ভারতে পদ্মফুল পশ্চিমবঙ্গে ঘাসফুল

বুথফেরত সমীক্ষার সব ফলই পক্ষে! প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী আগে থেকেই সাজাতে শুরু করেছেন তার ‘মন্ত্রিসভা’। এমন পরিস্থিতি ভারতবাসী স্মরণযোগ্যকালে দেখেছে কি না সন্দেহ! আর কলকাতা তথা পশ্চিমবঙ্গ? বুথফেরত সমীক্ষার ফলাফল সত্যি হলে, যে রাজ্যের কার্যত কোনো ভূমিকাই থাকার কথা নয় নির্বাচন পরবর্তী পরিস্থিতিতে। লোকসভার ফলাফলে তার আগ্রহের জায়গা কী? শুক্রবার শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত (সন্ধ্যা ৭-১১ মিনিট) মমতার দল তৃণমূল পেয়েছে ৩৪ আসন। ২০০৯-এর লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল ১৯টি আসন পেয়েছিল! তখন ‘পরিবর্তনে’র পালে সদ্য হাওয়া লাগতে শুরু করেছে। জোটসঙ্গী কংগ্রেস এবং এসইউসি-ও ছিল মমতার পাশে! তিন দলের জোট পেয়েছিল মোট ২৬টি আসন। দু’বছর পর ২০১১-র বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেস-তৃণমূল মিলে ধরাশায়ী করেছিল বামফ্রন্টকে। লোকসভাওয়ারি পরের ভিত্তিতে সেই ‘জোট’ এগিয়ে ছিল ৩২টিরও বেশি আসনে। কংগ্রেস পেয়েছিল ৪২টি আসন। তৃণমূল একা পেয়েছিল ১৮৪টি বিধানসভা (বিভিন্ন উপ-নির্বাচন এবং দলবদলের জেরে পরে তা আরও বেড়েছে)। অর্থাৎ, সেই নিরিখে তাদের প্রাপ্য অন্তত ২৬টি লোকসভা। গতবছর পঞ্চায়েত ভোটের ফলাফল ধরলে আবার একলা লড়েই তৃণমূল প্রায় ৩০টির মতো লোকসভা আসনে এগিয়ে। বস্তুত, পঞ্চায়েত ভোটের ফলাফলের ভিত্তিতেই লোকসভায় একলা লড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন মমতা। বুথফেরত সমীক্ষাও বলছে, তৃনমূল এখনও এগিয়ে রাজ্যে। কিন্তু কতটা?
প্রশ্ন সেটাই। কংগ্রেস ছাড়া একা লড়ে ক’টি আসন পাবেন মমতা? তার এবং কংগ্রেসের ভোট কাটাকাটির সুযোগ কতটা পাবে বিরোধী বামেরা? আরও জরুরি প্রশ্ন- বিজেপি কতটা কাড়তে পারবে তার পালের হাওয়া? ২০১৬’র বিধানসভা ভোটের আগে রাজ্যে বিজেপির ক্রমান্বয়ে উত্থান ঠেকাতে এবং নিজের ‘অস্তিত্ব’ রক্ষার তাগিদে আবার কংগ্রেসের সঙ্গেই জোট বাঁধতে হবে মমতাকে? এদিকে, গোটা ভারতে পদ্মফুলে ছেয়ে গেলেও পশ্চিমবঙ্গে সেই ঘাসফুলই ফুটল। শুক্রবার সকালে গণনা শুরুর একটু পর থেকেই অবশ্য বোঝা গিয়েছিল যে বুথ ফেরত সমীক্ষার আভাস ছাড়িয়ে জয়ের রেখা অনেক দূর এগোতে চলেছে। শেষমেশ রাজ্যের ৪২টি লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে ৩৪টি-তেই ফুটল ঘাসফুল। কাজে এলো না নমো, রাগা বা বামেদের বারবার খুঁচিয়ে তোলা সারদা-ইস্যু থেকে টেট কেলেংকারি। বরাবরের প্রধান শত্র“ সিপিএম প্রায় মুছে যাওয়ার পথে। তবু দুপুর পেরিয়েও কালীঘাট থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। একটু বেলা হতেই তার বাড়ির সামনে ভিড়। জড়ো হন সাংবাদিক থেকে কর্মী-সমর্থক সবাই। মমতা ব্যানার্জির ভাই কার্তিক ব্যানার্জি মাইক্রোফোন হাতে ভিড় নিয়ন্ত্রণ করেন। রয়েছে নিরাপত্তা কর্মী, পুলিশ। বাড়ির বাইরে বাজছে রবীন্দ্রসঙ্গীত। কিন্তু কোনো উচ্ছ্বাস প্রকাশ তো দূরের কথা, অর্ধেক দিন কেটে যাওয়ার পরও কোনো প্রতিক্রিয়াই পাওয়া গেল না তৃণমূল নেত্রীর। বিকাল সাড়ে তিনটে নাগাদ প্রথম ক্যামেরার সামনে এলেন মমতা। যথেষ্ট সংযতভাবেই নির্বাচনী ফলে আনন্দ প্রকাশ করেন তিনি। এই দিনটা সাধারণ মানুষকেই তিনি উৎসর্গ করলেন বলে জানান। সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে সবার উদ্দেশে তার ধন্যবাদ, কৃতজ্ঞতা ও অভিনন্দন প্রকাশ করেন মমতা ব্যানার্জি।
পশ্চিমবঙ্গে তৃতীয় দফার নির্বাচন থেকেই উঠেছিল সন্ত্রাসের অভিযোগ। রিগিং, বুথ জ্যাম, বিরোধীদের ওপর আক্রমণ- বাদ যায়নি কিছুই। পশ্চিমবঙ্গের ভোট-ছবি বিহার, উত্তরপ্রদেশের থেকেও খারাপ বলে জানিয়েছে খোদ নির্বাচন কমিশনও।

No comments

Powered by Blogger.