ইরাক কি ভেঙে যাচ্ছে?

ইরাকে একদিকে রাজনৈতিক সংকট আর অন্যদিকে সুন্নি জঙ্গিদের উত্থান ও অগ্রযাত্রার ফলে ভাঙনের আশঙ্কা ক্রমেই বাড়ছে। সংকট নিরসনে একটি সমন্বিত সরকার গঠনের জন্য আন্তর্জাতিক চাপ থাকলেও দেশটির বিভিন্ন সম্প্রদায়ের রাজনৈতিক নেতারা মতৈক্যে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়েছেন। নতুন পার্লামেন্টের প্রথম অধিবেশন থেকে সুন্নি ও কুর্দি সম্প্রদায়ের নেতারা গত মঙ্গলবার ওয়াকআউট করেছেন। কারণ শিয়া সম্প্রদায়ের আইনপ্রণেতারা ওই দিন নুরি আল-মালিকির পরিবর্তে নতুন একজন প্রধানমন্ত্রী বাছাই করতে পারেননি। ফলে দেশটির অখণ্ডতা রক্ষায় শিগগিরই একটি জাতীয় ঐক্যের সরকার প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে এসেছে।

এদিকে, সুন্নি জঙ্গিদের উত্থানের ঘটনাটিকে একটি সুযোগ হিসেবে কাজে লাগাতে চাইছে কুর্দি সম্প্রদায়। তারা একটি স্বাধীন কুর্দিস্তান প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে। এ লক্ষ্যে কয়েক মাসের মধ্যেই গণভোট হবে বলে জানিয়েছেন কুর্দি নেতারা। আর ইরাক ও সিরিয়ার যেসব এলাকা সুন্নি জঙ্গিরা দখল করে নিয়েছে, সেখানে আল-কায়েদার একজন সাবেক নেতার নেতৃত্বে ‘খিলাফত’ প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
এ অবস্থায় ইরাকে রাষ্ট্রীয় ভাঙন ঠেকাতে সব সম্প্রদায়ের অংশগ্রহণের ভিত্তিতে একটি সরকার গঠন করতে রাজনীতিকদের চাপ দেওয়া হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র, জাতিসংঘ, ইরানের সরকার এবং ইরাকের শিয়া সম্প্রদায়ের একজন প্রভাবশালী নেতা ইরাকিদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। সম্মিলিত একটি সিদ্ধান্ত জরুরি হওয়া সত্ত্বেও মঙ্গলবার নতুন পার্লামেন্টের প্রথম অধিবেশনে অচলাবস্থা তৈরি হয়। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে আবার অধিবেশন বসার সম্ভাবনা নেই। ফলে দেশটিতে চলমান অস্থিরতা চলবে এবং মালিকিও তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান পদে বহাল থাকবেন।
প্রয়াত স্বৈরশাসক সাদ্দাম হোসেনের পতনের পর থেকে ইরাকি সরকারব্যবস্থায় প্রধানমন্ত্রী পদে সব সময় একজন শিয়া মুসলমানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। আর পার্লামেন্ট স্পিকার পদে একজন সুন্নি এবং প্রেসিডেন্টের আলংকারিক পদে কুর্দি সম্প্রদায়ের একজন ব্যক্তিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
নতুন প্রধানমন্ত্রী বাছাইয়ের জন্য শিয়া রাজনৈতিক জোট সম্প্রতি বেশ কয়েকবার বৈঠক করেছে। কিন্তু এখনো মালিকির বিকল্প হিসেবে কাউকে বাছাই করা হয়নি। আবার তাঁকে তৃতীয় মেয়াদে দায়িত্ব দেওয়ার ব্যাপারেও মতৈক্য হয়নি। সুন্নি সম্প্রদায়ের রাজনীতিকেরা বলছেন, শিয়া নেতারা প্রধানমন্ত্রী বাছাই করার আগ পর্যন্ত তাঁরা পার্লামেন্টে স্পিকার পদে কাউকে মনোনীত করবেন না।
সুন্নি নেতা ও সাবেক স্পিকার ওসামা আল-নুজাইফি সতর্ক করে দিয়ে বলেন, রাজনৈতিক সমাধান না হলে অস্ত্রের ঝনঝনানি আরও হবে এবং দেশ একটি অন্ধকার সুড়ঙ্গে প্রবেশ করবে।
শিয়া আইনপ্রণেতারা অবশ্য সুন্নি ও কুর্দি নেতাদের ওপর দায় চাপাতে চাইছেন। শিয়া সম্প্রদায়ের নেতাদের যুক্তি, সাংবিধানিক প্রক্রিয়া অনুযায়ী সবার শেষে প্রধানমন্ত্রী মনোনীত করার কথা। পার্লামেন্টের প্রবীণতম সদস্য মেহদি আল-হাফিদ এখন ভারপ্রাপ্ত স্পিকারের দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি বলেন, আলোচনায় মতৈক্য হলে আগামী সপ্তাহে অধিবেশন শুরুর সম্ভাবনা রয়েছে।
এদিকে, ইসলামিক স্টেট অব দি ইরাক অ্যান্ড দ্য লেভান্টের (আইএসআইএল) জঙ্গিদের বিরুদ্ধে সরকারি বাহিনীর লড়াই তিন সপ্তাহ ধরে অব্যাহত রয়েছে। জঙ্গি গোষ্ঠীটি চলতি সপ্তাহে নিজেদের নেতা আবু বকর আল-বাগদাদিকে ‘খলিফা’ ঘোষণা করেছে। সুন্নিপন্থী ওই জঙ্গিরা দেশটির উত্তরাঞ্চলের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ এলাকা দখল করে নিয়েছে। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, কেবল জুন মাসেই ইরাকে অন্তত দুই হাজার ৪০০ মানুষ নিহত হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী মালিকিকে ক্ষমতা ছাড়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ্যে কিছু না বললেও দেশটিতে অধিকতর জাতিগত অংশগ্রহণমূলক সরকার প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়েছে। ইতিমধ্যে ৩০০ জন বিশেষ সামরিক উপদেষ্টা ইরাকের সরকারি বাহিনীকে সহায়তার জন্য বাগদাদে পৌঁছেছেন। আর দেশটিতে মার্কিন দূতাবাসকর্মীদের নিরাপত্তার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ইতিমধ্যে কয়েক দফা সেনা পাঠিয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.