সংস্কারে সম্মত ইংলাক

থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ইংলাক সিনাওয়াত্রা চলমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনে সংস্কার আলোচনা শুরু করতে যাচ্ছেন। নাগরিক সমাজের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রের প্রতিনিধিদের সঙ্গে তার সাক্ষাৎ করার কথা রয়েছে। আলোচনার মধ্য দিয়ে নির্বাচন পরবর্তী থাইল্যান্ডকে সংস্কার করার সম্ভাব্য পন্থা নিরূপণে তিনি এ পদক্ষেপ নিয়েছেন। সামরিক বাহিনীর জেনারেল থানাসাক প্রতিমাপ্রকর্নর সঙ্গে ইংলাক বৈঠক করবেন কিনা তা এখনও স্পষ্ট নয়। জেনারেল থানাসাক ইতিমধ্যে বিরোধী নেতা সুথেপ থাগসুবানের সঙ্গে একই ধরনের একটি আলোচনা সভা আয়োজন করেছেন। শনিবারের ওই বৈঠকে সুথেপ পুনরায় তার অবস্থান স্পষ্ট করেছেন। ইংলাকের নেতৃত্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পদত্যাগ দাবি করেন। তিনি অনির্বাচিত কাউন্সিলের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি পুনর্ব্যক্ত করেছেন। সুথেপ ক্ষমতা দখলের সম্ভাবনা প্রত্যাখ্যান করলেও পরোক্ষভাবে জেনারেল থানাসাককে ইঙ্গিত দিয়েছেন বলে শোনা যাচ্ছে। তিনি জেনারেলকে বলেন, ‘দ্রুত যদি আপনি কোনো সিদ্ধান্ত নেন দেশের মানুষ আপনাকে হিরো হিসেবে দেখবে আর আমরা উদ্ভূত সমস্যা সমাধান করতে পারব।’ বিক্ষোভকারীদের হয়ে সামরিক বাহিনী এমন কোনো পদক্ষেপ নেবে কিনা তেমন কোনো ইঙ্গিত দেয়নি তারা। জেনারেল প্রতিমাপ্রকর্ন বলেন, উভয়পক্ষকে দীর্ঘমেয়াদি এমন একটি সমাধানে আসতে হবে, যা পরিস্থিতিকে একই চক্রে যেন ফিরিয়ে নিয়ে না আসে। এছাড়াও তিনি আইন অনুযায়ী স্বচ্ছ একটি নির্বাচন অনুষ্ঠানের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। সোমবার ইংলাক সংসদের নিুকক্ষ ভেঙে দেন এবং চলমান সংকট নিরসনের লক্ষ্যে নির্ধারিত সময়ের পূর্বে নির্বাচন অনুষ্ঠানের আহ্বান জানান। বিক্ষোভকারীরা এখনও তাদের আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। তাদের দাবি ইংলাক সিনাওয়াত্রার পদত্যাগ। সুথেপ ও তার ‘পিপলস ডেমোক্রেটিক রিফর্ম কমিটি’র প্রত্যাশা, নির্বাচনের আগেই রাজনীতি থেকে দুর্নীতি দূর করতে নতুন আইন প্রণয়ন করা হোক। এদিকে থাইল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রী অভিজিত ভিজাজিভাকে হত্যার দায়ে অভিযুক্ত করেছে দেশটির একটি আদালত। হত্যার দায়ে তার বিরুদ্ধে একটি মামলা করা হয়েছে। তিন বছর আগে রাজধানী ব্যাংককে জনতার ওপর সামরিক অভিযানের দায়ে বৃহস্পতিবার তাকে অভিযুক্ত করে আদালত।
অভিজিতের সমর্থকরা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ইংলাক সিনাওয়াত্রার বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ দেখিয়ে যখন দেশে অচলাবস্থা সৃষ্টি করেছেন তখন আদালতের এ রায় ঘোষিত হল। থাইল্যান্ডের অ্যাটর্নি জেনারেলের দফতরের মুখপাত্র নানথাসাক পুনসুক বলেন, ‘আমরা তাকে (অভিজিতকে) অভিযুক্ত করেছি। আদালত তার বিরুদ্ধে মামলা পরিচালনা করতে সম্মত হয়েছে।’ আদালতের রুদ্ধদ্বার কক্ষে শুনানির পর এ সিদ্ধান্ত ঘোষিত হয়। ২০১০ সালে ব্যাংককের রাস্তায় ইংলাকের ভাই ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওয়াত্রার সমর্থকদের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর ব্যাপক সংঘর্ষে অন্তত ৯০ ব্যক্তি নিহত ও প্রায় দুই হাজার মানুষ আহত হয়েছিল। ‘লাল শার্ট’ আন্দোলনকারী হিসেবে পরিচিত থাকসিনের সমর্থকদের দমন করতে নিরাপত্তা বাহিনী সে সময় তাজা গুলি ব্যবহার করে। বৃহস্পতিবার ডেমোক্রেট পার্টির নেতা অভিজিতকে যখন আদালতে আনা হয় তখন লাল শার্ট আন্দোলনকারীদের একটি দল তাকে উদ্দেশ করে ‘খুনি’ বলে স্লোগান দেয়। এ সময় আদালত চত্বরে গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত থাকলেও ভিজাজিভা তাদের সঙ্গে কথা বলেননি। সরকারি আইনজীবীরা ভিজাজিভা ও তার উপ-প্রধানমন্ত্রী সুথেপ থাগসুবানের বিরুদ্ধে নিরাপত্তা বাহিনীর মাধ্যমে হত্যা ও হত্যা প্রচেষ্টার অভিযোগ এনেছেন। তবে অভিজিত ভিজাজিভা তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, তিনি নির্দোষ এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে তাকে ফাঁসানো হয়েছে। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী ইংলাক সিনাওয়াত্রার সরকার পার্লামেন্টের আস্থাভোটে জয়ী হয়। তারপরও অভিজিতের সমর্থক সরকারবিরোধীরা তাদের আন্দোলন চালিয়ে গেলে ইংলাক পার্লামেন্ট ভেঙে দিতে আগাম নির্বাচনের ঘোষণা দেন। কিন্তু তাতেও সরকারবিরোধীরা ঘরে ফিরে না যাওয়ার পর অভিজিতের বিরুদ্ধে আদালতের শরণাপন্ন হয় সরকার। তথ্যসূত্র : আলজাজিরা।
 

No comments

Powered by Blogger.