নির্দেশনা নাকি আইনের বিধান কোনটি বিবেচ্য? by ইকতেদার আহমেদ
চলাফেরার
স্বাধীনতা সংবিধান স্বীকৃত একটি অন্যতম মৌলিক অধিকার। এর দ্বারা
যুক্তিসঙ্গত বাধানিষেধ সাপেক্ষে একজন নাগরিকের দেশের সর্বত্র অবাধ চলাফেরার
স্বাধীনতাসহ রাষ্ট্রের যে কোনো স্থানে বসবাস ও বসতি স্থাপন এবং দেশত্যাগ ও
দেশে পুনঃপ্রবেশের অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। একজন ব্যক্তি যে কোনো
ফৌজদারি অপরাধে অভিযুক্ত হলে অপরাধের প্রকারভেদে তার গ্রেফতারের কারণ ঘটতে
পারে। যখন কোনো ব্যক্তি অপরাধের দায়ে গ্রেফতার হয়, তখন তার সংবিধান স্বীকৃত
অবাধ চলাফেরার স্বাধীনতা খর্ব হয়। যে কোনো ফৌজদারি অপরাধ রাষ্ট্রের
বিরুদ্ধে কৃত অপরাধ হিসেবে বিবেচিত। তাই যে কোনো ধরনের ফৌজদারি অপরাধ
সংঘটিত হলে অপরাধীকে আইনের হাতে সোপর্দ করে তার বিচারের ব্যবস্থা করা
রাষ্ট্রের আবশ্যিক কর্তব্য হয়ে দাঁড়ায়। অপরাধ বলতে সাধারণ অর্থে আমরা বুঝি
এমন কোনো কাজ বা ত্র“টি, যা আপাত বলবৎ কোনো আইনের অধীনে শাস্তিযোগ্য।
অপরাধের বিভিন্ন প্রকারভেদ রয়েছে, তবে জামিনের ক্ষেত্রে অপরাধকে দু’ভাগে
ভাগ করা হয়েছে। এর একটি হল জামিনযোগ্য এবং অপরটি জামিন অযোগ্য অপরাধ।
জামিনযোগ্য অপরাধ হল এমন অপরাধ, যে অপরাধকে ফৌজদারি কার্যবিধির দ্বিতীয়
তফসিলে অথবা আপাত বলবৎ কোনো আইনে জামিনযোগ্য দেখানো হয়েছে এবং এর আওতার
বাইরের অপর সব অপরাধ অজামিনযোগ্য। একটি অপরাধ জামিনযোগ্য বা জামিন অযোগ্য
যাই হোক না কেন, যুক্তিসঙ্গত কারণ সাপেক্ষে একজন পুলিশ কর্মকর্তা,
ম্যাজিস্ট্রেট বা জজ স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা প্রয়োগের মাধ্যমে জামিন মঞ্জুর বা
না-মঞ্জুর করতে পারেন। জামিনযোগ্য ও জামিন অযোগ্য অপরাধে জামিন প্রদানের
ক্ষেত্রে কী কী বিষয় বিবেচ্য, তা সবিস্তারে ফৌজদারি কার্যবিধির ধারা নং
৪৯৬, ৪৯৭ ও ৪৯৮-এ উল্লেখ রয়েছে। এ তিনটি ধারার যৌথ অধ্যয়নে যে ধারণা পাওয়া
যায় তা হল- জামিনযোগ্য অপরাধের ক্ষেত্রে অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তি
জামিন লাভ করতে চাইলে থানার ভারপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা অথবা আদালত আইনজীবী
ও স্থানীয় জামিনদার থেকে জামিননামা ব্যতিরেকে অপরাধীর নিজ প্রদত্ত
জামিননামায় তাকে জামিনে মুক্ত করতে পারেন। তবে থানার ভারপ্রাপ্ত পুলিশ
কর্মকর্তা অপরাধীর নিজ জিম্মায় তাকে জামিন দিলে অপরাধীকে নির্ধারিত দিনে
স্ব-উদ্যোগে আদালতে উপস্থিত হওয়ার নির্দেশনা প্রদানের আবশ্যকতা রয়েছে।
আমাদের দেশে কদাচিৎ পুলিশ এ ক্ষমতাটি প্রয়োগ করে থাকে, যদিও সম্মানিত ও
দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের আইন দ্বারা অনুমোদিত এ সুযোগটি প্রদান করে পুলিশ
তাদের হয়রানি বা বিড়ম্বনা লাঘব করতে পারে। জামিনযোগ্য অপরাধের ক্ষেত্রে
কোনো আদালত জামিন না-মঞ্জুর করতে চাইলে সেক্ষেত্রে আদালতকে অবশ্যই
যুক্তিসঙ্গত কারণ প্রদর্শন করতে হবে- আইনগতভাবে জামিন লাভের অধিকারী হওয়া
সত্ত্বেও কী কারণে তার জামিন না-মঞ্জুর করা হল।
