তারা। আল-পূর্বাশা এন্টারপ্রাইজ (আরএল-৫০২) নামে একটি রিক্রুটিং এজেন্সি ও তার সহযোগী প্রতিষ্ঠান মেসার্স গোলাম রাব্বী ইন্টারন্যাশনাল (আরএল-১০৭৮)-এর বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ এনেছেন সুদান থেকে প্রতারিত হয়ে দেশে ফিরে আসা ৩৭ কর্মী। অভিবাসী ঐক্য ফোরাম ও সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় সমপ্রতি তারা দেশে ফেরত আসেন। অভিযোগে তারা ক্ষতিপূরণসহ ৪ দফা দাবি জানিয়েছেন। একই সঙ্গে ওই রিক্রুটিং এজেন্সির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী এবং জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মহাপরিচালক বরাবর দায়ের করা ওই অভিযোগপত্রে বলা হয়, আল-পূর্বাশা এন্টারপ্রাইজ-এর ম্যানেজার বসির উদ্দিন সরোয়ার সুদানে মানবপাচার চক্রের মূল সমন্বয়কারী। তার সহযোগী হিসেবে রয়েছে টেক্সটাইলকর্মী বেলারুশে মানবপাচার চক্রের সক্রিয় সদস্য হাসান সরোয়ার, সুদানি নাগরিক ইঞ্জিনিয়ার সিদ্দিক, হাসান ও মিরপুরের এসএম আজাদ। এর মধ্যে বেলারুশে মানবপাচার চক্রের সক্রিয় সদস্য হাসান সরোয়ার টেক্সটাইলকর্মী হওয়ার সুবাদে বাংলাদেশের বিভিন্ন মিলের কর্মীদের টার্গেট করে তাদেরকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে। সুদানি নাগরিক ইঞ্জিনিয়ার সিদ্দিক সামিটেক্স টেক্সাইল ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানির নামে মূল সমন্বয়কারী বসির সরোয়ারের সঙ্গে যোগসাজশ করে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগের প্রয়োজনীয় বন্দোবস্ত করে দেয়। হাসান বশির সরোয়ারের পক্ষে সুদান অফিসের সমন্বয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত। এছাড়া এসএম আজাদ বিদেশী টেক্সটাইল মিলে মাসিক ৩০-৩৫ হাজার টাকা বেতনে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে প্রতিটি কর্মীর কাছ থেকে ২ থেকে ৩ লাখ টাকা আদায় করেন। তাদের অভিযোগ সুদান নিয়ে যাওয়ার পর কোম্পানির প্রতিনিধিরা তাদের পাসপোর্টসহ সকল কাগজপত্র নিয়ে নেয়। তাদেরকে বিভিন্ন কোম্পানিতে ভাড়ায়ও কাজ করানো হতো। এর বিনিময়ে তাদের প্রতিমাসে বেতন দেয়া হতো ৮-৯ হাজার টাকা। ঠিকমতো খাবার দেয়া হতো না। খাবার ও চুক্তি অনুযায়ী বেতন বাড়ানোর কথা বললেই মারধর করা হতো। বাইরে যেতে দেয়া হতো না।

তারা আরও অভিযোগ করেন তাদের ৬ জন কর্মী জসিম উদ্দিন, এরশাদ, মিলন সরকার, সেকেন্দার আলী, সোহরাব ও কাইউম শেখকে লিবিয়ায় ভাল চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে আটকে রেখে নির্যাতন চালায় বশির উদ্দিন সরোয়ার, হাসান এবং তাজুল ইসলাম নামে পাচারকারী চক্রের অপর সদস্য। ২৫শে জুন খাবার, বেতন বৃদ্ধি এবং বাসস্থানের কথা বলায় নিরাপত্তাকর্মী এবং পাচারকারীেেদর গুলিতে ২ জন আহত হন। মোবাইলের মাধ্যমে তাদেরকে হুমকি দেয়া হয় বলেও অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেছেন তারা। তারা আরও উল্লেখ করেছেন এসব দুর্দশার মধ্যেই সুর মিলিটারি ক্লোথিং ফ্যাক্টরি নামে সুদানের আরেকটি প্রতিষ্ঠানের চাহিদাপত্র এনে আরও ৯৫ জন কর্মী প্রক্রিয়া চালাচ্ছে বসির উদ্দিন সরোয়ার ও হাসান। কর্মীদের দেয়া অন্যান্য দাবিগুলো মধ্যে রয়েছে চুক্তি অনুযায়ী বকেয়া বেতন পরিশোধ করা, ফেরত আসা কর্মীদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা এবং জড়িত দালালদের বিচার করা। ৩৭ জন কর্মী স্বাক্ষরিত মো. এরশাদের দায়ের করা ওই অভিযোগপত্র দু’টির অনুলিপি মন্ত্রণালয়ের সচিব, পুলিশ সদর দপ্তর (মানবপাচার মনিটরিং সেল) বিএমইটি’র মহাপরিচালক ও জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের কাছে দেয়া হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.