তার জীবন থেকে শিক্ষা নিতে হবে by ফকির আলম গীর
অবশেষে
সব উৎকণ্ঠা আর অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে ৫ ডিসেম্বর রাতে বেজে ওঠে মহামানবের
মহাবিদায়ের ঘণ্টাধ্বনি। বিমূঢ় হৃদয়ে জলভরা চোখে বিশ্ববাসীর কান পেতে থাকার
অবসান হল। থেমে গেল সব কোলাহল। এই সুন্দর পৃথিবী থেকে মাদিবার চলে যাওয়া এক
নির্মম পরিসমাপ্তি। এ নির্মমতাই স্তব্ধ করে দিয়েছে গোটা আফ্রিকাকে, একই
সঙ্গে তাবৎ পৃথিবীর মানুষকে। উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার আঁধারে নিমজ্জিত আফ্রিকা এখন
শোকের সাগর। গোটা বিশ্ব এবং বিশ্বনেতারা এখন মহামানবের দেশের শোকার্ত
মানুষের সঙ্গে একাত্ম। সিডনি থেকে হাভানার কোটি কোটি মানুষ এখন এই
মহামানবের বিদায়ে শোকার্ত-বেদনার্ত। তার একজন ভক্ত অনুরাগী হিসেবে আমিও
শোকার্ত বেদনায় ভারাক্রান্ত। তবে আমিও এই কালজয়ী মহামানবের মহাবিদায়ের
অপেক্ষায় ছিলাম। তৈরি ছিলাম তার বিষাদময় মৃত্যু যন্ত্রণার চেয়ে চলে যাওয়ার
জন্য। আফ্রিকার মানুষের সঙ্গে আমার প্রার্থনা ছিল, ঈশ্বর তুমি তাকে
শান্তিতে ঘুমাতে দাও। উল্লেখ্য, আমি তার জন্মদিনে একটি গান করেছিলাম- ‘কালো
কালো মানুষের দেশে ওই কালো মাটিতে রক্তের স্রোতের শামিল, নেলসন ম্যান্ডেলা
তুমি অমর কবিতার অন্ত্যমিল, শুভ হোক তোমার জন্মদিন, মৃত্যুর দরজায় করাঘাত
করে আসে যুদ্ধ, বিপ্লব আসবেই আফ্রিকা হাসবেই অগণিত কালো হাত পৃথিবীকে করবেই
শুদ্ধ, মেঘের আকাশ হবে পতাকায় সুশোভিত নীল, নেলসন ম্যান্ডেলা তুমি অমর
কবিতার অন্ত্যমিল।’
তার মৃত্যু সংবাদ শোনার পর থেকেই বেশি করে মনে পড়ছে ১৯৯৭ সালে তার সঙ্গে ঢাকায় সাক্ষাতের স্মৃতি, তাকে গানটি শোনানোর স্মৃতি। তার সান্নিধ্যে ছবি তোলার স্মৃতি। আজ তিনি নেই, তবুও জেগে আছে তার নবজাগ্রত প্রাণ। বিশ্বমানচিত্রের যেখানে, যে প্রান্তে দারিদ্র্য, দুঃশাসন আর অন্যায়-অবিচার, সেখানেই নেলসন ম্যান্ডেলা এক সজাগ উচ্চারণ। যিনি জীবনের একটি বড় অংশ কারারুদ্ধ থাকায় পৃথিবীর খোলা আকাশ-বাতাস থেকে বঞ্চিত থেকেছেন। জীবনের শেষ দিকেও গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় ম্যান্ডেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। পৃথিবীর মানুষের প্রার্থনা ছিল মুক্তজীবনে, খোলা আকাশে-বাতাসে এই মহানায়ক আরও বহুদিন বেঁচে থাকুক। কিন্তু তা আর হল না, অবশেষে তিনি বার্ধক্য ও মরণব্যাধির কাছে হেরে গেলেন। তার মৃত্যুতে পৃথিবী হারালো একজন শ্রেষ্ঠ মানুষকে। আফ্রিকা হারালো তার পিতাকে, আর অধিকার আদায়ের সংগ্রামী মানুষ হারালো তার আপনজনকে।
আমার মনে হয়, পৃথিবীতে নেলসন ম্যান্ডেলার মতো মানুষের জন্ম বিরল ঘটনা। এমন মানুষের জন্ম হয় কালেভদ্রে, হাজার বছরে একবার। আজ সেই মানুষটির বিদায় বেলায় তার স্মৃতি উদ্ভাসিত হোক বিশ্বজুড়ে অগণিত মানুষের শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায়। তার বিদায়ে শ্রদ্ধাবনত বিশ্ব। বাংলাদেশ তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক পালন করছে। বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের মহান নেতা নেলসন ম্যান্ডেলার জীবন ও আদর্শ থেকে প্রকৃত শিক্ষা গ্রহণের জন্য আজ বিশ্ববাসীকে শপথ নিতে হবে। তিনি নিজেই বলেছিলেন, আমি দেবতা হতে চাইনি, একজন সাদাসিধে খননকারী মজুর হতে পারলেই আমার চলত।