জামিন অযোগ্য অপরাধের ক্ষেত্রে মৃত্যুদণ্ড অথবা যাবজ্জীবন সাজার অপরাধের সঙ্গে অপরাধীর সম্পৃক্ততা বিষয়ে যুক্তিসঙ্গতভাবে বিশ্বাস করার কারণ না থাকলে আদালত তাকে জামিনে মুক্তি দিতে পারেন। তাছাড়া অপরাধীর বয়স ১৬ বছরের কম হলে অথবা অপরাধী একজন মহিলা হলে অথবা অপরাধী অসুস্থ বা অক্ষম হলে অপরাধটি অজামিনযোগ্য হওয়া সত্ত্বেও অপরাধীকে জামিনে মুক্তি দেয়া আইন দ্বারা অনুমোদিত।
জামিন অযোগ্য অপরাধ সংক্রান্ত মামলার তদন্ত বা বিচার চলাকালীন পুলিশ কর্মকর্তা বা আদালতের কাছে যদি যুক্তিসঙ্গতভাবে বিশ্বাস করার কারণের উদ্ভব ঘটে যে, একজন অপরাধী জামিন অযোগ্য অপরাধ করেনি কিন্তু তার অপরাধ বিষয়ে অধিকতর তদন্তের প্রয়োজন রয়েছে, সেক্ষেত্রে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অথবা আদালত স্বীয় স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতায় অপরাধীকে নিজ জিম্মায় যথাযথ কারণ উল্লেখপূর্বক জামিনে মুক্ত করতে পারেন। জামিন অযোগ্য অপরাধের ক্ষেত্রে মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ সমাপনান্তে এবং রায় প্রদানের আগে আদালত যদি যুক্তিসঙ্গতভাবে বিশ্বাস করার সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে অপরাধী কোনো অপরাধেই দোষী নয়, সেক্ষেত্রে আদালত তাকে আটকাবস্থা থেকে নিজ জিম্মায় মুক্তি দিয়ে রায় প্রদানের নির্ধারিত তারিখে আদালতে উপস্থিত থাকার জন্য নির্দেশনা প্রদান করতে পারেন। হাইকোর্ট ডিভিশন ও দায়রা আদালত এবং অন্য যে কোনো আদালত একজন অপরাধীকে জামিনে মুক্ত করার পর জামিনের অপব্যবহারের কারণে পুনঃগ্রেফতারপূর্বক কারাগারে প্রেরণের নির্দেশনা দিতে পারেন।
জামিন আইন দ্বারা একজন অপরাধীকে প্রদত্ত বিশেষ অধিকার। একজন অপরাধী জামিনে মুক্ত হতে চাইলে অপরাধটি জামিনযোগ্য অথবা অজামিনযোগ্য যাই হোক না কেন, পুলিশ কর্মকর্তা বা আদালত তাকে নিজ জিম্মা অথবা আইনজীবীর জিম্মায় অথবা স্থানীয় জামিনদারের জিম্মায় অথবা আইনজীবী ও স্থানীয় জামিনদার উভয়ের জিম্মায় অর্থযুক্ত অথবা অর্থ বিমুক্ত জামিননামায় মুক্তি দিতে পারেন। তবে সচরাচর আমাদের দেশের বিভিন্ন আদালতে জামিনের ক্ষেত্রে যে বিধানটি পরিলক্ষিত হয় তা হল- অপরাধটি জামিনযোগ্য অথবা জামিন অযোগ্য যাই হোক না কেন, আদালত অপরাধীকে একজন আইনজীবী ও একজন স্থানীয় জামিনদার উভয়ের জিম্মায় অর্থযুক্ত জামিননামায় মুক্তি দিয়ে থাকেন।
ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৯৬ ও ৪৯৭ অবলোকনে যদিও ধারণা পাওয়া যায়, কতিপয় ক্ষেত্রে অপরাধ জামিনযোগ্য অথবা জামিন অযোগ্য যাই হোক না কেন, থানার ভারপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা অপরাধীকে নির্ধারিত দিন আদালতে উপস্থিত হওয়ার নির্দেশনা প্রদান করে অপরাধীর নিজ জিম্মায় জামিনে মুক্ত করতে পারেন, কিন্তু সংবিধানের ৩৩(২) এবং ফৌজদারি কার্যবিধির ৬১ ধারার বিধান অনুযায়ী গ্রেফতারের স্থান থেকে ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে আনয়নের সময় ব্যতিরেকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ম্যাজিস্ট্রেটের