সাক্ষাৎকার- আমার কাছে ধর্মনিরপেক্ষতা মানে হলো সবার ওপরে ভারত: নরেন্দ্র মোদি

আগামী বছর অনুষ্ঠেয় লোকসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে ভারতের প্রধান বিরোধী দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) দলীয় প্রচারাভিযানের প্রধান করেছে বিতর্কিত নেতা নরেন্দ্র মোদিকে।
অনেকের ধারণা, নির্বাচনে বিজেপি জয়ী হলে গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী মোদিই হবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী; যদিও এ নিয়ে দলের মধ্যেই ব্যাপক মতান্তর আছে। সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে সম্প্রতি বার্তা সংস্থা রয়টার্সের সঙ্গে কথা বলেছেন মোদি। সেই সাক্ষাৎকারের উল্লেখযোগ্য অংশ:

প্রশ্ন: অনেকেই এখনো আপনাকে ২০০২ সালের গুজরাট দাঙ্গার ঘটনা দিয়েই চিহ্নিত করে। এটা কি আপনাকে হতাশ করে?
মোদি: মানুষের সমালোচনা করার অধিকার আছে। আমরা গণতান্ত্রিক দেশে বাস করি। এখানে সবাই নিজের মত প্রকাশ করতে পারে। আমি কোনো ভুল করে থাকলে নিজেকে দোষী মনে হতো। হতাশা তখনই আসে, যখন ভাববেন, আমি ধরা পড়েছি। চুরি করেছিলাম, ধরা পড়ে গেছি। আমার ক্ষেত্রে তেমনটা হয়নি।
প্রশ্ন: যা ঘটেছে, তাতে কি আপনি অনুতপ্ত?
মোদি: ভারতের সুপ্রিম কোর্ট আজ বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে ভালো আদালত। গুজরাট দাঙ্গার ঘটনায় সুপ্রিম কোর্ট মেধাবী কর্মকর্তাদের দিয়ে বিশেষ তদন্ত দল গঠন করেছিলেন। তাঁদের প্রতিবেদনে আমাকে দোষী বলা হয়নি। আরেকটি বিষয় হলো, ওই সময় আমি গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ছিলাম কি না, সেটা বড় কথা নয়। বড় কথা হলো, আমি মানুষ। একজন মানুষ হিসেবে যেকোনো খারাপ ঘটনার জন্য স্বাভাবিকভাবেই আমার খারাপ লাগবে; সেটা যে জায়গাতেই ঘটুক না কেন।
প্রশ্ন: আপনার কি মনে হয়, আপনার সরকার ওই সময় দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণে অন্য কিছু করতে পারত?
মোদি: এখন পর্যন্ত আমি মনে করি, সঠিক কাজটি করার জন্য আমরা সর্বোচ্চ শক্তিই নিয়োজিত করেছিলাম।
প্রশ্ন: কিন্তু আপনি কি মনে করেন, ২০০২ সালে আপনি সঠিক কাজটিই করেছিলেন?
মোদি: অবশ্যই।
প্রশ্ন: আপনি কি বিশ্বাস করেন ভারতের একজন ধর্মনিরপেক্ষ নেতা প্রয়োজন?
মোদি: আমরা সেটাই বিশ্বাস করি...। কিন্তু ধর্মনিরপেক্ষতার সংজ্ঞা কী? আমার কাছে ধর্মনিরপেক্ষতা মানে হলো সবার ওপরে ভারত। আমার দলের দর্শন হলো, ‘সবার প্রতি ন্যায়বিচার, কারও প্রতি অন্যায় নয়’। এটাই আমাদের ধর্মনিরপেক্ষতা।
প্রশ্ন: কীভাবে সংখ্যালঘু, বিশেষ করে মুসলিম ভোটারদের আকৃষ্ট করবেন?
মোদি: আমি হিন্দু-মুসলিম বা হিন্দু-শিখ ভিত্তিতে বিভক্ত করার পক্ষে নই। সব নাগরিক, সব ভোটার আমার দেশের মানুষ। আমার মৌলিক দর্শন হলো আমি এমন ইস্যু তুলতে রাজি নই। এটা গণতন্ত্রের জন্যও ক্ষতিকর। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ধর্ম কোনো উপাদান হতে পারে না।
প্রশ্ন: অনেক মিত্রও আপনাকে বিতর্কিত নেতা বলে মনে করেন। এ ব্যাপারে আপনার মন্তব্য কী?
মোদি: এখন পর্যন্ত আমার দলের কোনো নেতা বা বিজেপির নেতৃত্বাধীন জোটের কোনো নেতা আনুষ্ঠানিকভাবে এ ধরনের কিছু বলেননি। এটা যদি লিখিত হয়, কেউ যদি আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো প্রশ্ন তোলেন, তাহলে আমি এর জবাব দেব।
প্রশ্ন: মানুষ জানতে চায় কে আসল মোদি। হিন্দু জাতীয়তাবাদী নেতা, নাকি বাণিজ্যবান্ধব মুখ্যমন্ত্রী?
উত্তর: আমি জাতীয়তাবাদী। আমি দেশপ্রেমিক। কোনোটাই ভুল নয়। আমি হিন্দুও। এটাও ভুল নয়। তাই আমি হিন্দু জাতীয়তাবাদীও। আপনি আমাকে হিন্দু জাতীয়তাবাদী বলতে পারেন। কারণ, আমি হিন্দু পরিবারে জন্মেছি। এ ছাড়া মানুষ আমাকে প্রগতিশীল, উন্নয়নবান্ধব, কাজপাগল—এগুলোও বলে। তাই হিন্দু জাতীয়তাবাদী নেতা বা বাণিজ্যবান্ধব মুখ্যমন্ত্রী—এই দুয়ের মধ্যে পার্থক্য নেই।
প্রশ্ন: আপনি প্রধানমন্ত্রী হলে কোন নেতার মতো হওয়ার চেষ্টা করবেন?
মোদি: আমার দর্শন এবং আমি যা করি তা হলো, আমি কখনোই কোনো কিছু হওয়ার স্বপ্ন দেখি না। আমি ভালো কিছু করার স্বপ্ন দেখি। তাই আমার আদর্শ ব্যক্তিত্ব যাঁরা, তাঁদের কাছ থেকে অনুপ্রাণিত হতে আমার কোনো কিছু হওয়ার প্রয়োজন নেই। আমি যদি বাজপেয়ীর কাছ থেকে কিছু শিখতে চাই, তা গুজরাটে বাস্তবায়ন করব। এ জন্য আমার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার প্রয়োজন নেই।
l ভাষান্তর: মাহফুজার রহমান

No comments

Powered by Blogger.