ভীতিজনক রাষ্ট্রে পরিণত বাংলাদেশ- ডয়েচে ভেলের রিপোর্ট

জার্মান বেতার ডয়েচে ভেলে গত ১লা এপ্রিল বাংলাদেশের মানবাধিকার কর্মীদের ওপর একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে তারা বলেছে, নিপীড়ন চালানোর কারণে বাংলাদেশের মানবাধিকার কর্মীদের কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। অ্যাক্টিভিস্টদের ওপর হামলায় বাংলাদেশ একটি ভীতিজনক রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। দেশটির মানবাধিকার পরিস্থিতির প্রতি বিশ্ব সম্প্রদায়ের মনোযোগ বাড়তে থাকে যখন সরকারি নিরাপত্তা বাহিনী বিরোধী দল, যারা যুদ্ধপরাধের দায়ে বিচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছিল তাদের ওপর হামলা ও নিপীড়ন বাড়িয়ে দেয়।
রিপোর্টে বলা হয়, চলতি বছরের গোড়ায় রাজনৈতিক সহিংসতা বেড়ে যায়, যখন ৫ই জানুয়ারি অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচন বিরোধী দল বয়কট করে। রাইট গ্রুপগুলো বলেছে, গত দু’বছরে শ’ শ’ লোককে হত্যার শিকার হতে হয়েছে। প্রতিবাদকারীদের ওপর সরকারি বাহিনীর নিপীড়ন অনেক বেড়ে গেছে। রাজনৈতিক সহিংসতা ছাড়াও বিচারবহির্ভূত হত্যাকা- ও গুমের ঘটনায় রাইট গ্রুপগুলো উদ্বেগ প্রকাশ করছে। গত ১৫ই মে  আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নূর খান লিটন অল্পের জন্য অপহরণ থেকে রক্ষা পান। তিনি ডয়েচে ভেলেকে বলেছেন, তিনি র‌্যাবের দ্বারা কথিতমতে সংঘটিত কয়েকটি হত্যাকা-ের তদন্ত করছিলেন। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয় পরিচালক ব্র্যাড অ্যাডামস বলেছেন, র‌্যাব অনেক ক্ষেত্রে ঠা-ামাথায় নিরীহ মানুষকে হত্যা করে থাকে, এরপর ক্রসফায়ার হিসেবে চালানোর চেষ্টা করে। বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন সরকার দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক রাইট গ্রুপগুলো দ্বারা সমালোচিত হচ্ছেন যে, তারা রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়ন করে চলেছেন। অধিকারের আদিলুর রহমান ডয়েসে ভেলেকে বলেছেন, কর্তৃপক্ষ এমন সব পদক্ষেপ নিচ্ছে যাতে অধিকার এখন বন্ধ হওয়ার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের দক্ষিণ এশীয় পরিচালক মীনাক্ষী গাঙ্গুলি ডয়েসে ভেলেকে বলেন, বাংলাদেশ সরকার তথ্য প্রযুক্তি আইনকে কেবল ব্লগার ও অ্যাক্টিভিস্টদের বিরুদ্ধেই ব্যবহার করছেন না- একে টিভি চ্যানেল বন্ধ করে দেয়ার কাজেও ব্যবহার করছে। মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান বলেছেন, এনজিও সংক্রান্ত প্রস্তাবিত আইনের খসড়া ইতিমধ্যেই উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। কারণ এটা পাস হলে সরকার এনজিওর ওপর সরাসরি হস্তক্ষেপ করতে পারবে। ব্র্যাড অ্যাডামসের মূল্যায়ন হলো: সরকার মানবাধিকার গ্রুপগুলোর জন্য একটি নেতিবাচক পরিবেশ সৃষ্টি করে চলেছে। নূর খান লিটনের কথায়, ‘রাষ্ট্রীয় যন্ত্রের দ্বারা মানবাধিকার লঙ্ঘনের ফলে ভয়মুক্ত ও স্বাধীনভাবে কথা বলার সুযোগ প্রতি মিনিটে সঙ্কুচিত হচ্ছে।’

No comments

Powered by Blogger.