সম্মুখে হাজির করার বাধ্যবাধকতা থাকায় গ্রেফতারি পরোয়ানা ব্যতিরেকে আটককৃত ব্যক্তির ক্ষেত্রে পুলিশ কর্মকর্তা কর্তৃক তাকে জামিনে মুক্তি দেয়ার সুযোগ আছে বলে প্রতীয়মান হয় না। একজন পুলিশ কর্মকর্তা ফৌজদারি কার্যবিধির দ্বিতীয় তফসিলের বিধান অনুযায়ী যেসব অপরাধের ক্ষেত্রে গ্রেফতারি পরোয়ানা ব্যতিরেকে আটকের জন্য ক্ষমতাপ্রাপ্ত- সেই তফসিলে ওই সব অপরাধের অধিকাংশকে জামিন অযোগ্য বলা হয়েছে। জামিন অযোগ্য অধিকাংশ অপরাধ আমলযোগ্য। আমলযোগ্য অপরাধের ক্ষেত্রে একজন পুলিশ কর্মকর্তা গ্রেফতারি পরোয়ানা ব্যতিরেকে অপরাধীকে আটকের জন্য ক্ষমতাপ্রাপ্ত। সুতরাং আমাদের প্রধান দণ্ড আইন দণ্ডবিধি ছাড়া অপর কোনো দণ্ড আইনে যদি কোনো অপরাধকে আমলযোগ্য বলা হয়, সেক্ষেত্রে ধরে নিতে হবে, পুলিশ কর্মকর্তা গ্রেফতারি পরোয়ানা ব্যতিরেকে অপরাধীকে গ্রেফতারের জন্য ক্ষমতাপ্রাপ্ত।
অধিকাংশ দণ্ড আইনে তা সাধারণ বা বিশেষ যে আইনই হোক না কেন, ওই আইনের অধীন কৃত অপরাধ জামিনযোগ্য অথবা জামিন অযোগ্য কিনা তা প্রতিটি অপরাধের বিপরীতে অথবা সব অপরাধের ক্ষেত্রে এককভাবে উল্লেখ থাকে। কিন্তু প্রশ্ন উঠতে পারে, যদি এমন কোনো আইন পাওয়া যায়, যে আইন ওই আইনের অধীন কৃত অপরাধ জামিনযোগ্য অথবা জামিন অযোগ্য এ বিষয়ে নিশ্চুপ, সেক্ষেত্রে কিভাবে নির্ধারিত হবে অপরাধটি জামিনযোগ্য অথবা জামিন অযোগ্য?
এ প্রশ্নটির উত্তর খুঁজতে হলে ফৌজদারি কার্যবিধির ধারা নং ২৯(২) এবং অন্য আইনের অধীন অপরাধ সংশ্লেষে দ্বিতীয় তফসিলের ৮নং কলাম অধ্যয়ন আবশ্যক। ৮নং কলাম অধ্যয়ন পরবর্তী দেখা যায়, অপরাধ সংশ্লেষে সাজার পরিমাণ কতটুকু তার মাধ্যমে নির্ধারিত হয় অপরাধটি জামিনযোগ্য অথবা জামিন অযোগ্য, আমলযোগ্য অথবা আমল অযোগ্য এবং কোন আদালত দ্বারা বিচার্য।
আমাদের ফৌজদারি কার্যবিধিতে মামলায় বিজড়িতকরণের আশংকায় অগ্রিম জামিনের কোনো বিধান নেই। একদা ১৯৭৮ সালের অধ্যাদেশ নং ৪৯-এর মাধ্যমে ফৌজদারি কার্যবিধিতে ৪৯৭ক ধারা সংযোজন করে আগাম জামিনের বিধান প্রবর্তন করা হয়েছিল। সে বিধানটি ৯নং অধ্যাদেশের মাধ্যমে ১৯৮২ সালে বাতিল করা হয়। আমাদের পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র ভারতের ফৌজদারি কার্যবিধিতে এ বিধানটি বিদ্যমান আছে। ফৌজদারি কার্যবিধি থেকে আগাম জামিন সংক্রান্ত বিধানের অবলুপ্তির পরও দেখা যায়, উচ্চ আদালতের একটি বিভাগের দু-একজন বিচারক থানায় এজাহার দাখিলপূর্বক নিয়মিত মামলা রুজু সত্ত্বেও মামলায় বিজড়িতকরণের আশংকার অনুপস্থিতিতে আগাম জামিন দেয়ার প্রয়াস নিচ্ছেন অথবা নিু আদালতকে জামিনের বিষয় বিবেচনার নির্দেশনা দিচ্ছেন। এজাহার দায়ের পরবর্তী আগাম জামিনের সুযোগ অনুপস্থিত এ মর্মে উচ্চ আদালতের আপিল বিভাগের সিদ্ধান্ত রয়েছে। কিন্তু এ সিদ্ধান্তটি যখন উপেক্ষিত হয়, তা অনেক সময় হতবাক ও বিস্ময়ের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
