ভয় পেয়েছিলেন মেসি!

সুপার হিরোরাও ভয় পান! পানই তো। লিওনেল মেসি অবলীলায় সেই ভয়ের কথা বলেও দিতে জানেন। সেই ভয়, বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নেয়ার। সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে স্নায়ুক্ষয়ী ম্যাচে ডি মারিয়ার একমাত্র গোলে জিতেছে আর্জেন্টিনা। ১২০ মিনিটের লড়াইয়ের একেবারে শেষ মুহূর্তে আবারও আর্জেন্টিনার ত্রাতা মেসিই বটে। তার বানিয়ে দেয়া বলকে জালে জড়িয়েছেন ডি মারিয়া। দলকে নিয়ে গেছেন কোয়ার্টার ফাইনালে। কিন্তু পরশু সাও পাওলোর করিন্থিয়ান্স অ্যারেনার এই লড়াই চারবারের বিশ্বসেরা ফুটবলারের পুরস্কার জেতা মেসিকেও নার্ভাস করে দিয়েছিল। তবে সব শংকা কাটিয়ে জিতেছে আর্জেন্টিনা। ৫ জুলাই ব্রাসিলিয়ায় বেলজিয়ামের বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালে খেলবে তারা।

নকআউট পর্বের ম্যাচে আর্জেন্টিনার মতো দলের বিপক্ষে ডিফেন্স করে খেলাই ভালো মনে করেছে সুইজারল্যান্ড। তাতে তারা লাভবানও হয়েছে। হতাশা ছড়িয়ে গেছে ১৯৭৮ ও ১৯৮৬ চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনার খেলোয়াড়দের মধ্যে। সময় গড়িয়েছে, গোল হয় না। ৯০ মিনিটেও হল না। মনে হচ্ছিল ১২০ মিনিটেও হবে না। আর্জেন্টিনার সব আক্রমণ সুইজারল্যান্ডের ডিফেন্সের দেয়ালে ধাক্কা খেয়ে ফিরে আসে। মনে হচ্ছিল ম্যাচ যাচ্ছে পেনাল্টি শুট আউটে। ১২০ মিনিটে ২৯টি শট নিয়েছে আর্জেন্টিনা। টার্গেটে শট গেলেও কোনো না কোনোভাবে নিজেদের বাঁচিয়ে নিয়েছে সুইসরা।
এই যখন অবস্থা তখন একজন খেলোয়াড়ের মনস্তাত্ত্বিক অবস্থা কেমন হতে পারে? শোনা যাক মেসির অবস্থা কী হয়েছিল তা। ‘দুশ্চিন্তায় ভুগছিলাম। তেমনটাই লাগছিল।’ টানা চতুর্থ খেলায় ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার হাতে মেসি বলেছেন, ‘আমার মনে হয় আর সবাই আমার মতো নার্ভাস হয়ে পড়েছিল। আমি নার্ভাস হয়ে পড়েছিলাম খুব। কারণ, আমরা গোল করতে পারছিলাম না। আর যে কোনো ভুল আমাদের বিশ্বকাপ থেকে বিদায় করে দিতে পারে।’ বিশ্বকাপ থেকে আউট হয়ে যাওয়ার ভয় ছিল। আর একটা বিষয় এড়াতে চাইছিলেন। মেসির ভাষায়, ‘সময় পার হয়ে যাচ্ছিল। আর আমরা চাইছিলাম না ম্যাচটা কোনোভাবে পেনাল্টি শুট আউটে যাক।’ ১১৮ মিনিটে বলটা নিয়ে ডি বক্সে ঢুকে পড়ছেন মেসি। একক চেষ্টায় গোল করবেন। হঠাৎ ডান পাশে বলটা বাড়ালেন। ডি মারিয়া করলেন লক্ষ্যভেদ। যখন সবাই তাকে জয়ের নায়ক বলছে তখন ডি মারিয়া বললেন, ‘আমি নই। জয়ের নায়ক আমাদের ২৩ খেলোয়াড় আর সব স্টাফ।’ মেসি একবার ভেবেছিলেন নিজেই গোলে শট নেবেন। ওই গোলের প্রসঙ্গেই আর্জেন্টাইন অধিনায়ক মেসি বলেছেন, ‘প্রথমে ভাবলাম আমি নিজে চেষ্টা করি। পরে ডি মারিয়াকে দেখলাম। ভাগ্য ভালো, সে গোল করতে পারল। এটাই ফুটবল। ভাগ্য আমাদের সঙ্গে ছিল।’কোচ আলেসান্দ্রো সাবেলা ভেবেছিলেন, নির্ধারিত সময়েই ম্যাচের ফল এসে যাবে। তারা জিতবেন। কিন্তু সেই জয় পেতে আরও বাড়তি ৩০টি স্নায়ুক্ষয়ী মিনিট কাটাতে হয়েছে। এখন কি ব্রাজিলের সঙ্গে ফাইনালের কথা ভাবতে পারছেন সাবেলা। কোচ এখনই মারাকানার ফাইনালে পৌঁছে যেতে নারাজ। ‘আমাদের স্বপ্ন বলুন আর যা, তা হল আগামী ম্যাচ পর্যন্ত। ওটা খেলে সেমিফাইনালে ওঠার চেষ্টা করতে হবে। এর চেয়ে বেশি দূরে তাকাতে চাই না।’ ধাপে ধাপে এগিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য সাবেলার, ‘যখন মাত্র এক পা ফেলা যায়, তখন দুই পা ফেলার ভুল কিছুতেই করতে চাই না আমরা।’
সাবেলার বিশ্লেষণে ম্যাচের প্রথমার্ধটা ছিল দুই দলেরই। তারপর ম্যাচ ঝুঁকে পড়ে আর্জেন্টিনার দিকে। সাবেলার ভাষায়, ‘দ্বিতীয়ার্ধে আমরা অনেক ভালো খেলেছি। গোল করার পাঁচ থেকে ছয়টা সুযোগ পেয়েছিলাম। নির্ধারিত সময়েই জয় আমাদের প্রাপ্য ছিল। ওটাই আদর্শ হতো। তবে অতিরিক্ত সময়ে আমরা আরও বেশি সুযোগ তৈরি করেছি, খুব কঠিন এক দলের বিপক্ষে সুন্দর একটা খেলা খেলেছি আমরা।’ ম্যাচ শেষে মেসির প্রশংসায় মুখর হয়েছেন সুইজারল্যান্ডের জার্মান কোচ ওটমার হিজফেল্ড, ‘তিন-চারজন খেলোয়াড় নিয়োগ করে মেসিকে থামাতে চেয়েছিলাম। এ রকম একটা দলের বিপক্ষে শুধু একজনের দিকে চোখ রাখলে চলে না। ডি মারিয়া সেটাই প্রমাণ করেছে। অসাধারণ ফিনিশিং তার।’ এবার প্রতিপক্ষ বেলজিয়াম। এই টুর্নামেন্টের ডার্ক হর্স। দ্বিতীয় রাউন্ডে যুক্তরাষ্ট্রকে ২-১ গোলে হারিয়ে বহুকাল পর কোয়ার্টার ফাইনালে এসেছে। শেষবার শেষ আটে খেলেছে ১৯৮৬ সালে। সেবার ম্যারাডোনার আর্জেন্টিনা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পথে বেলজিয়ামকে উড়িয়ে দিয়ে গেছে। তৃতীয় শিরোপার খোঁজে মেসির আর্জেন্টিনা। এবার কী হবে? জবাব মিলবে রোববার। এএফপি/ওয়েবসাইট।

No comments

Powered by Blogger.