ভিয়েতনামে সহিংস বিক্ষোভ, ১৬ চীনাসহ ২১ জন নিহত

নিরাপত্তা নিয়ে আশঙ্কায় ভিয়েতনামে কর্মরত চীনা
নাগরিকেরা সেভয় রিং প্রদেশের সীমান্ত দিয়ে
গতকাল কম্বোডিয়ায় চলে যাচ্ছেন। রয়টার্স
ভূখণ্ড নিয়ে ভিয়েতনামে চীনবিরোধী বিক্ষোভ রক্তাক্ত সহিংসতায় রূপ নিয়েছে৷ ভিয়েতনামের মধ্যাঞ্চলীয় হা তিন প্রদেশে গত বুধবার রাতে সহিংসতায় অন্তত ২১ জন নিহত হয়েছেন৷ এঁদের মধ্যে প্রায় ১৬ জন চীনা নাগরিক৷ তবে স্থানীয় গণমাধ্যমে নিহতের সংখ্যা একজন বলে উল্লেখ করা হয়৷ দক্ষিণ চীন সাগরে বিরোধপূর্ণ এলাকায় চীনের তেল অনুসন্ধানের প্রতিবাদে গত মঙ্গলবার ওই বিক্ষোভ শুরু হয়৷ সহিংস বিক্ষোভকারীরা বুধবার রাতে ভিয়েতনামের সবচেয়ে বড় ইস্পাত প্লান্টে হামলা চালায়৷ এর কয়েক ঘণ্টা আগে দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় হো চি মিন শহরের একটি শিল্প এলাকায় বেশ কয়েকটি বিদেিশ মালিকানাধীন কারখানায় অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চালানো হয়৷ ভিয়েতনামে তাইওয়ানের সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ গ্রুপ ফরমোজা প্লাস্টিকস গ্রুপ৷ হা তিন প্রদেশের শিল্প জোনে তাদের মালিকানাধীন একটি ইস্পাত কারখানায় বুধবার সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে৷ ২০১৭ সালে ওই ইস্পাত প্লান্টটির নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা৷ গতকাল প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়, বুধবার তাদের ইস্পাত কারখানায় ভিয়েতনাম ও চীনা কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে৷ এতে একজন চীনা নাগরিক নিহত ও ৯০ জন আহত হন৷
ভিয়েতনামের দক্ষিণ এলাকার শিল্প জোনগুলোতে মঙ্গলবার যে চীনবিরোধী বিক্ষোভ শুরু হয়, তার শুরুটা ছিল দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের একটি তেল অনুসন্ধানের যন্ত্রপাতি স্থাপন নিয়ে৷ এলাকাটি ভিয়েতনাম নিজেদের বলে দাবি করলেও চীন সম্প্রতি সেখানে ওই যন্ত্রপাতি স্থাপনের উদ্যোগ নিলে উত্তেজনা শুরু হয়৷ প্রতিবাদে ভিয়েতনামে চীনবিরোধী বিক্ষোভ দানা বাঁধতে থাকে৷ স্থানীয় কর্মকর্তারা জানান, শত শত বিক্ষোভকারী মঙ্গলবার হো চি মিন শহরের কাছে বিন দুং ও দোং নাই প্রদেশের শিল্প অঞ্চলে বিদেশি কারখানাগুলোয় আগুন লাগিয়ে দেয়৷ এর মধ্যে তাইওয়ান ও দক্ষিণ কোরিয়ার মালিকানাধীন কারখানাও ছিল৷ পরদিন বুধবার দেশের অন্যান্য এলাকায়ও বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে৷ এদিকে আরও হামলার আশঙ্কায় চীনা নাগরিকেরা ভিয়েতনাম ছাড়তে শুরু করেছেন৷ ইতিমধ্যে শত শত চীনা নাগরিক ভিয়েতনাম থেকে স্থলপথে সীমান্ত পেরিয়ে প্রতিবেশী কম্বোডিয়ায় পালিয়ে গেছেন৷ অনেকে বিমানযোগে ভিয়েতনাম ছাড়ছেন৷ সরাসরি চীনের টিকিট না পেলে অনেকে মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, তাইওয়ানসহ বিভিন্ন দেশের টিকিট কিনে ভিয়েতনাম ছাড়ছেন৷ ভিয়েতনামের একটি লোহা ও ইস্পাত কারখানায় কর্মরত চীনা নাগরিক সু ওয়েন হং বলেন, ‘আমরা ভিয়েতনাম ছাড়াই নিরাপদ মনে করছি৷ সব কারখানা জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে৷ আমরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছি৷’ ১৯৯৭ সালে সীমান্ত নিয়ে ভিয়েতনাম ও চীন সংক্ষিপ্ত একটি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার পর প্রতিবেশী দেশ দুটির মধ্যে চলতি ঘটনা সবচেয়ে চ্যালেঞ্জ বলে মনে করা হচ্ছে৷ চলমান সহিংসতার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে বেইজিং৷ অপরাধীদের শাস্তি ও ঘটনার শিকার ব্যক্তিদের ক্ষয়ক্ষতি দেওয়ার দাবি জানিয়েছে দেশটি৷ রয়টার্স ও আল-জাজিরা৷

No comments

Powered by Blogger.