আমাদের দেশে ২০০১ পরবর্তী দেখা গেছে, আমাদের বড় দুটি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতাদের এজাহারে নাম না থাকা সত্ত্বেও রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থে হয়রানিমূলকভাবে মামলায় বিজড়িত করে নিু আদালত কর্তৃক জামিন না-মঞ্জুর করা হচ্ছে। এসব ক্ষেত্রে যদিও দেখা যায়, উচ্চ আদালত থেকে জামিন লাভে সফলতা পাওয়া যাচ্ছে কিন্তু সময়ের ব্যবধানে দেখা যায়, তাদের অহেতুক এক মাস থেকে এক বছর অবধি কারারুদ্ধ থাকতে হচ্ছে। জামিন বিষয়ে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৭ ধারায় উল্লেখ রয়েছে, ম্যাজিস্ট্রেট ও দায়রা উভয় আদালত কর্তৃক বিচার্য মামলার ক্ষেত্রে তদন্ত কার্য ১২০ দিবসের মধ্যে সমাপ্ত না হলে প্রথমোক্ত আদালতের ক্ষেত্রে সাজার মেয়াদ ১০ বছরের কম হলে এবং শেষোক্ত আদালতের ক্ষেত্রে সাজার মেয়াদ ১০ বছরের অধিক হলে জামিনে মুক্তি দেয়ার অবকাশ সৃষ্টি হয়।
যে কোনো মামলা তদন্তাধীন থাকাবস্থায় অপরাধী গ্রেফতার হলে প্রথমত এখতিয়ারাধীন ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে জামিন আবেদন করতে হয়। সেখানে সফলতা পাওয়া না গেলে দায়রা আদালতের দ্বারস্থ হতে হয় এবং দায়রা আদালত থেকে বিফল হলে হাইকোর্ট বিভাগের নির্ধারিত ক্ষমতাসম্পন্ন বেঞ্চে প্রতিকার প্রার্থনা করতে হয়। রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক মামলার ক্ষেত্রে এর আগে বৃহৎ দুটি দলের একাধিক নেতা এবং দেশের বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবীদের ক্ষেত্রে পরিলক্ষিত হয়েছে তারা নিু আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট ও দায়রা জজ থেকে জামিন লাভে বিফল হয়ে দীর্ঘ হয়রানির পর উচ্চ আদালতের হাইকোর্ট বিভাগ থেকে প্রতিকার পেয়েছেন।
সম্প্রতি রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক মামলায় গ্রেফতার হওয়া বিএনপির তিন শীর্ষ নেতা ও স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, এমকে আনোয়ার ও ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া এবং চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এফবিসিসিআই’র সাবেক সভাপতি আবদুল আউয়াল মিন্টু ও চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শিমুল বিশ্বাসের আটকের বিষয় বিবেচনায় নিলে প্রতীয়মান হয় আমাদের বিভিন্ন আদালতে কর্মরত ক্ষমতাপ্রাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেটরা ও দায়রা আদালতের শীর্ষ বিচারকরা রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক এবং দেশের বিশিষ্টজনদের হয়রানিমূলক মামলার ক্ষেত্রে যদি ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৯৬, ৪৯৭, ৪৯৮ ও ১৬৭ ধারার বিধানাবলী যথাযথভাবে অবলোকনপূর্বক জামিন প্রদান বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতেন, সেক্ষেত্রে ম্যাজিস্ট্রেট আদালত অথবা দায়রা আদালতে এ ধরনের মামলায় জামিন না-মঞ্জুরের সুযোগ ঘটত না। কিন্তু এ ধরনের মামলার ক্ষেত্রে প্রায়ই দেখা যায়, নিু আদালতের বিচারকদের নিয়ন্ত্রণকারী মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা জামিন প্রদান করা হবে কী হবে না