বেনাপোল সীমান্তে বেড়েছে সোনা চোরাচালান by নূর ইসলাম

বেনাপোল সীমান্ত পথে সোনা চোরাচালান বাড়ছে। সহজ পারাপার আর শক্তিশালী সিন্ডকেট থাকার কারণে পাচারকারীরা সোনা  চোরাচালানের ক্ষেত্রে এই রুটকে নিরাপদ ভাবতে শুরু করেছেন। এই কারণে এই রুটে সোনা চোরাচালানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসনের দুর্বলতা এবং রাজনৈতিক মদদপুষ্ট হওয়ার কারণে এই সোনা চোরাচালান সিন্ডিকেটকে দমন করতে পারছে না সীমান্তরক্ষী বিজিবি।
গত সাত মাসে এ সীমান্তপথে ভারতে পাচারের সময় ১৮টি  সোনার চালান আটক হয়েছে। এর মধ্যে সাতটি চালান আটক করেছে বিজিবি। আর বাকি ৮টি চালান আটক করেছে বিএসএফ ও পুলিশ সদস্যরা। এছাড়া ভারতীয় কাস্টমস আটক করে তিনটি চালান।
যশোর ২৬ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মতিউর রহমান জানান, ভারতে সোনার চাহিদা বেশি থাকায় আন্তর্জাতিক  সোনা পাচারকারী চক্রের সদস্যরা বাংলাদেশকে সোনা পাচারের নিরাপদ রুট হিসেবে বেছে নিয়েছে। বিদেশ থেকে বিমানপথে সোনা আসার পর শুল্ক কর্মকর্তাদের নজর এড়িয়ে  বেশকিছু চালান দেশের ভেতরে ঢুকে পড়ছে। পরবর্তীতে সীমান্তের বৈধ ও অবৈধপথে বিভিন্নভাবে ভারতে সোনা পাচার হচ্ছে।
বেনাপোল পোর্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অপূর্ব হাসান জানান, প্রতিদিন তার কাছে  সোনা পাচারের দু’-একটি তথ্য আসছে। কিন্তু সোনার চালান আটক করলে বিভিন্ন সমস্যায় পড়তে হয়। এ কারণে সোনা আটকে পুলিশের আগ্রহ কম। ইতিপূর্বে সোনার একটি বড় চালান আটক করে একজন ওসি’র চাকরি হারাতে হয়েছে। ফলে অনেক ভেবে চিন্তে পুলিশ সোনার চালান আটকে আগ্রহ হারাচ্ছে।
২৭শে জুন বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে ভারতে প্রবেশের সময়  নোম্যান্সল্যান্ড থেকে ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম ওজনের ১৩টি স্বর্ণের বারসহ এক ভারতীয় পাসপোর্টধারী যাত্রীকে আটক করে ভারতীয় কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। ২৫শে জুন যশোরের পুলেরহাট এলাকা থেকে সাড়ে ৪ কেজি  সোনাসহ ৪ ভারতীয় নাগরিককে আটক করে বিজিবি সদস্যরা। ২০শে জুন বাংলাদেশ থেকে  বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে ৫  কেজি ৭০০ গ্রাম ওজনের  সোনার বার পাচারের সময় ভারতীয় কাস্টমস কর্মকর্তারা  সোনাসহ ৪ ভারতীয় পাসপোর্টধারী যাত্রীকে আটক করে। ১৮ই জুন বেনাপোল  চেকপোস্ট দিয়ে ৩৬ পিস সোনার বার ভারতে পাচারের সময় অপু নামে বাংলাদেশী এক সিঅ্যান্ডএফ কর্মচারীকে আটক করে বিএসএফ। ৭ই জুন  বেনাপোল নো-ম্যান্সল্যান্ড এলাকা  থেকে সাড়ে ৪ কেজি সোনার বারসহ ২ ভারতীয় পাসপোর্টধারী যাত্রীকে আটক করে ভারতীয় কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। তারা  বেনাপোল কাস্টমসের তল্লাশি  শেষে ভারতে যান। ২৬শে মে  বেনাপোলের পুটখালী সীমান্তপথে ভারতে পাচারের সময় ১ কেজি ১০০ গ্রাম ওজনের (১০টি)  সোনার বারসহ মিঠুন নামে স্থানীয় এক পাচারকারীকে আটক করে বিজিবি। ১৬ই মে  বেনাপোল চেকপোস্ট এলাকা  থেকে পাঁচটি সোনার বারসহ জসিম ও উত্তম নামে দুই পাচারকারীকে আটক করে বিজিবি। ১৪ মে বেনাপোলের পুটখালী সীমান্ত থেকে ২০টি  সোনার বারসহ শাহ্‌ আলম নামে একজনকে আটক করে বিজিবি। ২৪শে এপ্রিল বেনাপোলের ঘিবা সীমান্তপথে ভারতে পাচারের সময় পুতুল নামে ভারতীয় এক নারীকে পাঁচটি সোনার বারসহ আটক করে বিজিবি। ১২ই এপ্রিল নো-ম্যান্সল্যান্ড থেকে এক  কেজি সোনার বারসহ টাক কামাল নামে এক বাংলাদেশী সিঅ্যান্ডএফ কর্মচারীকে আটক করে বিএসএফ। ৫ই ফেব্রুয়ারি  বেনাপোল চেকপোস্টের  নোম্যান্সল্যান্ড থেকে গোপাল হালদার নামে এক ভারতীয় রপ্তানিকারককে ২২টি সোনার বারসহ আটক করে বিএসএফ সদস্যরা। ৯ই ফেব্রুয়ারি ২১ পিস  সোনার বারসহ এক কুলিকে ভারতের পেট্রাপোল সীমান্ত  থেকে আটক করে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ। ২৫শে জানুয়ারি বেনাপোল  চেকপোস্টের নো-ম্যান্সল্যান্ড এলাকা থেকে ২০টি সোনার বারসহ আলী কদর (৩২) নামে এক ভারতীয় লেবারকে আটক করে বিএসএফ। ১৪ই জানুয়ারি  বেনাপোলের কাগজপুকুর এলাকা  থেকে ৩৬টি সোনার বারসহ  মোমিন নামে এক বহনকারীকে আটক করে পুলিশ। এ ছাড়া ২০১৩ সালের ২৫ নভেম্বর পুটখালী সীমান্ত থেকে কামরুল ইসলাম নামে এক যুবককে ১২টি  সোনার বারসহ আটক করে বিজিবি। ২১শে নভেম্বর পুটখালী সীমান্ত থেকে ১৫টি সোনার বারসহ তুহিন নামে এক পাচারকারীকে আটক করে বিজিবি।
বেনাপোল কাস্টমসের সহকারী কমিশনার সাধন কুমার কু-ু বলেন, ‘বেনাপোলে যাত্রীদের মালামাল ও দেহ পরীক্ষার জন্য আমাদের ৪টি স্ক্যানিং মেশিন, ১০টি হ্যান্ড মেটাল ও ২টি আর্চওয়ে মেশিন রয়েছে। কিন্তু একটি আউটগোয়িং স্ক্যানিং  মেশিন, ২টি আর্চওয়ে মেশিন বিকল হয়ে আছে, যে কারণে  সোনা পাচার রোধ করা যাচ্ছে না।

No comments

Powered by Blogger.