কেন এমন হচ্ছে by মীর আব্দুল আলীম

মানুষের বিবেক আজ প্রশ্নবিদ্ধ। বিবেকের কপাট  একে একে তালায় আটকে যাচ্ছে। আমরা যে যার মতো করে অপকর্মে লিপ্ত হচ্ছি। তাই কেবল অরাজকতা, হিংসা-হানাহানি আর খুন-খারাবির ঘটনা ঘটছে সর্বত্র। এতটুকুও বিবেকের দংশন করছে না কাউকে। দেশ জুড়ে একের পর এক ঘটছে নিষ্ঠুর সব ঘটনা। দেশে নিষ্ঠুরতার ব্যারোমিটার যে বেশ চড়েছে তা হাল সময়ে ঘটে যাওয়া কয়েকটি ঘটনায়ই অনুমান করা যায়। এ অবস্থায় আমজনতা বড্ড বিপদে আছে।  সাম্প্রতিক সময়ে তিনটি আলোচিত ঘটনা ঘটেছে নারায়ণগঞ্জ, ফেনী ও রাজধানীর পল্লবীর কুর্মিটোলায়। আর তিনটি ঘটনায়ই সরকারদলীয় রাজনীতিকদের জড়িত থাকার প্রমাণ মিলেছে। স্ব স্ব এলাকার সরকারদলীয় এমপিদের বিরুদ্ধে এসব ঘটনায় জড়িত থাকার আঙ্গুলি উঠেছে। নারায়ণগঞ্জে প্যানেল মেয়র নজরুলসহ ৭ হত্যাকা-, ফেনীর উপজেলা চেয়ারম্যান একরাম হত্যাকা- এবং সর্বশেষ রাজধানী ঢাকার পল্লবীতে বিহারি ক্যাম্পে আগুনে পুড়িয়ে ১০ হত্যা। এ তিনটি ঘটনায় নিষ্ঠুরভাবে জীবন দিতে হয়েছে ১৮ জনকে। এমন সব নিষ্ঠুর হত্যাকা-ে দেশের জনগণ হতভম্ব। ক্ষুব্ধ দেশবাসী। জনগণ ভোটাধিকার প্রয়োগ থেকে শুরু করে সব ধরনের নাগরিক অধিকার থেতে বঞ্চিত হচ্ছেন। নাগরিক অধিকারের কোনটাই পাচ্ছে না জনগণ। কিন্তু কেন এমন হচ্ছে? স্বাধীন দেশে এমনটাতো হওয়ার কথা নয়। নারায়ণগঞ্জে ৭ জনকে দিনে- দুপুরে অপহরণের পর হত্যার ঘটনা দেশবাসী নয়, বহির্বিশ্বেও আলোচিত হয়েছে। কলকাতায় নূর হোসেন গ্রেপ্তারের পর তাকে দেশে আনার প্রক্রিয়া চলছে। নূর সেদেশের পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে যারা আমাকে দেশ থেকে পালাতে সহযোগিতা করেছে তারাই এ ঘটনা ঘটিয়েছে। আর এনিয়ে অনেক রাঘববোয়াল এখন মহাচিন্তায় আছেন। নূর হোসেনকে দেশে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া চলছে। তাকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করলেই আড়ালে মুখ লুকিয়ে থাকা গডফাদার কে বা কারা তা বেরিয়ে আসবে। সম্প্রতি রাজধানীর পল্লবীর কুর্মিটোলায় বিহারি ক্যাম্পে পুড়িয়ে মানুষ হত্যা সে সঙ্গে সরকারদলীয় এমপির জড়িত থাকার অভিযোগ নিয়েও তোলপাড় চলছে সর্বত্র। সেখানে বিহারিদের ঘর তালাবদ্ধ করে শিশু, নারী, বৃদ্ধ, গর্ভবতী দুই নারীসহ ১০ জনকে হত্যার পরও বিবেকে নাড়া দেয়নি। কালশীর বিহারি পল্লীতে যারা বসবাস করেন তাদের কি মানুষ মনে করা হচ্ছে না? তা না হলে কেন আমরা মুখে কুলুপ এঁটে বসে আছি? সরকারই বা কেন চুপ? অবশ্য সরকারদলীয় এমপি ইলিয়াস মোল্লা নিহতের পরিবারকে কিছু অর্থ দেয়ার চেষ্টা করছিল। সে টাকা এমপির মুখের উপর ছুড়ে মেরে ভিকটিম পরিবারের সদস্য বলেছে, আপনার লোকজনই আমাদের হত্যা করেছে। জমি দখল নেয়ার জন্য যুবলীগের স্থানীয় নেতার নেতৃত্বে ঘরে আগুন দেয়া হয়েছে। পুলিশ সেখানে নীরব দর্শক ছিল। অথচ পরে আতশবাজি আর বিবদমান দুই গ্রুপের মধ্যকার সংঘর্ষে এতোগুলো মানুষ মারা গেছে বলে প্রচার করছে। ইলিয়াস মোল্লার ফাঁসির দাবিতে কালশীতে মিছিল হয়েছে। কিন্তু কিছুই হয়নি। আটকেপড়া পাকিস্তানিদের ক্যাম্পে যারাই হামলা করুক না কেন, তাদের আইনের হাতে সোপর্দ করা উচিত। এ জন্য দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করতে প্রয়োজনে বিচারবিভাগীয় তদন্তের কথা ভাবা যেতে পারে। আশা করি, কালশী বর্বরতার শিকার হতাহত এবং ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণে সরকার সম্ভাব্য সব ব্যবস্থা নেবে। দেশের নিষ্ঠুরতার ব্যারোমিটার একদম নিচে নেমে এসেছে। মানুষ এখন একেবারেই মূল্যহীন। সভ্যতা, মানবতা, সহনশীলতা, মমত্ববোধ, ভালবাসা আজ নির্বাসিত দেশ থেকে। ভদ্রতা, সভ্যতা, মায়া-মমতা যেন দেশ থেকে উধাও। নোংরামি, হিংস্রতা, দুর্নীতি, প্রতিহিংসাপরায়ণতা, সন্ত্রাস, খুন-খারাবিসহ অপরাধের সমস্ত কিছু দেশে ভর করেছে। সর্বদাই নোংরা, নিষ্ঠুর এবং ঘৃন্য ঘটনা ঘটছে তো ঘটছেই। এ থেকে জনগণ মুক্তি চায়। চাইলেই কি মুক্তি মিলবে?
বর্তমান সময়ে নানা ইস্যুতেই যেভাবে হত্যাকা- হচ্ছে, তা কোন সভ্য মানুষের কাজ হতে পারে না। সমাজ থেকে ঘৃণ্যরূপী এ মানুষকে যথাযথ শাস্তির আওতায় না আনা গেলে বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়বে দেশ। দেশজুড়ে  কেবল গুম, খুন, হুঙ্কার আর অশান্তির দাবানল। জনগণ শান্তি চায়, জীবনের নিরাপত্তা চায়, চায় একটু স্বস্তি। ঘুমানোর সময় নিশ্চিন্তে ঘুমোতে চায়। জনগণকে স্বস্তি, শান্তি এবং জানমালের নিরাপত্তা দিতে হবে, এগিয়ে আসতে হবে সরকারকেই।

No comments

Powered by Blogger.