এ বিষয়ে নির্দেশনা প্রদান করছেন। আর নির্দেশনা অমান্য করলে অপরিপক্ব হয়রানিমূলক বদলিসহ বিভিন্নভাবে হয়রানির শিকার হওয়ার কারণের উদ্ভব ঘটে। এমনিতেই ব্যাপক জনশ্র“তি রয়েছে, রাজধানী শহর ঢাকায় ম্যাজিস্ট্রেট বা গুরুত্বপূর্ণ আদালতে দায়রা জজ বা দায়রা জজের পদমর্যাদায় নিয়োগ পেতে হলে ক্ষমতাসীন দলের অনুগামী হওয়া এবং ক্ষেত্র বিশেষে মন্ত্রণালয়ের পদস্থ ব্যক্তিকে অনৈতিকভাবে সন্তুষ্টির আবশ্যকতা দেখা দেয়। একজন সৎ, ন্যায়নিষ্ঠ ও বিবেকবান বিচারকের পক্ষে এ দুটির যে কোনো একটির অবলম্বনে রাজধানী ঢাকা শহরে কাক্সিক্ষত পদে নিয়োগ লাভ সম্ভব নয়। তাই রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক মামলা ও দেশের বিশিষ্টজনদের হয়রানিমূলক মামলায় বিজড়িতকরণের ক্ষেত্রে উপর মহলের নির্দেশনা প্রতিপালন করতে পারলে সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেট বা বিচারক এ মর্মে সন্তুষ্টি ভোগ করেন যে, উচ্চ মহলের নির্দেশনা রক্ষায় তার ক্ষেত্রে অপরিপক্ব হয়রানিমূলক বদলির কারণের উদ্ভব হবে না এবং এমনকি বিচারকার্য পরিচালনা যে কোনো ধরনের কালিমা দ্বারা আচ্ছন্ন হলেও তা উপর মহলের আশীর্বাদে উপেক্ষিত হবে। তাই রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক মামলা এবং সমাজের বিশিষ্টজনদের হয়রানিমূলক মামলায় বিজড়িতকরণে নিু আদালত থেকে জামিন লাভের ক্ষেত্রে আইনের বিধিবিধানের চেয়ে উপর মহলের নির্দেশনা যে অধিক বিবেচ্য- এ বিষয়টি আজ দিবালোকের মতো সবার কাছে স্পষ্ট।
ইকতেদার আহমেদ : সাবেক জজ, সংবিধান, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিশ্লেষক
জামিন অযোগ্য অপরাধের ক্ষেত্রে মৃত্যুদণ্ড অথবা যাবজ্জীবন সাজার অপরাধের সঙ্গে অপরাধীর সম্পৃক্ততা বিষয়ে যুক্তিসঙ্গতভাবে বিশ্বাস করার কারণ না থাকলে আদালত তাকে জামিনে মুক্তি দিতে পারেন। তাছাড়া অপরাধীর বয়স ১৬ বছরের কম হলে অথবা অপরাধী একজন মহিলা হলে অথবা অপরাধী অসুস্থ বা অক্ষম হলে অপরাধটি অজামিনযোগ্য হওয়া সত্ত্বেও অপরাধীকে জামিনে মুক্তি দেয়া আইন দ্বারা অনুমোদিত।
জামিন অযোগ্য অপরাধ সংক্রান্ত মামলার তদন্ত বা বিচার চলাকালীন পুলিশ কর্মকর্তা বা আদালতের কাছে যদি যুক্তিসঙ্গতভাবে বিশ্বাস করার কারণের উদ্ভব ঘটে যে, একজন অপরাধী জামিন অযোগ্য অপরাধ করেনি কিন্তু তার অপরাধ বিষয়ে অধিকতর তদন্তের প্রয়োজন রয়েছে, সেক্ষেত্রে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অথবা আদালত স্বীয় স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতায় অপরাধীকে নিজ জিম্মায় যথাযথ কারণ উল্লেখপূর্বক জামিনে মুক্ত করতে পারেন। জামিন অযোগ্য অপরাধের ক্ষেত্রে মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ সমাপনান্তে এবং রায় প্রদানের আগে আদালত যদি যুক্তিসঙ্গতভাবে বিশ্বাস করার সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে অপরাধী কোনো অপরাধেই দোষী নয়, সেক্ষেত্রে আদালত তাকে আটকাবস্থা থেকে নিজ জিম্মায় মুক্তি দিয়ে রায় প্রদানের নির্ধারিত তারিখে আদালতে উপস্থিত থাকার জন্য নির্দেশনা প্রদান করতে পারেন। হাইকোর্ট ডিভিশন ও দায়রা আদালত এবং অন্য যে কোনো আদালত একজন অপরাধীকে জামিনে মুক্ত করার পর জামিনের অপব্যবহারের কারণে পুনঃগ্রেফতারপূর্বক কারাগারে প্রেরণের নির্দেশনা দিতে পারেন।