নেলসন ম্যান্ডেলা দীর্ঘদিনের নিপীড়ন ও বন্দিদশা থেকে যখন মুক্তি পেলেন, তখন মানুষ ভেবেছিলেন, ম্যান্ডেলা প্রতিশোধপরায়ণ এক নেতা হবেন। কিন্তু তিনি উল্টো সম্প্রীতির পথে হাঁটলেন। এটা যে কত বড় একটা সিদ্ধান্ত ছিল তা ভেবে বিস্মিত হতে হয়। কেবল শোক পালন করলেই তার প্রতি প্রকৃত সম্মান জানানো হবে না। আজ আমাদের মতো একটি অসহিষ্ণু, সহিংস দেশে তার জীবন থেকে বেশি করে শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। ম্যান্ডেলা তার একটি সাক্ষাৎকারে বলেছেন, আসলে আপনি মানুষের সঙ্গে যেমন আচরণ করবেন, তারা তেমন সাড়া দেবে। আপনি যদি সহিংসতাকে ভিত্তি করে তাদের কাছে যান, তাহলে তারা সেভাবেই সাড়া দেবে। কিন্তু আপনি যদি বলেন, আমরা শান্তি চাই, স্থিতি চাই সে ক্ষেত্রে সে রকম সাড়াই আসবে।
যা হোক, নেলসন ম্যান্ডেলার গুণাবলি লিখে শেষ করা যাবে না। তিনি ছিলেন বিশ্বের বাতিঘর। তার বিদায়ে বিশ্বের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে মানবতা, শান্তি, সম্প্রীতি আর মুক্তির উদ্বেলিত মিছিলে তিনি ছিলেন অগ্রসেনানী। ম্যান্ডেলার মহত্ত্ব কোন ক্ষেত্রে বেশি- বর্ণবাদের বিরুদ্ধে আজীবন সংগ্রামের জন্য নাকি তার ক্ষমাশীলতার কারণে তা নিরূপণ করা কঠিন। অন্যায়-অবিচার, নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তুলে ২৭ বছর কারারুদ্ধ থাকার নজির আর কারও নেই। যারা তার ওপর নির্যাতন চালিয়েছিল, যারা তাকে বন্দি করে, মুক্তির পর তাদের ক্ষমা করে দেয়ার মতো ঘটনাও ইতিহাসে বিরল। ম্যান্ডেলার মহানুভবতা ও বিচক্ষণতার কারণেই দক্ষিণ আফ্রিকায় শান্তিপূর্ণভাবে অবসান ঘটে বর্ণবাদী শাসনের। যে শ্বেতাঙ্গরা শতাব্দীর পর শতাব্দী শোষণ, নির্যাতন, নিপীড়ন চালিয়েছে কালোদের ওপর, তাদের সঙ্গে সমঝোতা বা ঐক্য গড়ে তোলা আর কারও পক্ষেই হয়তো সম্ভব ছিল না।
মৃত্যুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত ম্যান্ডেলা ছিলেন দেশকে ঐক্যবদ্ধ রাখার শেষ রক্ষাকবচ, সবচেয়ে বড় শক্তি। আমাদের সারা দুনিয়ার অধিকার অর্জনের লড়াইয়ে সংগ্রামরত মানুষকে তার থেকে শিক্ষা নিতে হবে।
ফকির আলমগীর : গণসঙ্গীত শিল্পী
তার মৃত্যু সংবাদ শোনার পর থেকেই বেশি করে মনে পড়ছে ১৯৯৭ সালে তার সঙ্গে ঢাকায় সাক্ষাতের স্মৃতি, তাকে গানটি শোনানোর স্মৃতি। তার সান্নিধ্যে ছবি তোলার স্মৃতি। আজ তিনি নেই, তবুও জেগে আছে তার নবজাগ্রত প্রাণ। বিশ্বমানচিত্রের যেখানে, যে প্রান্তে দারিদ্র্য, দুঃশাসন আর অন্যায়-অবিচার, সেখানেই নেলসন ম্যান্ডেলা এক সজাগ উচ্চারণ। যিনি জীবনের একটি বড় অংশ কারারুদ্ধ থাকায় পৃথিবীর খোলা আকাশ-বাতাস থেকে বঞ্চিত থেকেছেন। জীবনের শেষ দিকেও গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় ম্যান্ডেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। পৃথিবীর মানুষের প্রার্থনা ছিল মুক্তজীবনে, খোলা আকাশে-বাতাসে এই মহানায়ক আরও বহুদিন বেঁচে থাকুক। কিন্তু তা আর হল না, অবশেষে তিনি বার্ধক্য ও মরণব্যাধির কাছে হেরে গেলেন। তার মৃত্যুতে পৃথিবী হারালো একজন শ্রেষ্ঠ মানুষকে। আফ্রিকা হারালো তার পিতাকে, আর অধিকার আদায়ের সংগ্রামী মানুষ হারালো তার আপনজনকে।
