বিশ্ববিদ্যালয়-ব্যবসা- প্রতারকদের হটান, যোগ্যদের পুরস্কৃত করুন

শিক্ষা যখন ব্যবসা, ব্যবসা যখন দুর্নীতিগ্রস্ত, তখন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়–ব্যবসাও দুর্নীতিগ্রস্ত না হয়ে পারে না। সম্প্রতি ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) প্রতিবেদনে অর্থের বিনিময়ে সনদ বিক্রিসহ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনার প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে যথেচ্ছ দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া গেছে। যে মধ্যবিত্ত সমাজ সর্বজনের (পাবলিক) বিশ্ববিদ্যালয়ে সন্তানকে দিতে না পেরে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের খরচের বোঝা বহন করছে, তাদের সঙ্গে এমন প্রতারণার দায় তদারককারী প্রতিষ্ঠানগুলোও এড়াতে পারে না।
টিআইবির এই প্রতিবেদনকে ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছে স্বয়ং শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তাদের উচিত ছিল অভিযোগগুলো তদন্ত করে বিহিত করা। তা না করে অভিযোগ অস্বীকার করে শিক্ষা মন্ত্রণালয় আসলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যেমন চলছে, তেমনি চলার সবুজসংকেতই দিল।
শিক্ষার সঙ্গে সঙ্গে নীতিনৈতিকতা ও জাতির মেধাসম্পদের বিকাশের প্রশ্ন জড়িত। তাই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে দুর্নীতির এমন মচ্ছবে সরকার নির্বিকার থাকলেও দেশবাসী উদ্বিগ্ন না হয়ে পারে না। ঘুষ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের অনুমতি থেকে নিয়োগ, পাঠ্যক্রম অনুমোদন, অডিটের মতো যাবতীয় প্রশাসনিক বিষয় যদি তারা সম্পন্ন করে থাকে, সেখানে শিক্ষাদান গুরুত্ব পেতে পারে না।
প্রশ্ন হচ্ছে, এসব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনি শর্ত পূরণ না করে থাকলে কীভাবে অনুমোদন পেল? এখানেই শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসির দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো সেই শর্ত পূরণ করছে কি না, সেটি তদারক করা। কিন্তু তারা যদি তদারকির কাজটি সুষ্ঠুভাবে না করে, তাহলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নিয়মের অধীনে নিয়ে আসা যাবে না। আর সে ক্ষেত্রে উচ্চশিক্ষার নামে এ ধরনের দুর্নীতি-জালিয়াতি চলতেই থাকবে।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এই বাস্তবতা বাংলাদেশে শিক্ষার সার্বিক পতন এবং সর্বগ্রাসী দুর্নীতিরই প্রতিফলন। যদি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন শিক্ষা প্রশাসন এবং স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) দুর্নীতিমুক্ত থাকত, তাহলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পক্ষে এ রকম দুর্নীতিতে মেতে ওঠা সম্ভব হতো না। দ্বিতীয়ত, সরকার যদি শিক্ষার মানের প্রশ্নে অবহেলা না করত, তাহলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আজ শিক্ষাদানের উপযুক্ত পরিবেশ বিরাজ করত। টিআইবির প্রতিবেদনকে আমলে নিয়ে সরকারের উচিত ছিল ক্ষমতাসম্পন্ন কমিশন করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শুদ্ধি অভিযান চালিয়ে যোগ্যকে পুরস্কৃত করা এবং অযোগ্যদের বিতাড়িত করার বিকল্প নেই।
আশার কথা, এত সব অনিয়মের মধ্যেও কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় একাডেমিক উৎকর্ষে অন্যদের চেয়ে অনেক এগিয়ে গেছে। উচ্চশিক্ষিত জনসম্পদ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকাও প্রয়োজনীয়। কিন্তু বাণিজ্যিক শিক্ষাব্যবস্থা যেভাবে কালোটাকা সাদা করার ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে, তাতে এ আশা বিফলে যেতে পারে। এ পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার দায়িত্ব সরকারের। আইনের কঠোর প্রয়োগের পাশাপাশি শিক্ষার মানের বিষয়ে কোনো ছাড় দেওয়ার সুযোগ যেন তাতে না থাকে।

No comments

Powered by Blogger.