জামিন আইন দ্বারা একজন অপরাধীকে প্রদত্ত বিশেষ অধিকার। একজন অপরাধী জামিনে মুক্ত হতে চাইলে অপরাধটি জামিনযোগ্য অথবা অজামিনযোগ্য যাই হোক না কেন, পুলিশ কর্মকর্তা বা আদালত তাকে নিজ জিম্মা অথবা আইনজীবীর জিম্মায় অথবা স্থানীয় জামিনদারের জিম্মায় অথবা আইনজীবী ও স্থানীয় জামিনদার উভয়ের জিম্মায় অর্থযুক্ত অথবা অর্থ বিমুক্ত জামিননামায় মুক্তি দিতে পারেন। তবে সচরাচর আমাদের দেশের বিভিন্ন আদালতে জামিনের ক্ষেত্রে যে বিধানটি পরিলক্ষিত হয় তা হল- অপরাধটি জামিনযোগ্য অথবা জামিন অযোগ্য যাই হোক না কেন, আদালত অপরাধীকে একজন আইনজীবী ও একজন স্থানীয় জামিনদার উভয়ের জিম্মায় অর্থযুক্ত জামিননামায় মুক্তি দিয়ে থাকেন।
ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৯৬ ও ৪৯৭ অবলোকনে যদিও ধারণা পাওয়া যায়, কতিপয় ক্ষেত্রে অপরাধ জামিনযোগ্য অথবা জামিন অযোগ্য যাই হোক না কেন, থানার ভারপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা অপরাধীকে নির্ধারিত দিন আদালতে উপস্থিত হওয়ার নির্দেশনা প্রদান করে অপরাধীর নিজ জিম্মায় জামিনে মুক্ত করতে পারেন, কিন্তু সংবিধানের ৩৩(২) এবং ফৌজদারি কার্যবিধির ৬১ ধারার বিধান অনুযায়ী গ্রেফতারের স্থান থেকে ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে আনয়নের সময় ব্যতিরেকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ম্যাজিস্ট্রেটের সম্মুখে হাজির করার বাধ্যবাধকতা থাকায় গ্রেফতারি পরোয়ানা ব্যতিরেকে আটককৃত ব্যক্তির ক্ষেত্রে পুলিশ কর্মকর্তা কর্তৃক তাকে জামিনে মুক্তি দেয়ার সুযোগ আছে বলে প্রতীয়মান হয় না। একজন পুলিশ কর্মকর্তা ফৌজদারি কার্যবিধির দ্বিতীয় তফসিলের বিধান অনুযায়ী যেসব অপরাধের ক্ষেত্রে গ্রেফতারি পরোয়ানা ব্যতিরেকে আটকের জন্য ক্ষমতাপ্রাপ্ত- সেই তফসিলে ওই সব অপরাধের অধিকাংশকে জামিন অযোগ্য বলা হয়েছে। জামিন অযোগ্য অধিকাংশ অপরাধ আমলযোগ্য। আমলযোগ্য অপরাধের ক্ষেত্রে একজন পুলিশ কর্মকর্তা গ্রেফতারি পরোয়ানা ব্যতিরেকে অপরাধীকে আটকের জন্য ক্ষমতাপ্রাপ্ত। সুতরাং আমাদের প্রধান দণ্ড আইন দণ্ডবিধি ছাড়া অপর কোনো দণ্ড আইনে যদি কোনো অপরাধকে আমলযোগ্য বলা হয়, সেক্ষেত্রে ধরে নিতে হবে, পুলিশ কর্মকর্তা গ্রেফতারি পরোয়ানা ব্যতিরেকে অপরাধীকে গ্রেফতারের জন্য ক্ষমতাপ্রাপ্ত।
অধিকাংশ দণ্ড আইনে তা সাধারণ বা বিশেষ যে আইনই হোক না কেন, ওই আইনের অধীন কৃত অপরাধ জামিনযোগ্য অথবা জামিন অযোগ্য কিনা তা প্রতিটি অপরাধের বিপরীতে অথবা সব অপরাধের ক্ষেত্রে এককভাবে উল্লেখ থাকে। কিন্তু প্রশ্ন উঠতে পারে, যদি এমন কোনো আইন পাওয়া যায়, যে আইন ওই আইনের অধীন কৃত অপরাধ জামিনযোগ্য অথবা জামিন অযোগ্য এ বিষয়ে নিশ্চুপ, সেক্ষেত্রে কিভাবে নির্ধারিত হবে অপরাধটি জামিনযোগ্য অথবা জামিন অযোগ্য?