আমার মনে হয়, পৃথিবীতে নেলসন ম্যান্ডেলার মতো মানুষের জন্ম বিরল ঘটনা। এমন মানুষের জন্ম হয় কালেভদ্রে, হাজার বছরে একবার। আজ সেই মানুষটির বিদায় বেলায় তার স্মৃতি উদ্ভাসিত হোক বিশ্বজুড়ে অগণিত মানুষের শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায়। তার বিদায়ে শ্রদ্ধাবনত বিশ্ব। বাংলাদেশ তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক পালন করছে। বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের মহান নেতা নেলসন ম্যান্ডেলার জীবন ও আদর্শ থেকে প্রকৃত শিক্ষা গ্রহণের জন্য আজ বিশ্ববাসীকে শপথ নিতে হবে। তিনি নিজেই বলেছিলেন, আমি দেবতা হতে চাইনি, একজন সাদাসিধে খননকারী মজুর হতে পারলেই আমার চলত।
নেলসন ম্যান্ডেলা দীর্ঘদিনের নিপীড়ন ও বন্দিদশা থেকে যখন মুক্তি পেলেন, তখন মানুষ ভেবেছিলেন, ম্যান্ডেলা প্রতিশোধপরায়ণ এক নেতা হবেন। কিন্তু তিনি উল্টো সম্প্রীতির পথে হাঁটলেন। এটা যে কত বড় একটা সিদ্ধান্ত ছিল তা ভেবে বিস্মিত হতে হয়। কেবল শোক পালন করলেই তার প্রতি প্রকৃত সম্মান জানানো হবে না। আজ আমাদের মতো একটি অসহিষ্ণু, সহিংস দেশে তার জীবন থেকে বেশি করে শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। ম্যান্ডেলা তার একটি সাক্ষাৎকারে বলেছেন, আসলে আপনি মানুষের সঙ্গে যেমন আচরণ করবেন, তারা তেমন সাড়া দেবে। আপনি যদি সহিংসতাকে ভিত্তি করে তাদের কাছে যান, তাহলে তারা সেভাবেই সাড়া দেবে। কিন্তু আপনি যদি বলেন, আমরা শান্তি চাই, স্থিতি চাই সে ক্ষেত্রে সে রকম সাড়াই আসবে।
যা হোক, নেলসন ম্যান্ডেলার গুণাবলি লিখে শেষ করা যাবে না। তিনি ছিলেন বিশ্বের বাতিঘর। তার বিদায়ে বিশ্বের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে মানবতা, শান্তি, সম্প্রীতি আর মুক্তির উদ্বেলিত মিছিলে তিনি ছিলেন অগ্রসেনানী। ম্যান্ডেলার মহত্ত্ব কোন ক্ষেত্রে বেশি- বর্ণবাদের বিরুদ্ধে আজীবন সংগ্রামের জন্য নাকি তার ক্ষমাশীলতার কারণে তা নিরূপণ করা কঠিন। অন্যায়-অবিচার, নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তুলে ২৭ বছর কারারুদ্ধ থাকার নজির আর কারও নেই। যারা তার ওপর নির্যাতন চালিয়েছিল, যারা তাকে বন্দি করে, মুক্তির পর তাদের ক্ষমা করে দেয়ার মতো ঘটনাও ইতিহাসে বিরল। ম্যান্ডেলার মহানুভবতা ও বিচক্ষণতার কারণেই দক্ষিণ আফ্রিকায় শান্তিপূর্ণভাবে অবসান ঘটে বর্ণবাদী শাসনের। যে শ্বেতাঙ্গরা শতাব্দীর পর শতাব্দী শোষণ, নির্যাতন, নিপীড়ন চালিয়েছে কালোদের ওপর, তাদের সঙ্গে সমঝোতা বা ঐক্য গড়ে তোলা আর কারও পক্ষেই হয়তো সম্ভব ছিল না।
মৃত্যুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত ম্যান্ডেলা ছিলেন দেশকে ঐক্যবদ্ধ রাখার শেষ রক্ষাকবচ, সবচেয়ে বড় শক্তি। আমাদের সারা দুনিয়ার অধিকার অর্জনের লড়াইয়ে সংগ্রামরত মানুষকে তার থেকে শিক্ষা নিতে হবে।
ফকির আলমগীর : গণসঙ্গীত শিল্পী
No comments