পতনের বিপরীতে একজন সুমাইয়া

সততার জন্য পুরস্কৃত সুমাইয়া
সুমাইয়া বিনতে আফসারদের দিকে তাকিয়ে আছি, যখন কোথাও কোনো আশার আলো দেখছি না। সুমাইয়া ক্লাস নাইনের ছাত্রী। ঢাকার রাজউক উত্তরা মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজে পড়ে। তার সঙ্গে দেখা হয়েছিল মাস দেড়েক আগে। তাদের স্কুলে গিয়েছিলাম কিশোর আলোর হয়ে। গল্প লেখা ও আঁকা বিষয়ে কথা বলতে। মঞ্চে ছেলেমেয়েদের ডেকে এনে নানা কথা জিজ্ঞেস করছিলাম। তারাও নানা প্রশ্ন করছিল। হঠাৎই সুমাইয়া মাইকে বলল, ‘একটা প্রশ্ন আছে।’ আমি বললাম, ‘বলো।’ সে বলতে লাগল, ‘গত বছরের কথা। আমি জুনিয়র সমাপনী পরীক্ষা দিচ্ছি। বাংলা দ্বিতীয় পত্র পরীক্ষার সময় শোনা গেল, প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে। আমার কোনোই ইচ্ছা নেই যে আমি ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্র দেখব। বিজ্ঞান পরীক্ষার আগে জোর গুজব, প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে। আমি সেসবে কান না দিয়ে বাসায় নিজের মতো করে পড়ছি। বন্ধুবান্ধব প্রশ্নপত্রের কপি নিয়ে বাসায় চলে এল। সবাই বলাবলি করতে লাগল, প্রশ্নপত্রটা একবার দেখে নেওয়া উচিত। বাসারও কারও কারও একই মত। আমি আমার ভাইয়া-আম্মুকে স্পষ্ট বলে দিলাম, আমি প্রশ্নপত্র দেখব না। তাঁদের মুখ দেখে মনে হলো, তাঁরাও চান আমি প্রশ্নপত্র দেখি। আমি নিজের ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিলাম। নিজের মতো প্রস্তুতি নিলাম। পরের দিন পরীক্ষা দিতে গেলাম। পরীক্ষা ভালো হলো। পরে আমি ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্রের সঙ্গে আসল প্রশ্নপত্র মিলিয়ে দেখলাম। কিছুই মেলেনি। পরীক্ষা আমার ভালো হয়েছিল। আমার সততার পুরস্কার আমি পেয়েছি। আমি উত্তরা থানার মধ্যে পঞ্চম হয়ে বৃত্তি পেয়েছি। স্যার, এই রকম ক্ষেত্রে আমাদের কী করা উচিত, যখন চারপাশ থেকে চাপ আসে কোনো অনৈতিক কাজ করার জন্য?’ আমি বললাম, ‘তুমি তো আসলে আমাকে কোনো প্রশ্ন কেরানি। তোমার কথার মধ্য দিয়ে আমাদের চির পুরোনো সত্য বার্তাটাই দিয়েছ। সততাই সর্বশ্রেষ্ঠ পন্থা।’ আমরা সবাই মিলে তালি দিলাম সুমাইয়ার জন্য।
কিছুদিন আগে আবার গেছি রাজউক উত্তরা মডেল কলেজে। বইমেলা চলছিল তখন। গিয়ে দেখি, কলেজের দেয়ালে সুমাইয়ার ছবি। কলেজের অধ্যক্ষ তাকে পুরস্কার দিচ্ছেন তার সততার জন্য। দেখে খুব ভালো লাগল। এই সুমাইয়ারাই আমাদের ভবিষ্যৎ। তারা যখন দেশের ভার নেবে, সেদিনকার বাংলাদেশটা নিশ্চয়ই অন্য রকম হবে। কিন্তু বর্তমানের বাংলাদেশের দিকে কে তাকাবে? দুই দিন আগে রাতের বেলা ই-মেইল পেলাম। এক পরীক্ষার্থী রসায়নের ফাঁস হয়ে যাওয়া প্রশ্নপত্র পাঠিয়ে রেখেছে প্রমাণ হিসেবে। আমাকে পাঠিয়েছে, আর পাঠিয়েছে মুহম্মদ জাফর ইকবাল স্যারকে। গতকাল আমি ই-মেইলের জবাব দিলাম, বললাম, এই প্রশ্ন কি মিলেছে পরীক্ষার আসল প্রশ্নের সঙ্গে? মুহম্মদ জাফর ইকবাল স্যারের কাছ থেকে জবাব এল, ‘আমি অনেকগুলো প্রশ্নই পেয়েছি। বেশির ভাগই পরীক্ষার প্রশ্নের সঙ্গে মিলে গেছে।’ মুহম্মদ জাফর ইকবাল এ নিয়ে আগেই কলাম লিখেছেন। তিনি লিখেছেন, ‘আমি একটিবারও ভাবিনি আমার দেশের সরকার, সরকারের শিক্ষাব্যবস্থা এই পরীক্ষার ব্যাপারে তাদের সব নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বসে থাকবে। তারা পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হতে দেবে আর সেটি নিয়ে তাদের বিন্দুমাত্র দায়িত্ববোধ থাকবে না। এই সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে আমি অনেক কাজ করেছি। এখন আমি একধরনের বিস্ময় নিয়ে এই মন্ত্রণালয়টির দিকে তাকিয়ে থাকি। আমার নিজের চোখকে বিশ্বাস হয় না, যখন দেখি, এই দেশের এত বড় বিপর্যয় নিয়ে তাদের কোনো রকম প্রতিক্রিয়া নেই!’ মুহম্মদ জাফর ইকবাল স্যার কোনো বিষয়ে যখন লেখেন, তখন সাধারণত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের টনক নড়ে। স্যার নিজেও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নানা রকমের কাজ করে দিয়েছেন, তাঁর কলামেই সে কথা তিনি বলেছেন। কিন্তু এবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কোনো রকমের বিকার লক্ষ করা যাচ্ছে না। শুধু শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের

No comments

Powered by Blogger.