কাদের মোল্লার জন্য পাকিস্তানের দরদ

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে পাকিস্তানের আত্মিক সম্পর্ক যে গভীর, তা আরও একবার প্রমাণিত হলো। সম্প্রতি একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার পর পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামী যে প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করেছে, তাতে আমরা বিস্মিত হইনি। তারা বাংলাদেশে তাদের ‘ভ্রাতৃপ্রতিম’ দলটির নেতার শাস্তিতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানাবে, সেটা হয়তো অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসির পর পাকিস্তান জাতীয় পরিষদে উদ্বেগ প্রকাশ করে নেওয়া প্রস্তাব যেমন ন্যায়বিচারের প্রতি অবজ্ঞা, তেমনি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে দেশটির নগ্ন হস্তক্ষেপও বটে। আরও দুঃখজনক যে প্রস্তাবটির পক্ষে বলতে গিয়ে পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কাদের মোল্লার পরিণতিকে ‘বিচারিক হত্যাকাণ্ড’ বলে অভিহিত করেছেন। যে দেশটিতে সামরিক আদালতে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়, সেই দেশের কাছ থেকে আমরা আইনি নসিহত শুনতে চাই না। বাংলাদেশে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বিচার সামরিক বা গোপন আদালতে হচ্ছে না। এটি হচ্ছে ১৯৭৩ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ (আদালত) আইনের অধীনে এবং সেখানে বিবাদীপক্ষ সব ধরনের আইনি সুরক্ষা পেয়েছে। এমনকি সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের পর তারা রিভিউ আবেদনের সুযোগেরও সদ্ব্যবহার করেছে।
সে ক্ষেত্রে এই আদালতের রায়কে চ্যালেঞ্জ করা কিংবা এর নিন্দা করা কেবল কূটনৈতিক শিষ্টাচারবহির্ভূত নয়, আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী। এর মাধ্যমে পাকিস্তান একাত্তরে বাংলাদেশে তাদের সেনাবাহিনী দ্বারা সংঘটিত অপরাধকে আড়াল করার ব্যর্থ চেষ্টা চালিয়েছে। আমরা আশা করেছিলাম, পাকিস্তান তাদের ভুল স্বীকার করবে। কিন্তু দেশটি অতীতের ভুল অস্বীকার করতে গিয়ে একই ভুলের পুনরাবৃত্তি ঘটিয়ে চলেছে। কাদের মোল্লা পাকিস্তানের আদর্শে বিশ্বাসী বলেই তাঁকে জীবন দিতে হয়েছে বলে পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যে দাবি করেছেন, তা যে সর্বৈব মিথ্যে, সে কথা পিপিপি সদস্যদের কণ্ঠেই ধ্বনিত হয়েছে। কোনো আদর্শবাদ প্রচার বা পোষণ করার জন্য কাদের মোল্লার বিচার হয়নি, তাঁর বিচার হয়েছে হত্যা, ধর্ষণ ও লুণ্ঠনের মতো ঘৃণ্য অপরাধের জন্য। আমরা পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের গৃহীত প্রস্তাবের নিন্দা এবং দেশটির প্রতি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার দাবি জানাই। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গতকাল পাকিস্তানের হাইকমিশনারকে তলব করে ব্যাখ্যা চেয়েছে। কিন্তু এটি যথেষ্ট নয় বলে আমরা মনে করি।

No comments

Powered by Blogger.