এ প্রশ্নটির উত্তর খুঁজতে হলে ফৌজদারি কার্যবিধির ধারা নং ২৯(২) এবং অন্য আইনের অধীন অপরাধ সংশ্লেষে দ্বিতীয় তফসিলের ৮নং কলাম অধ্যয়ন আবশ্যক। ৮নং কলাম অধ্যয়ন পরবর্তী দেখা যায়, অপরাধ সংশ্লেষে সাজার পরিমাণ কতটুকু তার মাধ্যমে নির্ধারিত হয় অপরাধটি জামিনযোগ্য অথবা জামিন অযোগ্য, আমলযোগ্য অথবা আমল অযোগ্য এবং কোন আদালত দ্বারা বিচার্য।
আমাদের ফৌজদারি কার্যবিধিতে মামলায় বিজড়িতকরণের আশংকায় অগ্রিম জামিনের কোনো বিধান নেই। একদা ১৯৭৮ সালের অধ্যাদেশ নং ৪৯-এর মাধ্যমে ফৌজদারি কার্যবিধিতে ৪৯৭ক ধারা সংযোজন করে আগাম জামিনের বিধান প্রবর্তন করা হয়েছিল। সে বিধানটি ৯নং অধ্যাদেশের মাধ্যমে ১৯৮২ সালে বাতিল করা হয়। আমাদের পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র ভারতের ফৌজদারি কার্যবিধিতে এ বিধানটি বিদ্যমান আছে। ফৌজদারি কার্যবিধি থেকে আগাম জামিন সংক্রান্ত বিধানের অবলুপ্তির পরও দেখা যায়, উচ্চ আদালতের একটি বিভাগের দু-একজন বিচারক থানায় এজাহার দাখিলপূর্বক নিয়মিত মামলা রুজু সত্ত্বেও মামলায় বিজড়িতকরণের আশংকার অনুপস্থিতিতে আগাম জামিন দেয়ার প্রয়াস নিচ্ছেন অথবা নিু আদালতকে জামিনের বিষয় বিবেচনার নির্দেশনা দিচ্ছেন। এজাহার দায়ের পরবর্তী আগাম জামিনের সুযোগ অনুপস্থিত এ মর্মে উচ্চ আদালতের আপিল বিভাগের সিদ্ধান্ত রয়েছে। কিন্তু এ সিদ্ধান্তটি যখন উপেক্ষিত হয়, তা অনেক সময় হতবাক ও বিস্ময়ের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
আমাদের দেশে ২০০১ পরবর্তী দেখা গেছে, আমাদের বড় দুটি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতাদের এজাহারে নাম না থাকা সত্ত্বেও রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থে হয়রানিমূলকভাবে মামলায় বিজড়িত করে নিু আদালত কর্তৃক জামিন না-মঞ্জুর করা হচ্ছে। এসব ক্ষেত্রে যদিও দেখা যায়, উচ্চ আদালত থেকে জামিন লাভে সফলতা পাওয়া যাচ্ছে কিন্তু সময়ের ব্যবধানে দেখা যায়, তাদের অহেতুক এক মাস থেকে এক বছর অবধি কারারুদ্ধ থাকতে হচ্ছে। জামিন বিষয়ে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৭ ধারায় উল্লেখ রয়েছে, ম্যাজিস্ট্রেট ও দায়রা উভয় আদালত কর্তৃক বিচার্য মামলার ক্ষেত্রে তদন্ত কার্য ১২০ দিবসের মধ্যে সমাপ্ত না হলে প্রথমোক্ত আদালতের ক্ষেত্রে সাজার মেয়াদ ১০ বছরের কম হলে এবং শেষোক্ত আদালতের ক্ষেত্রে সাজার মেয়াদ ১০ বছরের অধিক হলে জামিনে মুক্তি দেয়ার অবকাশ সৃষ্টি হয়।
যে কোনো মামলা তদন্তাধীন থাকাবস্থায় অপরাধী গ্রেফতার হলে প্রথমত এখতিয়ারাধীন ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে জামিন আবেদন করতে হয়। সেখানে সফলতা পাওয়া না গেলে দায়রা আদালতের দ্বারস্থ হতে হয় এবং দায়রা আদালত থেকে বিফল হলে হাইকোর্ট বিভাগের নির্ধারিত ক্ষমতাসম্পন্ন বেঞ্চে প্রতিকার প্রার্থনা করতে হয়। রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক মামলার ক্ষেত্রে এর আগে বৃহৎ দুটি দলের একাধিক নেতা এবং দেশের বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবীদের ক্ষেত্রে পরিলক্ষিত হয়েছে তারা নিু আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট ও দায়রা জজ থেকে জামিন লাভে বিফল হয়ে দীর্ঘ হয়রানির পর উচ্চ আদালতের হাইকোর্ট বিভাগ থেকে প্রতিকার পেয়েছেন।
সম্প্রতি রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক মামলায় গ্রেফতার হওয়া বিএনপির তিন শীর্ষ নেতা ও স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, এমকে আনোয়ার ও ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া এবং চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এফবিসিসিআই’র সাবেক সভাপতি আবদুল আউয়াল মিন্টু ও চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শিমুল বিশ্বাসের আটকের বিষয় বিবেচনায় নিলে প্রতীয়মান হয় আমাদের বিভিন্ন আদালতে কর্মরত ক্ষমতাপ্রাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেটরা ও দায়রা আদালতের শীর্ষ বিচারকরা রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক এবং দেশের বিশিষ্টজনদের হয়রানিমূলক মামলার ক্ষেত্রে যদি ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৯৬, ৪৯৭, ৪৯৮ ও ১৬৭ ধারার বিধানাবলী যথাযথভাবে অবলোকনপূর্বক জামিন প্রদান বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতেন, সেক্ষেত্রে ম্যাজিস্ট্রেট আদালত অথবা দায়রা আদালতে এ ধরনের মামলায় জামিন না-মঞ্জুরের সুযোগ ঘটত না। কিন্তু এ ধরনের মামলার ক্ষেত্রে প্রায়ই দেখা যায়, নিু আদালতের বিচারকদের নিয়ন্ত্রণকারী মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা জামিন প্রদান করা হবে কী হবে না এ বিষয়ে নির্দেশনা প্রদান করছেন। আর নির্দেশনা অমান্য করলে অপরিপক্ব হয়রানিমূলক বদলিসহ বিভিন্নভাবে হয়রানির শিকার হওয়ার কারণের উদ্ভব ঘটে। এমনিতেই ব্যাপক জনশ্র“তি রয়েছে, রাজধানী শহর ঢাকায় ম্যাজিস্ট্রেট বা গুরুত্বপূর্ণ আদালতে দায়রা জজ বা দায়রা জজের পদমর্যাদায় নিয়োগ পেতে হলে ক্ষমতাসীন দলের অনুগামী হওয়া এবং ক্ষেত্র বিশেষে মন্ত্রণালয়ের পদস্থ ব্যক্তিকে অনৈতিকভাবে সন্তুষ্টির আবশ্যকতা দেখা দেয়। একজন সৎ, ন্যায়নিষ্ঠ ও বিবেকবান বিচারকের পক্ষে এ দুটির যে কোনো একটির অবলম্বনে রাজধানী ঢাকা শহরে কাক্সিক্ষত পদে নিয়োগ লাভ সম্ভব নয়। তাই রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক মামলা ও দেশের বিশিষ্টজনদের হয়রানিমূলক মামলায় বিজড়িতকরণের ক্ষেত্রে উপর মহলের নির্দেশনা প্রতিপালন করতে পারলে সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেট বা বিচারক এ মর্মে সন্তুষ্টি ভোগ করেন যে, উচ্চ মহলের নির্দেশনা রক্ষায় তার ক্ষেত্রে অপরিপক্ব হয়রানিমূলক বদলির কারণের উদ্ভব হবে না এবং এমনকি বিচারকার্য পরিচালনা যে কোনো ধরনের কালিমা দ্বারা আচ্ছন্ন হলেও তা উপর মহলের আশীর্বাদে উপেক্ষিত হবে। তাই রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক মামলা এবং সমাজের বিশিষ্টজনদের হয়রানিমূলক মামলায় বিজড়িতকরণে নিু আদালত থেকে জামিন লাভের ক্ষেত্রে আইনের বিধিবিধানের চেয়ে উপর মহলের নির্দেশনা যে অধিক বিবেচ্য- এ বিষয়টি আজ দিবালোকের মতো সবার কাছে স্পষ্ট।
ইকতেদার আহমেদ : সাবেক জজ, সংবিধান, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিশ্লেষক
No comments